- মনসান্তোর জিএমও কারসাজি
- আমাদের এখনকার সংকট
- আওয়ামি লিগের ইতিহাসও পারিবারিক ইতিহাসে পর্যবসিত হয়েছে...
- বাংলাদেশে 'নিউকনি' সিপাই
- রাষ্ট্রপ্রধান ও উচ্চ আদালত নিয়ে রাজনীতি
- রোকেয়া পাঠের স্থান কাল পাত্র
- গণতান্ত্রিক বিপ্লবের তিন লক্ষ্য
- মোদীর ভারত এবং বিশ্ব শক্তির ভারসাম্য বদল
- দেখলেই গুলি?
- আদালতের কর্তৃত্ব ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
ভাসানী, রবুবিয়াত ও নতুন বিপ্লবী রাজনীতি
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে বাংলাদেশের উদয়, বেড়ে ওঠার ইতিহাস এবং উপমহাদেশের জনগনের লড়াই সংগ্রাম থেকে যেভাবে মুছে ফেলা হয়েছে সে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। বাংলাদেশে নতুন রাজনীতির পুনর্গঠনের প্রশ্ন মওলানা ভাসানীকে নতুন ভাবে জানা, পড়া ও চর্চায় নিয়ে যাবার ওপর নির্ভরশীল। এই পরিপ্রেক্ষিত মনে রেখে মওলানা ভাসানী সম্পর্কে লেখাগুলোর পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গঠনের গলদ, গণতন্ত্র ও এখনকার কর্তব্য
বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি, আইন ও বিচারব্যবস্থার গোড়ার গলদ হচ্ছে শুরু থেকে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা ও গঠন করা যায় নি। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু ও সংঘটিত হয়েছিল একাত্তরের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে -- যার ঘোষিত ও লিখিত মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ কায়েম ও চর্চার উপযোগী গণমানুষের রাষ্ট্র গড়ে তোলা। কিন্তু ডান কি বাম প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা ধারা মুক্তিযুদ্ধ ও গণমানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। গণশক্তির বিকাশ ও বিজয় ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লবই অসমাপ্ত যুদ্ধ সম্পন্ন করতে পারে, এটাই এখনকার রাজনৈতিক কাজ। এদেশের সকল মানুষের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, লোকায়ত জ্ঞান ও ভাবুকতা সবই রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে গড়ে ওঠার আন্তরিক ও ঐতিহাসিক উপাদান। কিন্তু গণ ঐক্য ও গণশক্তি বিকাশ বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা ধর্মের নামে, ধর্ম বিরোধিতার নামে কিম্বা বাস্তবতা বিবর্জিত নানান আসামানি মতাদর্শের দোহাই দিয়ে জনগণকে বিভক্ত ও আশু রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন ও কর্তব্য পূরণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে তারাই -- ডান কিম্বা বাম -- জনগণের শত্রু।
- চতুর্থ সংশোধনীতে হারানো ক্ষমতা সামরিক আইনে ফিরে পাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছে আদালত
- আইনের শাসনের তামাশা ও বাকশাল ‘দর্শনের’ জের
- আদালত অবমাননার বিচার ও দণ্ড প্রসঙ্গ
- ‘কমিউনিস্ট’দের রিমান্ড সমস্যা
- হাসিনার কনস্টিটিউশন সংশোধন: আসলে কি হতে যাচ্ছে?
- সংজ্ঞাহীন অবারিত এখতিয়ার বন্ধ হবে কবে?
