- মনসান্তোর জিএমও কারসাজি
- আমাদের এখনকার সংকট
- আওয়ামি লিগের ইতিহাসও পারিবারিক ইতিহাসে পর্যবসিত হয়েছে...
- বাংলাদেশে 'নিউকনি' সিপাই
- রাষ্ট্রপ্রধান ও উচ্চ আদালত নিয়ে রাজনীতি
- রোকেয়া পাঠের স্থান কাল পাত্র
- গণতান্ত্রিক বিপ্লবের তিন লক্ষ্য
- মোদীর ভারত এবং বিশ্ব শক্তির ভারসাম্য বদল
- দেখলেই গুলি?
- আদালতের কর্তৃত্ব ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
ভাসানী, রবুবিয়াত ও নতুন বিপ্লবী রাজনীতি
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে বাংলাদেশের উদয়, বেড়ে ওঠার ইতিহাস এবং উপমহাদেশের জনগনের লড়াই সংগ্রাম থেকে যেভাবে মুছে ফেলা হয়েছে সে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। বাংলাদেশে নতুন রাজনীতির পুনর্গঠনের প্রশ্ন মওলানা ভাসানীকে নতুন ভাবে জানা, পড়া ও চর্চায় নিয়ে যাবার ওপর নির্ভরশীল। এই পরিপ্রেক্ষিত মনে রেখে মওলানা ভাসানী সম্পর্কে লেখাগুলোর পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গঠনের গলদ, গণতন্ত্র ও এখনকার কর্তব্য
বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি, আইন ও বিচারব্যবস্থার গোড়ার গলদ হচ্ছে শুরু থেকে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা ও গঠন করা যায় নি। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু ও সংঘটিত হয়েছিল একাত্তরের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে -- যার ঘোষিত ও লিখিত মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ কায়েম ও চর্চার উপযোগী গণমানুষের রাষ্ট্র গড়ে তোলা। কিন্তু ডান কি বাম প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা ধারা মুক্তিযুদ্ধ ও গণমানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। গণশক্তির বিকাশ ও বিজয় ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লবই অসমাপ্ত যুদ্ধ সম্পন্ন করতে পারে, এটাই এখনকার রাজনৈতিক কাজ। এদেশের সকল মানুষের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, লোকায়ত জ্ঞান ও ভাবুকতা সবই রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে গড়ে ওঠার আন্তরিক ও ঐতিহাসিক উপাদান। কিন্তু গণ ঐক্য ও গণশক্তি বিকাশ বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা ধর্মের নামে, ধর্ম বিরোধিতার নামে কিম্বা বাস্তবতা বিবর্জিত নানান আসামানি মতাদর্শের দোহাই দিয়ে জনগণকে বিভক্ত ও আশু রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন ও কর্তব্য পূরণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে তারাই -- ডান কিম্বা বাম -- জনগণের শত্রু।
- চতুর্থ সংশোধনীতে হারানো ক্ষমতা সামরিক আইনে ফিরে পাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছে আদালত
- আইনের শাসনের তামাশা ও বাকশাল ‘দর্শনের’ জের
- আদালত অবমাননার বিচার ও দণ্ড প্রসঙ্গ
- ‘কমিউনিস্ট’দের রিমান্ড সমস্যা
- হাসিনার কনস্টিটিউশন সংশোধন: আসলে কি হতে যাচ্ছে?
- সংজ্ঞাহীন অবারিত এখতিয়ার বন্ধ হবে কবে?
