আফগানিস্তান: পাশ্চত্যের 'ক্রুসেড' ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠির সংগ্রাম
আফগানদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ‘ক্রুসেড’ চলছে। সেকুলার ভাষায় এই ক্রুসেডের নাম ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। আফগানদের লড়াই দখলদার মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই, দখলদারদের বিরুদ্ধে নিপীড়িত আফগানদের লড়াই। এই লড়াই ন্যায় সঙ্গত ও ন্যায্য। গণতান্ত্রিক ধ্যানধারনার দিক থেকে আফগানদের লড়াই জাতীয় মুক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের লড়াই। এই লড়াই করতে গিয়ে যে মতাদর্শকে সঠিক ও বাস্তবোচিত মনে হয়েছে আফগানরা তাই গ্রহণ করেছে। কিন্তু আফগানদের জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের 'তালেবান' বলা হয়। 'তালেবান' বলা উদ্দেশ্যপূর্ণ।
জর্জ বুশের ক্রুসেড শুরু হবার সময় থেকে ‘ইসলাম’-কে পাশ্চাত্য শক্তি ধর্মীয় নয়, বরং একটি রাজনৈতিক বর্গে পরিণত করেছে। ইসলামের দিক থেকে তাতে অসুবিধা নাই, কারন ইসলামে ধর্ম এবং রাজনীতির মধ্যে কোন বিভাজন নাই। কিন্তু সেকুলার পাশ্চাত্যে ধর্ম এবং রাজনীতি আলাদা। কিন্তু তারা ইসলামের সঙ্গে এই ফারাকের ইতিহাস ও অন্তর্গত চিন্তা বা দর্শন নিয়ে আলাপ বা তর্ক করে না। তারা ‘তালেবান’ বলে বোঝাতে চায় আফগানদের মুক্তি আন্দোলন ইসলামী সন্ত্রাসীদের লড়াই। তাদের অনুমান বা মত হচ্ছে ইসলাম ক্রুসেডের আমলের মতোই বর্বর, সহিংস ও সন্ত্রাসীদের ধর্ম। অতএব ইসলাম সর্বকালে পাশ্চত্য সভ্যতার দুষমন। একে সমর্থন করা যাবে না। আর তাদের দাবি ইসলাম আছে দুই প্রকারঃ একটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদিত ছহি ইসলাম, সেখান আল্লাবিল্লা থাকবে, কিন্তু জিহাদ থাকবে না। আর রয়েছে ‘পলিটিকাল ইসলাম’ বা রাজনৈতিক ইসলাম। 'পলিটিকাল ইসলাম' কী? যে ইসলাম ফোঁসফাস করে না, দুধভাত খায়, আর ঘুমায়। অতএব যারা ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করে না, নামাজ-কালাম দোজখ জান্নাত নিয়ে থাকে তারা ‘গুড মুসলিম’। যারা ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করে ও জিহাদের কথা বলে এরা ‘ব্যাড মুসলিম। যারা ঘুমায় তারা অবশ্য নিজেরাও জানে না তারা নিজেদের অজান্তে জর্জ বুশের ক্রুসেডের দোস্ত হয়ে আছে। বিশ্ব বাস্তবতার খবর থাকে না বলে এরা বিশ্বব্যাপী ক্রুসেড বাহিনীর ঘুমন্ত সদস্য বনে যায়। অনেকে অবশ্য সজ্ঞানে ভাড়া খাটে। আর যারা ইসলামের ঝান্ডা হাতে তাদের দেশ ও জনগোষ্ঠিকে দখলদার মুক্ত করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের তাঁবেদারদের চোখে তারা ইসলামী সন্ত্রাসী বা ‘জিহাদি’। বাংলাদেশে তারা কারো কারো কাছে ‘মানহাজি’ নামেও পরিচিত। ক্রুসেডপন্থিরা চিরকাল ইসলামের মধ্যে ‘সন্ত্রাস’ আবিষ্কার করে এবং কোরানুল করিমকে সন্ত্রাসীদের ধর্মগ্রন্থ বলে প্রচার চালায়। আফগানিস্তানে তারা মজলুম জনগোষ্ঠির তরফ থেকে ঐতিহাসিক জবাব পেয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্তানের মোজাহিদ খেলাফতের স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে নাই। পালটা খ্রিস্টিয় পাশ্চাত্যকে তাদের ক্ষমতার রূপ দেখিয়ে দিয়েছে। ইতিহাস বীরদের বরণ করে, কাপুরুষদের আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে দেয়।