- ছয় বছরেও চূড়ান্ত হয় নাই আদালত অবমাননা আইন
বাংলার ভাবসম্পদ
লালন ও ভাবান্দোলন
চিনিয়ে দেওয়া, ধরিয়ে দেওয়া
এ কালে নারীর প্রশ্ন খুবই সংবেদনশীল, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের ঘুঁটি হিসাবে ‘নারী’র ব্যবহার এবং পাশ্চাত্য সভ্যতাকে সার্বজনীন সভ্যতা হিসাবে মেনে নেওয়া এবং নারী প্রশ্ন মীমাংসার একমাত্র মানদণ্ড হিসাবে খাড়া করবার বর্ণবাদী তাগিদে দরকারী বিতর্ক ধোঁয়াশা হয়ে রয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রাক-পুঁজিতান্ত্রিক সমাজে নারীকে ঘরের ঘেরাটোপ থেকে বের করে এনে বাজারে নিয়ে আসার সাধনা। এই সাধনায় পুঁজিতান্ত্রিক বাজার ব্যবস্থার বয়ান যেমন আছে, তেমনি আছে নানান উন্নয়ন তত্ত্ব। বাজারে নারীকে তোলা খুবই জরুরী কারণ পুঁজির দরকার নরম আঙুল ও অসম্ভব সহ্য শক্তি সম্পন্ন সস্তা শ্রম। আরও সুবিধা, তাজ্রিন ফ্যাশানে পুড়িয়ে মারলে, কিম্বা রানা প্লাজায় জ্যান্ত কবর দিলেও কোন তীব্র প্রতিবাদ হয় না। নারী এতোই সস্তা জিনিস।
পুরুষতন্ত্র নানান স্তরে নানান কায়দায় কাজ করে। যারা বায়োলজিকাল পুরুষ বা তাদের ‘শাসন’কেই একমাত্র সমস্যা গণ্য করেন, তাঁরা নারীর প্রশ্নকে মূলত বায়োলজিকাল বা শারিরীক প্রশ্নে পর্যবসিত করেন। নারীর প্রশ্ন নানান রেজিস্টারে মীমাংসা জরুরী। ধর্ম, সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি সকল স্তরেই এমনকি টেস্টোস্টেরন ও প্রজেন্সটেরনের নির্গমনের বিচারও দরকার। অর্থাৎ জটিল প্রশ্ন সরলীকরণ না করাই প্রাথমিক কাজ।
সেই দিক থকে আসমা বারলাসের ‘ইসলামে মোমিনা: কোরান শরিফের পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যা পরিহার’ ( “Believing Women” in Islam: Unreading Patriarchal Interpretation of the Qur’an” ) খুবই দরকারী একটি কাজ। তাঁর সঙ্গে সব ক্ষেত্রে একমত হবার দরকার নাই, কিন্তু ইসলাম মেনে ও কোরানে নিষ্ঠ থেকে কিভাবে সমাজে জারি থাকা কোরানের বিভিন্ন আয়াতের পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যা একজন বিশ্বাসী নারী মোকাবিলা করতে সক্ষম আসমা সেই জায়গাগুলো ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন। তাঁকে বোঝার জন্য তাঁর বই পাঠের বিকল্প নাই। তবু আসমা বারলাসের একটি সাক্ষাৎকার এখানে পেশ করা হচ্ছে। ইসলামের ধর্মীয় ও নৈতিক পরিমণ্ডলে থেকে নারীরা কিভাবে নারী প্রশ্নের মোকাবিলা করেন তার একটি উদাহরণ আমরা এখানে পেতে পারি। ইসলামে নারী প্রশ্ন নিয়ে ফলপ্রসূ তর্কের সহজ সূচনা ঘটাবার জন্য এই সাক্ষাৎকারটি কাজে আসতে পারে।
নয় এগারোর ঘটনার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’ শুরু করে। এ যুদ্ধ কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়, ফলে একটি রাষ্ট্রের পরাজয় স্বীকারের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবার কোন সুযোগ নাই। এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে জুনিয়র ‘ক্রুসেড’ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এবং ধর্ম হিসাবে ইসলাম এবং বিশেষ ভাবে মুসলমানরাই তাঁর শত্রু। সারা দুনিয়ার মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাবার এই বয়ান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরে পিছিয়ে আসে। পেছানোর জন্য তারা মুসলমানদের দুই ভাগে ভাগ করে। একদিকে আছে জঙ্গী মুসলমান – যারা সাম্রাজ্যবাদ বিশেষত মার্কিন আগ্রাসন ও নীতিনৈতিকতা বর্জিত যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়ছে ও লড়বে। আর আছে ভদ্রলোক মুসলমানদের যারা মার্কিনীদের ভাষায় ‘মডারেট’। এরা পাশ্চাত্য সভ্যতাকে মেনে নেয় এবং দাবি করে এই সভ্যতা, তার মানদণ্ড ও বয়ান মেনে নিয়ে মুসলামানদের চলতে হবে।
পেন্টাগন ও টুইন টাওয়ারের ওপর হামলার পরে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গড়ে ওঠে ইসলামের মডারেট প্রকল্প। এরসঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মডারেট নারীবাদী বয়ানও আছে। এই বয়ান আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতির অপরিহার্য অংশ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে সক্রিয় ভাবে উদার বা ভদ্রলোকী ইসলামি বয়ান বা ধারাকেও প্রস্তুত করতে কিংবা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে হয়। আমেরিকার ভেতরে কিংবা বাইরে যেখানেই হোক। মার্কিন নীতির দিক থেকে সার্বিক অর্থে যে ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারবে না। আমেরিকা এবং বিশ্বব্যাপী যে ইসলামি চিন্তা ও তৎপরতা মার্কিন নীতির অনুকূলে গড়ে উঠছে সেটা নানা কারণে বহু প্রশ্নের জন্ম দেয়। এসব বিষয় নিয়েই আসমা বারলাসের সাক্ষাৎকার।
আসমা জন্মসূত্রে পাকিস্তানী। আমেরিকায় সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছিলেন পাকিস্তানের নাওফিল শাহরুখ। ২০০৫ এর ফেব্রুয়ারিতে সাক্ষাতকারটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এবিসিতে প্রকাশিত হয়। একইসময়ে এটি পাকিস্তানের ‘দি নেশন’ পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছিল। -- সম্পাদনা বিভাগ 'চিন্তা'।
... ... ... ... ... ... ... ... ...
আসমা বারলাসের সাক্ষাৎকার
মডারেট ইসলাম কি?
মডারেট, চরমপন্থী কিংবা নারীবাদী- এভাবে ইসলামকে শ্রেণীকরণ করা আমি পছন্দ করি না। কারণ এ শ্রেণীকরণ ধর্মকে স্ববিরোধী এবং সিজোফ্রেনিক ব্যাপার শুধু করে তোলে না, বরং ধর্ম ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমরা নিজেরা কী ভূমিকা পালন করি তাকেও ধোঁয়াটে করে তোলে। আমি মনে করি বরং অর্থপূর্ণ হয় যদি ইসলামের মডারেট, চরমপন্থী কিংবা লিবারেল ব্যখ্যা এবং একইভাবে মডারেট, চরমপন্থী ও লিবারেল মুসলমানদের নিয়ে আমরা কথা একই কারণে আমি ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ নামক কোন লেবেল পছন্দ করি না। সত্য কথা হল, মুসলমানরা ইসলামকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। তবে এটি আসলে ভিন্ন তর্কের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম সম্পর্কিত আলোচনায় যে দ্রুত এবং নোংরা অভ্যাস ও চর্চা বেড়ে উঠছে আমার বরং সেসব নিয়েই কথা বলা উচিত। সেইসব কথাবার্তায় মনে হয় ইসলাম বুঝি একজন ব্যক্তি: ইসলাম এটা করে, ইসলাম ওটা করে, ইসলাম নিজেকে একটি কারাগারের মধ্যে ঢুকিয়ে তালা মেরে থুয়ে দিয়েছে – এইসব নানান বাচাল কথাবার্তা। এগুলো আসলে পুরাপুরি স্থুল এবং অসংলগ্ন বকোয়াজি। অথচ খ্রিস্টান কিংবা ইহুদি ধর্ম সম্পর্কে এভাবে কেউ কথা বলবার চিন্তাই করবে না।
বিশেষভাবে ওয়াশিংটনের এবং সাধারণভাবে পশ্চিমের মতলবটা কী, যখন তারা খায়েশ করে সারা বিশ্বের মুসলমানরা মডারেট ইসলামই আলিঙ্গন করুক।
মতলব হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেকোন ধরনের রাজনৈতিক প্রতিরোধকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা। থামিয়ে দেয়া। বুশ প্রশাসন ব্যাপারটাকে যেভাবে একটা ছকে বাঁধা ইস্যু বানিয়ে নিয়েছে তাতে যে কেউই মনে করতে পারে ‘ইসলাম’ই মডারেট বানিয়ে ফেললে দুনিয়ার সকল সমস্যাই দুরীভূত হয়ে যাবে। অবশ্য বাস্তব সত্য হল, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বৈষম্য ও বেইনসাফির জন্য অংশত দায়ী যার বিরুদ্ধে শুধু মুসলমানরাই নয় সব শ্রেণীর জনগণই দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছে। সব প্রতিরোধকে সন্ত্রাস বলে নাকচ করে দেওয়া অসম্ভব, কিন্তু এভাবেই দমন পীড়নের বিরুদ্ধে জনগণের ন্যায়সঙ্গত প্রতিরোধকে সন্ত্রাসবাদের খাপে ঢুকিয়ে দেওয়া এখন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের দেশগুলোর প্রথা হয়ে উঠেছে।
ইসলাম এবং সেকুলারিজম একসঙ্গে অবস্থান করতে পারে?
আপনি যদি সেকুলারিজম বলতে এমন এক সরকার বোঝেন যা কিনা জোরজবরদস্তি করে কাউকে ধর্মীয় চর্চায় বাধ্য করে না, মানবাধিকার রক্ষা করে, নাগরিকের নাগরিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করে এবং যা সর্বোপরি জনগণের কাছে গণতান্ত্রিক ও জনগণের কাছে জবাবদিহি করে, তাহলে কেন সহাবস্থান নয়? ইসলামে কি এমন কিছু আছে, যাতে দাবি করা হয় যে, সরকারকে অবশ্যই মুসলমানদের ধর্ম চর্চার ব্যবস্থা করে দিতে হবে, কিম্বা সরকার স্বৈরতান্ত্রিক কিংবা অগণতান্ত্রিক হবে?