আমি মনে করি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতার কারনে বাংলাদেশে ইসলামের পুনর্জাগরণ ঘটছে এবং জালিম ও ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে ইসলামের অভূতপূর্ব শক্তির রূপও বাংলাদেশে আমরা দেখব, ইনশাল্লাহ। বলা বাহুল্য সেই ইসলামের রূপ আফগানিস্তানের মতো হবে না। কারন আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের ইতিহাস ও বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশে তার রূপ কেমন হবে সেটা নির্ভর করবে কোরানুল করিমের কাছে হেদায়েতের জন্য আমরা কিভাবে ফিরে যাচ্ছি ওপর। বর্তমান বিশ্ববাস্তবতার আলোকে নতুন জিজ্ঞাসা ও তর্কবিতর্ক মোকাবিলার জন্য কোরানুল করিম সরাসরি সতর্কতা। ঘনিষ্ঠতা ও নিষ্ঠা্র সঙ্গে পাঠের অভ্যাস করতে হবে। সতর্ক, নিষ্ঠ ও ঘনিষ্ঠ পাঠের হিম্মত গড়ে তোলার ওপর বাংলাদেশে ইসলামের রূপ কি দাঁড়াবে তা স্থির হবে।
তবে বাংলাদেশে ক্রুসেডের পক্ষে লোকের অভাব নাই। তারা দাবি করে আমাদের আর কোরান সরাসরি পড়ার দরকার নাই, তাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তাফসির পড়লেই চলবে। তারা আল্লার কালামের চেয়ে তাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকেই আল্লার কালাম বলে দাবি করে আসছে। পাশ্চত্যের সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে মোকাবিলার হিম্মত না থাকলে লজ্জার কিছু নাই। আমরা কেউই মহা পণ্ডিত হয়ে যাই নি যে দাবি করব যে আমাদের ব্যাখ্যাই চূড়ান্ত। আল্লার ওহির কাছে আর সরাসরি ফেরার দরকার নাই। বলা বাহুল্য, এই নব্য খোদার দাবিদারদের বিচার আল্লাই করবেন। আমরা আমাদের কাজ করে যাব।
সেই লক্ষ্যে আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হচ্ছে পাশ্চাত্য শক্তির বিরুদ্ধে আফগানদের লড়াই সঠিক ভাবে বোঝার চেষ্টা করা। তর্ক বিতর্ক হোক। কিন্তু আফগানদের মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামি সন্ত্রাস বানাবার চেষ্টা, আশা করি, কেউ করবেন না। আসলে কি হচ্ছে তার সঠিক চিত্র ও বিশ্লেষণ জনগনের সামনে তুলে ধরা এবং তা ঠিক ভাবে বোঝার চেষ্টাই এখনকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
তাই আগের একটি পোস্টে বলেছিলাম আফগানদের জাতীয় মুক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের লড়াইকে ‘তালিবান’ বলার খাসিলত ত্যাগ করুন। সঠিক ভাবে বলুন, ‘আফগানিস্তান ইসলামী আমিরাত'-এর নেতৃবৃন্দ। এই রাষ্ট্র ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে কাবুলের পতন হলে আফগানিস্তানে প্রতিষ্ঠিত হয়। এদের অন্যায় ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পাশ্চাত্য শক্তি সামরিক অভিযান চালিয়ে ক্ষমতাচ্যূত করে। আজ মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য বাহিনী সহ পুরা পাশ্চাত্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়ে আফগানরা তাদের দেশ দখলদার মুক্ত করতে চলেছে। মার্কিন সেনাবাহিনী কুকুরের মতো লেজ গুটিয়ে আফগানিস্তান থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে। ‘কুকুরের মতো লেজ গুটিয়ে’ বলায় অনেকে আপত্তি করেছেন। এতে নাকি কুকুরকে ছোট করা হয়েছে। আমি মেনে নিয়েছি। কিভাবে বলব তাঁরা আশা করি শিখিয়ে দেবেন। শিখব। কিন্তু দিল্লির কাঁপুনি শুরু হয়ে গিয়েছে। আফগানিস্তান থেকে তারাও দ্রুত বিতাড়িত হবে। বাংলাদেশের কথা উহ্য রাখলাম।