আমি জানি, অনেক মুসলমানই নাগরিকের ধর্মীয় জীবন যাপন নিশ্চিত করার জন্য কুরআনের সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ ও অন্যায় কাজ নিষেধ করাকে নাগরিকদের ধর্মীয় জীবন রাষ্ট্রের দ্বারা ব্যবস্থাপনার তাগিদ বা অনুমোদন হিসেবে বুঝে থাকেন। অথচ এমনকি নবীজী স. কেও এটা করতে কোরানে নিষেধ করা হয়েছে। কুরআন পরিষ্কার করে বলছে নবীর মিশন ছিল আল্লাহর বাণীর ঘোষণা ও সাক্ষ্য দেয়া। কিন্তু তা মানতে কারও ওপর জোরজবরদস্তি করা নয়। আর ঠিক এই জায়গা থেকেই ধর্মের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি এবং জবরদস্তি এড়ানোর কথা কুরআন জোরের সঙ্গেই বলে।
মানুষের জীবনকে ধর্মীয় ব্যবস্থাপনার অধীন করতে রাজনীতিকে সাজানো, কিম্বা এমনভাবে ছক ঢেলে সাজানো যাতে মনে হয় ইসলাম একইসঙ্গে রাজনীতি ও মানবাধিকার অস্বীকার করে – এইসব প্রবণতার সঙ্গে কুরআনের ভাষ্য থেকে শিক্ষার কোন সম্পর্ক নাই। এ অবস্থা শুধু বিশেষ মুসলমানদের কিছু উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সঙ্গে সম্পর্কিত, যদি আমাকে বলতে দেওয়া হয় তো বলব এটা একটা সামাজিক ব্যাধি।
এখানে কি মডারেট সেকুলারিজম আছে?
সেকুলারিজমেরও মৌলবাদী ধারা আছে, বিশ্বাসের দিক থেকে যারা ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের তুলনায় কম কট্টর নয়। তবে আমি যে বিপদ দেখতে পাই তা হচ্ছে লিবারেল এবং সেকুলার রাষ্ট্র – যাদের ঘোষিত ভিত্তি সহিষ্ণুতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা -- যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র -- তারা কতো সহজেই ভিন্ন দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন পীড়ন, গণতন্ত্র বিরোধিতা ও স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা চর্চায় লিপ্ত হতে পারছে তাদের দেশের নাগরিকদের দিক থেকে বিশেষ কোন প্রতিবাদ ছাড়া। এর আংশিক কারণ আমরা কখনো সেকুলার মূল্যবোধের নামে করা সহিংসতা নিয়ে কথাই বলি না। যেহেতু আমাদের সাধারণ প্রবণতা হল সহিংসতাকে কেবল ধর্মের সাথেই যুক্ত করতে হবে। আর নয় এগারোর পর তো সেটা শুধু ইসলামের সঙ্গে যুক্ত করেই করা হয়।
ওয়াশিংটন কি মডারেট ইসলামকে বৈধতা দিতে বাধ্য করে?
আমি ইতিমধ্যে ‘মডারেট” মার্কা ট্যাগ দিয়ে আলোচনার বিপদ সম্পর্কে বলেছি। তবে যদি আমরা মডারেশান নিয়েই কথা বলতে চাই তো তাহলে বুশ প্রশাসনও কিছুটা মডারেট হলে উপকার পেতে পারে।
আপনি কি মনে করেন মুসলিম বিশ্ব নিজে ছাড়া কোন ধরনের ইসলাম ভাল ইসলাম- তা সংজ্ঞায়িত করার যোগ্যতা পাশ্চাত্য দেশগুলো রাখে?
পশ্চিমের মুসলমানরা আছেন যারা “মুসলমান বিশ্ব”-এর যে কোন মুসলমানের মতো ইসলামকে ব্যখ্যা বিশ্লেষণের যোগ্যতা রাখেন। (কিন্তু আমি এখানে ‘মুসলিম বিশ্ব” শব্দটি উদ্ধৃত চিহ্নের মধ্যে রাখছি এ কারণে যে এতে মনে হয় এই জ্ঞানতাত্ত্বিক একক বুঝি দুনিয়া নামক গ্রহের বাইরের ব্যাপার। তবে, আপনার প্রশ্ন থেকে সন্দেহ করছি আপনি জানতে চাইছেন যদি পশ্চিমের অমুসলিমদেরই ইসলামের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার কথা বলেন তো আমি তো আমি বলব, যারা যে ধর্মের অনুসারী তারাই সে ধর্ম ব্যাখ্যা দেবার সবচেয়ে উপযুক্ত স্থানে থাকে। কিন্তু তার মানে এ নয় যে, দুনিয়াকে যারা ভিন্ন ভাবে বোঝে ও ব্যাখ্যা করে তাদের সঙ্গে আলোচনা কোন ফায়দা হাসিল করে না।
পশ্চিমে মুসলমানরা কি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে থাকতে পারে?
পশ্চিমে সব মুসলমানের পক্ষ নিয়ে কথা বলাটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবু আমি অধিকাংশ ক্ষেত্র সম্পর্কে বলব, হ্যাঁ, পারে। এর মানে তাদের উপর কোন বিধি নিষেধ নাই সেটা নয়। এ মুহূর্তে ফরাসি দেশে মাথায় স্কার্ফ পরার উপর যে নিষেধাজ্ঞা আছে সেকথা আমার মনে পড়ছে। যাইহোক, কোন কোন মুসলিম দেশে নারীদের হিজাব পরতে বাধ্য করার তুলনায় এমন বিশেষ মুশকিল মনে হয় না আমা্র কাছে। কারণ উভয় দেশেই রাষ্ট্র নারীর পোশাকের ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করছে। যেখানে আমি মনে করি, পোশাকের বিষয়টি ব্যক্তি হিসাবে একান্তই মুসলিম নারীর পছন্দ দিয়েই নির্ণয় করা উচিত। কুরআন পর্দা বা হিজাবের কোন বিশেষ ধরণের কথা বলেনি তবুও তথাকথিত যেসব মুসলিম বিশ্বে যেখানে মেয়েকে জোর করে হিজাব পরানো হচ্ছে সেখানে তো মেয়েরা তাদের জীবন ইসলামের ইমান-আকিদা অনুযায়ী গড়বার অনুমোদন পায় না।
আপনি কি মনে করেন, হাদিস, ইজমায়ে সাহাবা এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইমামদের কাজের সবই কুরআনের পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যা ছিল? তাদের কাজের প্রধান অংশের সবই পুনরায় দেখা উচিত কি?
আমার পরিষ্কার করে নেয়া উচিত যে, যখন আমি পুরুষতন্ত্র নিয়া কথা বলি তখন আমি পুরুষতন্ত্রের খুবই সুনির্দিষ্ট দুটি সংজ্ঞা ব্যবহার করি: একটা হল, নারীর উপর বাবা (এবং স্বামী) রূপে কর্তৃত্ব। আরেকটা হল, লিঙ্গগত বিভাজনের রাজনীতি, যার সুবিধা পুরুষ ভোগ করে। কুরআন সম্পর্কে আমার নিজস্ব বুঝাবুঝি হল, কুরআন যে শুধু যে পুরুষতন্ত্রের এই দুই রূপকে সমর্থনই করে না তা নয়, বরং কোরানের শিক্ষা পুরুষদের সুবিধা দেয়ার নানান তত্ত্বেগুলোর সঙ্গে মেলে না। তবে অবশ্যই আমি মনে করি, আমাদের সেই সব ধর্মীয় জ্ঞান নিয়ে পুনরায় চিন্তা করা জরুরি, যেখানে তারা কুরআনের শিক্ষার সাথে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ তৈরি করে। এর মানে, আপনি যেমন ইমামদের কথা বলেছেন, তো তাদের রচিত জ্ঞানের ক্ষেত্রে যদি প্রশ্ন তৈরি হয় তাহলে তাতে অসুবিধা কি? কোন ইমামই কখনো পুরো দাবি করেন নি যে, তাদের কাজ পরিপূর্ণ ছিল অথবা যথার্থ ছিল এবং তাদের সিদ্ধান্ত পুনরায় সংস্কার করা সম্ভব না । মূলত কুরআন হল এমন একটি সর্বজনীন কালাম, যা সব সময়েই প্রয়োগযোগ্য। কিন্তু কুরআন চিরকাল বোঝা যাবে শুধুমাত্র বিজ্ঞ চার ইমামের মাধ্যমেই- এই দাবি করে কেউই কুরআনের সর্বজনীনতা ক্ষুন্ন করতে পারে না। আমি মনে করি এধরনের দাবি ব্লাসফেমি (একধরনের শিরক) অপরাধের শামিল। কারণ এটি মানুষকে আল্লার ওপরে স্থান দেয়। যেটা শিরকের নামান্তর।
কোন কোন ধর্মীয় পণ্ডিতের মতে নারী-পুরুষের মধ্যে ‘সাম্য’-এর (equality) চেয়েও ‘সমদর্শিতা’ (equity) অনেক বেশি উপযুক্ত শব্দ। এটা কি আপনি ঠিক মনে করেন?