জর্জ বুশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ‘ক্রুসেড’ বলে কার্যত একটি ধর্মযুদ্ধ শুরু করেছেন, ফলে অনিবার্য ভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রুসেডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ভাষাও ধর্মীর রূপ পরিগ্রহণ করবে। এর অন্যথা হতে পারে না। যেটা খেয়াল করতে হবে জর্জ বুশ ধর্ম যুদ্ধ করছেন সেকুলার ভাষায়, আর দুনিয়ার সেকুলারকুলদের বড় অংশই জর্জ বুশের নেতৃত্বাধীন ধর্মযুদ্ধকে সমর্থন করেছে এবং করছে। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুজাহেদিনদের অস্ত্রশস্ত্র, পরামর্শ ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে। সেই সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান মুজাহেদিনদের ১৯৮৩ সালে হোয়াইট হাউসে দাওয়াত দিয়েছিলেন, রিগান তাদের এই বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন: "These gentlemen are the moral equivalent of the founding fathers."। অর্থাৎ মুজাহেদিনরা মার্কন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মহানায়কদের নৈতিক আদর্শের সমতুল্য। এর মানে, একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক জনগোষ্ঠিকে হাজির করা হয়েছিল সেকুলার বর্গে -- গণতন্ত্রের মহানায়কদের সমতুল্য হিশাবে। কিন্তু জর্জ বুশের ক্রুসেডের সময় সেকুলার বর্গ ডিগবাজি খেয়ে ধর্মীয় বর্গ হয়ে গেল।
মার্কিন যুদ্ধনীতিতে তাহলে নিজের সুবিধামতো কারো বিরুদ্ধে অবস্থান বদলালে অসুবিধা নাই। কিন্তু এই ভণ্ড ও প্রতারণাপূর্ণ মার্কিন নীতিকেও অধিকাংশ সেকুলারকুল মানে এবং সমর্থন করে। তাই তারা মনে প্রাণে সজ্ঞানে কিম্বা অজ্ঞানে ক্রুসেডের মতাদর্শিক সৈনিক হয়ে যায়।
অথচ সেকুলার বিপ্লবী রণনীতির দিক থেকেও যদি আমরা বিশ্বাস করি তাহলে আফগানদের লড়াই জাতীয় মুক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ের লড়াই। ঠিক যেমন আমরা একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আফগানরা সেই একই লড়াই করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের সমর্থকরা আফগানদের লড়াইকে ‘ধর্মীয়’ বর্গে রূপ দিচ্ছে তাদের সমরনীতির অংশ হিশাবে। কিন্তু আমাদের বোঝা দরকার নিপীড়িত জনগোষ্ঠি তার সমাজের সবচেয়ে কার্যকর বিশ্বাস ও মতাদর্শ সামনে এনেই লড়ে। সেই মতাদর্শই জয়ী হয় যাকে কেন্দ্র করে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে নিজেদের পক্ষে যুদ্ধে শামিল করা যায়। আফগানিস্তানে তাই হয়েছে। আমরা উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের হাতে তৈরি ‘বাঙালি’ সাংস্কৃতিক বর্গ ব্যবহার করে একাত্তরে যুদ্ধ করেছি। আমরা অবশ্যই ঠিক করেছি। কারণ তখন আমাদের বিপরীতে দুষমনরা তাদের পক্ষে ন্যায্যতার জন্য ‘ইসলাম’-কে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছিল। এখন আমরা আবার ক্রুসেড ও দিল্লীর হিন্দুত্ববাদের ময়দানে পরিণত হয়ে গিয়েছি। অতএব আমাদের বর্তমান লড়াইকে নতুন বাস্তবতার আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।
পাক্কা বিশ বছর কালাশনিকভ রাইফেল হাতে আফগান জনগণ বিপুল সমরাস্ত্রে সজ্জিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছে এবং এখন দুষমন্ পাততাড়ি গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণ মাধ্যমগুলোতে হেন কোন কুকথা নাই যা আফগানদের বিরুদ্ধে বলা হয় নি কিম্বা হচ্ছে না। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো পাগল হয়ে গিয়েছে। সত্য মিথ্যা যা খুশি তাই প্রচার করছে। তাদের উদ্দেশ্য একটাই ‘আফগানিস্তান ইসলামী আমিরাত' ইসলামি সন্ত্রাসের রাষ্ট্রীয় রূপ মাত্র – এটা প্রমাণ করা। অতএব দিল্লি এই পলিটিকাল ইসলামকে পরাজিত করতে বদ্ধপরিকর। তাদের দাবি মার্কন সেনাবাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে দিয়ে ভুল করেছে। উপমহাদেশে ‘ব্যাড মুসলিম’রা শক্তিশালী হবে। কারণ ‘গুড মুসলিম’দের মতো বাংলাদেশে তারা দিল্লীর আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ মানবে না। বিনোদনের জন্য হলেও মাঝে মধ্যে এদের প্রচার দেখুন। ভাল লাগবে।