ব্যবহারিক চর্চায় ‘সাম্য’ আর ‘সমদর্শিতা’ সংজ্ঞায়িত করার জন্য খুবই কঠিন পরিভাষা। এমনকি পশ্চিমেও নারী পুরুষের সাম্যের তর্ক এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তাহলে মুসলমানরা কেন তার পরিবর্তে ‘সমদর্শিতা’ শব্দ ব্যবহার করতে পছন্দ করে; আমি মনে করি এর কারণ হল, তারা ধারণা করে, নারীপুরুষের সাম্য মাত্রই একটি পশ্চিমা ও নারীবাদী ধারণা। এবং পশ্চিমা বলেই এটি কোন না কোনভাবে নষ্ট বা ক্ষয়িষ্ণু। খুবই আশ্চর্যের বিষয় হল, কিভাবে মুসলমানরা নিজেদেরকে এত অল্পতে বদলে নেয়। অথচ ‘সাম্য’ অনেক বেশি কুরআনেরই ধারণা। কুরআনে শরিরী সাম্য (sexual equality) মর্মগত [১] ; আর এর অর্থ যেভাবে আমরা হাজির থাকি আর নিজেদের অস্তিত্ব নির্ণয় করি তার কাজ – যেহেতু নারী আর পুরুষ উভয়েই সেই একই ‘নফস’ বা একই ইচ্ছা সম্পন্ন সত্তা থেকে তৈরী। কিন্তু মুসলমানরা কুরআনের একটা দুইটা শব্দ আর লাইন পড়েই এধরনের গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক আবিষ্কারকে অবজ্ঞা করে যাচ্ছে যেগুলো তারা পাঠ করে নিছকই পুরুষকে নারীর উপর অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এবং এগুলো তারা পাঠ করে স্ত্রীদের প্রহারে পুরুষদের অধিকার দেয়া সহ আরও নানান কারনে। এখন তো অনেক ধরনের অধ্যয়ন ও গবেষণা হচ্ছে যাতে এ ধরনের পাঠ ভুল প্রমাণিত হচ্ছে এবং কুরআনের মূল শিক্ষার ভুল ব্যাখ্যা বলে স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে। তবে অনেক রক্ষণশীল মুসলমান যারা কুরআনের পুরুষতান্ত্রিক পাঠ ও ব্যাখ্যাগুলো আঁকড়ে ধরে রাখতে চান তারা খুব সহজেই এ ধরনের অধ্যয়ন ও গবেষণাকে নানান উছিলায় বাতিল করে দেন। উদ্দেশ্য হল এই প্রশ্নগুলোর সঙ্গে আন্তরিক বোঝাপড়ায় না আসা।
আপনার ‘বিলিভিং উইমেন’ ইন ইসলাম: আনরিডিং প্যাটরিয়ারকাল ইন্টারপ্রিটেশনস অফ দি কুরআন’ বইটি মুসলিম বিশ্বে কেমন সমাদৃত হয়েছে?
একাট্টা মুসলিম বিশ্ব বলে তো কিছু নাই। এমনকি যদি থাকেও তাকে সাধারণীকরণ করা কঠিন। বইটি ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় তরজমা হয়েছে। এখন অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ার একটি সংস্করণও রয়েছে। তবে সবে প্রকাশিত হয়েছে। ফলে অপেক্ষা করি, দেখা যাক। যুক্তরাষ্ট্রে এটি খুবই ভালভাবে গৃহীত হয়েছে। কারণ দু বছরের মধ্যে এর চারটি সংস্করণ বের হয়েছে।
আপনার নিজভূমি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসত করার পেছনে কি কারণ ছিল?
জেনারেল জিয়াউল হক যখন আমাকে পররাষ্ট্র বিষয়ক পেশা থেকে চাকরিচ্যুত করলেন সেসময় ১৯৮৩ সালে আমি পাকিস্তান ছাড়ি। জিয়াউল হক দুটি অভিযোগে আমাকে চাকরিচ্যুত করেন। আমার ডাইরিতে আমি তাকে ভাঁড় বলেছিলাম। (একটা খারাপ বিয়ের সম্পর্ক ভেঙ্গে দেয়ার শাস্তি স্বরূপ আমার সাবেক স্বামীর পরিবারের তরফ থেকে তার কানে এসব কথা আসে।) এটা ছিল প্রথম অভিযোগ। দ্বিতীয় অভিযোগ হল, ফিলিপাইনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের বাসায় একটি ব্যক্তিগত ডিনারে আমি বলেছিলাম যে, পাকিস্তানের আদালত না স্বাধীন, না সেখানে কোন ইনসাফ আছে। (এটা ছিল ১৯৭৯ সালে মিস্টার ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝুলানোর পরের ঘটনা।) যখন ঘটনাটি ঘটে তখন আমার চাকরির ছয় বছর চলছে। এরপর আমি এক বছর কিম্বা আরেকটু বেশি সময় ইসলামাবাদে মুসলিম এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করি। যাইহোক সেসময় ঘটনাক্রমেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে আমাকে পাকিস্তান ছাড়তে হয়েছিল। এক পর্যায়ে আমি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করি। এর মানে এ নয় যে, আমি যুক্তরাষ্ট্রে বসতি স্থাপন করেছি। তবে হ্যাঁ, মেলে ধরার জন্য জীবনেরও নিজস্ব পন্থা আছে। এভাবেই আমি যুক্তরাষ্ট্রে বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে থাকছি। বহুদিন ধরেই আমি একটা বিষয় ভাবি, আমার আসলে কোন ঘরবাড়ি ছিল না। তবে খুব দেরি করেই নিজের জীবনে শান্তি আর স্থিতি আনার চেষ্টা করছি।
পাকিস্তানের হুদুদ এ্যাক্টের ভুল প্রয়োগ, ভুল ব্যাখ্যা নাকি হুদুদ আইন নিজেই একটা সমস্যা --মূল সমস্যাটা আসলে কোথায়?
আমি কোন আইন বিষয়ক পণ্ডিত নই। কাজেই আমি এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট জবাব দিতে পারছি না। তবে আমি বলতে চাই, মরহুম ফজলুল রহমান বলতেন যে, কুরআন কোন আইনের বই নয়। তবে কুরআন থেকে আইন হাসিল করাটা আমাদের দরকার হয়। কাজেই আইন হাসিল করার প্রক্রিয়াটা অনেক বেশি তফসিরের বা ব্যাখ্যামূলক কাজ, যা একদমই শুদ্ধ-পরিশুদ্ধ ভাবে করা যাবে তা না। ফলে কুরআনের শিক্ষার সাথে কিছু কিছু আইন যে সঙ্গতিপূর্ণ নাও হতে পারে সেই সম্ভাবনা আমাদের মেনে নিতে হবে। একটা সাধারণ প্রস্তাব হিসাবে আমি কথাটা বলছি।
যেমন পাকিস্তানে হুদুদ আইনের বাস্তবায়ন, যেটার ব্যাপারে আমি বলব, এটা ভয়াবহ রকম কুখ্যাত বিধান। কারণ এই আইন মোতাবেক সব ধরনের নৈতিক অপরাধের বোঝা নির্বিচারে কোন প্রকার সামঞ্জস্য ছাড়া নারীদের উপর গিয়ে পড়ছে। পাকিস্তানের কারাগারগুলোতে হাজার হাজার নারী শাস্তি ভোগ করছে। অথচ যেসব পুরুষের সঙ্গে তারা যৌন অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেই পুরুষগুলো যাদুবলে গায়েব হয়ে গিয়েছে। তাহলে এটা কেমন বিচার?
এটা কিরকম বিচার যেখানে ধর্ষণ এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মধ্যে সম্মতি আইনি দিক থেকে পার্থক্য করা যায় না, যাতে ধর্ষণের শিকারকে অপরাধী হিসেবে দেখা হয়। যখন কুরআন কোন অপরাধের কারণে শাস্তি হিসেবে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয় না সেখানে কেমন করে ব্যাভিচারের দায়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেয়াটা ইসলামি হয়? তবে এটা সত্য যে, হযরত মুহাম্মদ স. একবার ব্যাভিচারের কারণে এক ইহুদি যুগলকে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাদেরকে এধরনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন তাদের নিজস্ব ধর্মীয় আইন অনুযায়ী। কুরআনের মতে নয়। তাহলে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া কেমন করে ইসলামি আইনের অংশ হয়?
সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ইরাক (আশির দশকের) এর মত পুরুষানুক্রমিক রাজতন্ত্র কিংবা একনায়কতান্ত্রিক সরকারগুলোর ধারা বা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে যেখানে ইসলাম একটি উপায় হিসেবে ব্যবহার হয় সেই মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দুনিয়া সবসময় সমর্থন দিয়ে এসেছে। আপনি কি মনে করেন পুরুষতান্ত্রিক ইসলামকে এগিয়ে রাখার ক্ষেত্রে পশ্চিমের কোন ভূমিকা আছে?
অবশ্যই এটা পুরাপুরি সত্য। যে কারণে আমি প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের তরফ থেকে ‘মডারেট ইসলাম’ সম্পর্কিত যতসব ধর্মের ভেক ধরা আলোচনা সংলাপ দেখি তাতে পীড়িত বোধ করি, এগুলো মারাত্মক মুনাফেকি আর পীড়াদায়ক।
ইসলামের পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যার অনুসরণ থেকে মুসলমানদের মুক্ত করতে কি করা যেতে পারে?