একটা কথা পরিষ্কার বলে রাখা দরকার বাংলাদেশের জনগণ মনে করে না ভারতীয় জনগণ মানেই হিন্দুত্ববাদী। দিল্লি ও ভারতের জনগনআমাদের কাছে সমার্থক নয়। বরং ভারতের নিপীড়িত ও মজলুম জনগণের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য স্থাপনের মধ্য দিয়েই উভয় দেশের নিপীড়িত ও মজলুম জনগণের মনের কাঁটা উৎপাটিত হবে এবং বাস্তবের কাঁটাতারের বেড়া উড়ে যাবে। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যম প্রায় সর্বদাই বাংলাদেশ ইসলামি সন্ত্রাসীদের অভয় আশ্রয় বলে প্রচার করে থাকে। এই প্রপাগাণ্ডা মার্কিন সমর নীতির অধিক কিছু না।
কিন্তু আফগানিস্তানে সব কিছুই কি আমরা নির্বিচারে মেনে নেব? অবশ্যই না। অনেক খবরই আমাদের ভাবাচ্ছে। মুশকিল হচ্ছে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে অনেক ঘটনা ঘটছে যা পুরাপুরি আমরা জানি না। পাশ্চাত্য গণমাধ্যম ছাড়াও ইউটিউবে আফগান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত প্রপাগান্ডা চলছে। আফগানরাও তার উত্তর দিচ্ছে। কিন্তু আমরা আফগানদের ব্যাখ্যা বা উত্তর গ্রহণ করছি না। আমাদের ভাব হচ্ছে সত্য শুধু দিল্লি আর ওয়াশংটন বলে। যেহেতু আমরা আফগান যুদ্ধকে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী মুসলমানদের যুদ্ধ মনে করি, তাই আফগানদের কথা আমরা বিশ্বাস করি না। পাশ্চাত্য প্রপাগান্ডাকেই শিরোধার্য করি। অনেক খবরে আমরা বিচলিত বোধ করি, কিন্তু খবরের সত্যতা সম্পর্কে নিরপেক্ষ সূত্র থেকে আমরা খবর পাচ্ছি না। তুলনামূলক ভাবে নিরপেক্ষ তথ্য আমাদের দরকার। যুদ্ধ পরিস্থিতির আলোকে সঠিক তথ্য অবশ্যই আমাদের পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনে নিন্দা করতে হবে।
এই অবস্থান নেবার কারনে আমার বন্ধু সায়ান ভট্টাচার্য আমার বিরুদ্ধে ‘হোয়াট এবাউটারি’(whataboutery )-র অভিযোগ এনেছেন। হোয়াটেবাউটারি মানে কেউ আমাকে কোন অভিযোগ করল, কিন্তু আমি তার উত্তর না দিয়ে পাল্টা তাকে অভিযুক্ত করলাম, এবং ভিন্ন প্রসঙ্গে চলে গেলাম। সায়ান ফেইসবুকে আমার শুভার্থী। তাঁর বক্তব্য আমি সিরিয়াসলি গ্রহণ করি। তিনি হয়তো অনুমান করেছেন, আফগানদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠছে তা আমি বাস্তবতার দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছি। তিনি নিশ্চিত থাকতে পারেন সেটা আমি করব না। যা নিন্দনীয় মনে করি, তাকে নিন্দাই করব। কিন্তু সবার আগে দরকার আফগানিস্তানের যুদ্ধকে বিভিন্ন পক্ষ কিভাবে নিজ নিজ মতাদর্শের জায়গা থেকে হাজির করছে তার পর্যালোচনা। এই দিকটা অস্পষ্ট থাকলে আমরা বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিরুদ্ধে যে ক্রুসেড চলছে তার সেকুলার চরিত্রটি ধরতে পারব না। অজান্তে ক্রুসেডের পক্ষে চলে যাব।
যুদ্ধক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া যে কোন ঘটনা নিন্দনীয় হতে পারে। নিন্দনীয় অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। কিন্তু আফগানিস্তান এখনও যুদ্ধক্ষেত্র। নিন্দনীয় ঘটনাকেও নিন্দা করব অবশ্যই, কিন্তু আমাদের নিন্দা বা পর্যালোচনা যেন কেউ ইসলামের বিরুদ্ধে খ্রিস্টিয় ক্রুসেড ন্যায্য প্রমানের জন্য ব্যবহার করতে না পারে। উহুঁ, সেটা করতে দেব না।
এই ভুল করব না।
(নীচের ছবিটি হোইয়াইট হাউসে আফগান মুজাহিদদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান। সময়ঃ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩)
০৩ অগাস্ট ২০২১।। শ্যামলী।