যেহেতু আমি ইতিমধ্যে প্রস্তাব করেছি যে, কুরআন কোন পুরুষতান্ত্রিক টেক্সট না। কাজেই আমি বিশ্বকে নতুন ভাবে বুঝাবুঝির দিক থেকে কুরআন পাঠ করতে বলব। যে বোঝাবুঝি দুনিয়াবি জীবনযাপনের ফল হিসাবে হাজির হয়। বলব যে শিক্ষিত মুসলমানরা অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি কুরআন পাঠে শিক্ষিত হয়ে উঠুক, যাতে আল্লার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া দৈহিক পক্ষপাতে দুষ্ট আর ঘৃণার বিকারে গ্রস্ত যেসব কর্তৃত্ববাদী ব্যাখ্যা চালু আছে তারা তা চ্যালেঞ্জ করতে পারে; যেন একইসঙ্গে পরিবারে ও আত্মীয় নারীদের জীবন-মৃত্যুর উপর অধিকার প্রয়োগ চর্চায় অনুমোদন ও বৈধতা দেয় যেসব উপজাতীয় ‘সম্মান’সেইসব কঠোর ভাবে মোকাবিলা ও শাস্তি দিতে পারে। এর মধ্য দিয়ে তারা যেন নারী পুরুষের সাম্যের ইসলামি অনুশীলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। তবে একে কার্যকরভাবে ঘটাবার জন্য আমার ভাবনা হল, এর জন্য ব্যাপক ভিত্তিতে সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতির পুনর্গঠন জরুরি। যাতে মুসলিম সমাজগুলো অনেক বেশি বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক হয়ে ওঠে। আমি মনে করি, এই চ্যালেঞ্জটি কি করা জরুরি সেটাকেই শুধু শনাক্ত করছে না, বরং কি করতে হবে, কি করা জরুরি তার উপায় এবং পন্থাও ধরিয়ে দিচ্ছে। যেটা আসলে একদমই ভিন্ন প্রশ্ন।
তরজমা: শাহাদাৎ তৈয়ব
[১] ইংরেজিতে sexual eqiality-র বাংলা অনুবাদ সাধারণত করা হয় লৈঙ্গিক সমতা বা সাম্য। আমরা শারিরীক বা দৈহিক সাম্য করেছি।
বাংলা ভাষায় ‘লিঙ্গ’ কথাটা ল্যাটিন sexus-এর সমার্থক নয়। এর অর্থ বরং ‘চিহ্ন’। তাছাড়া নারী পুরুষের পার্থক্য শুধু লিঙ্গের ফারাকে নয়, শরীরের সামগ্রিক পার্থক্যও বিবেচ্য। এর মানে এই নয় যে শারিরীক পার্থক্য আছে বলেই নারী অবলা আর পুরুষ তার ওপর শারিরীক কারণেই কর্তৃত্ব করে। ‘কর্তৃত্ব’, ‘সাম্য’, ‘সমদর্শিতা’, ‘পুরুষতন্ত্র’, ‘নারীবাদ’ ইত্যাদি সবই সামাজিক পরিমণ্ডলের পরিগঠন। প্রাকৃতিক পার্থক্য ভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অনুমান, ধারণ ও ব্যবহার করে। আসমা যখন বলেন, কুরআনে sexual equality-র ধারণা হচ্ছে ‘মর্মগত’ (ontological) আর এর অর্থ যেভাবে আমরা হাজির থাকি আর নিজেদের অস্তিত্ব নির্ণয় করি তার কাজ – যেহেতু নারী আর পুরুষ উভয়েই সেই একই ‘নফস’ বা একই ইচ্ছা সম্পন্ন সত্তা থেকে তৈরী। আসমা তখন খুবই বড় একটি দার্শনিক বিতর্ক উন্মুক্ত করেন যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সেই তর্কের গভীরে না গেলেও এটা পরিষ্কার পাশ্চাত্য ‘নারী’বা ‘পুরুষ’-কে যেভাবে নির্মাণ করে তার বাইরে অন্যান্য ভাষা ও সংস্কৃতির ইতিহাস ও বয়ানের বিবর্তনের মধ্যে ‘নারী’ বা ‘পুরুষ’-এর ধারনায় ইতিহাস ও বিবর্তনে ভিন্নতা আছে। আসমার সাক্ষাৎকারে এই ইঙ্গিত রয়েছে।
সাক্ষাৎকারে বাক্যটি হচ্ছে:
‘Equality is very much a Quaranic concept and in the Quaran, sequalar equality is ontological in that it is a function of our very being and existence since both women and men were created from the same nafs or self.
লেখাটি নিয়ে এখানে আলোচনা করুন -(0)