- ছয় বছরেও চূড়ান্ত হয় নাই আদালত অবমাননা আইন
বাংলার ভাবসম্পদ
লালন ও ভাবান্দোলন
চিনিয়ে দেওয়া, ধরিয়ে দেওয়া
ফকির লালন শাহ কবে কোথায় কার ঘরে কিভাবে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন সেই তথ্য কারোরই জানা নাই। কিন্তু তারপরেও তাঁর তিরোধানের পর থেকে কেউ তাকে হিন্দু আর কেউ তাকে মুসলমান বলে লাঠালাঠি কম করে নি। লালন নিজের পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন করে যাবার পরেও কুটিল সাম্প্রদায়িকতা তাকে ক্রমাগত মলিন করে দিতে চেয়েছে বারবার। কখনও না জেনে, কখনও সজ্ঞানে। এর বিরুদ্ধে তাঁর অনুসারী ও অনুরাগীরা বার বার রুখে দাঁড়িয়েছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মনের মানুষ’ নামক আজগবি উপন্যাস ও সেই বানানো কাহিনী নিয়ে গৌতম ঘোষের ছবি পুরানা সাম্প্রদায়িকতাকেই সম্প্রতি আবার উস্কে দিয়েছে। সুনীল নিজেই লিখছেন, তার ‘মনের মানুষ’ উপন্যাসটিকে “লালন ফকিরের প্রকৃত ঐতিহাসিক তথ্যভিত্তিক জীবনকাহিনি হিসেবে একেবারেই গণ্য করা যাবে না। কারণ তাঁর জীবনের ইতিহাস ও তথ্য খুব সামান্যই পাওয়া যায়”। যদি তাই হয় তাহলে ফকির লালন শাহকে কেন্দ্রীয় চরিত্র বানিয়ে এই উপন্যাস ফাঁদবার কি দরকার ছিল? যিনি নিজের জীবদ্দশায় সজ্ঞানে ও সচেতন ভাবে নিজের পরিচয় অপ্রকট করে গিয়েছেন তাঁর গায়ে আবার সাম্প্রদায়িক পরিচয় সেঁটে দেওয়া কেন? কেন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে তিনি জন্মসূত্রে একজন হিন্দু। এমনকি তার জাতিও কেন নির্ণয় করে বলে দিতে হবে যে তিনি কায়স্থ ঘরের সন্তান? নাম লালন চন্দ্র কর? সুনীল উপন্যাসটিকে তথ্যভিত্তিক জীবনকাহিনি হিসেবে একেবারেই গণ্য করা যাবে না বলে দাবি করলেও ঐতিহাসিক রণজিৎ গুহ ‘মনের মানুষ’ উপন্যাসের পেছনের পাতায় লিখেছেন, “তথ্যগত ভিত্তি সংকীর্ণ হলেও একটা ঐতিহাসিক কাহিনীর ঐতিহাসিকতা কী করে বজায় রাখা যায় সেই দুঃসাহসিক চেষ্টার সাফল্য এ উপন্যাসে সত্যিই বিস্ময়কর”। যিনি এই কথাগুলো লিখছেন তিনি স্বনামে খ্যাত একজন ভারতীয় ঐতিহাসিক। ঔপন্যাসিক তার উপন্যাসকে “প্রকৃত ঐতিহাসিক তথ্যভিত্তিক জীবনকাহিনি হিসেবে একেবারেই গণ্য করা যাবে না” ঘোষণা দিয়ে আগেভাগেই পাঠকের কাছ থেকে দায়মুক্তি চাইছেন, আর কিনা ঐতিহাসিক বলছেন এই উপন্যাস এক ‘দুঃসাহসিক চেষ্টা’। কীসের? ঐতিহাসিক কাহিনীর ঐতিহাসিকতা বজায় রাখার? দারুন ব্যাপার।
“মনের মানুষ” উপন্যাস ও সিনেমার সাম্প্রদায়িক বয়ান এবং শ্রেণী ও জাতের রাজনীতি অন্যত্র আলোচনার বিষয়। এখানে লালনের জন্ম ও জাতের কেচ্ছা দিয়ে তাঁকে হিন্দু কিম্বা মুসলমান বানানোর দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করব। লালন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন শুধু জাতপাত বিরোধী গান লিখে নয়, নিজের পরিচয় গোপন বা লুপ্ত করে দেবার সাধনা দিয়েও। বাংলার ভাবান্দোলনের দিক থেকে এর ভাবগত তাৎপর্য এবং সেই তাৎপর্যের রাজনীতি অনুধাবন বরং এই কালে অনেক বেশী জরুরী।
সত্য হচ্ছে এই যে লালন তাঁর কোন শিষ্যের কাছে তাঁর কোন জন্মপরিচয় দেন নি। কেউই আসলে তার জন্ম পরিচয় জানে না। তাঁর জন্মপরিচয় সম্বন্ধে যে সব দাবি আমরা শুনি তার সবটাই ভূয়া, কাল্পনিক, কিম্বা অনুমান। সাতচল্লিশের আগে ঔপনিবেশিক সময় থেকে তাঁকে ‘হিন্দু’ বলে পরিচয় দেবার চল শুরু হয়। বাংলা ১২৯৭ সালের পহেলা কার্তিকে তাঁর তিরোধানের পনেরো দিন পর মৃত্যুসংবাদ ছাপা হয় সেই সময় কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত ‘হিতকরী’ পত্রিকার একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধে, ১৫ কার্তিক ১ম ভাগ ১৩ সংখ্যায়। কে সেই নিবন্ধ লিখেছেন জানা যায় না। পত্রিকার স্বত্বাধিকারী ছিলেন মীর মশাররফ হোসেন। সেখানে স্পষ্ট ভাবেই লিখা ছিল, “ইঁহার জীবনী লিখিবার কোন উপকরণ পাওয়া কঠিন। নিজে কিছুই বলিতেন না। শিষ্যেরা তাঁহার নিষেধক্রমে বা হয় অজ্ঞতাবশতঃ কিছুই বলিতে পারে না”।
তিনটি দিক পরিষ্কার। এক.‘হিতকরী” বলছে, তার জীবনী লিখবার উপকরণ পাওয়া কঠিন; দুই. লালন ফকির নিজের সম্পর্কে নিজে কিছুই বলেন নি, এবং তিন. তাঁর শিষ্যরা লালন সম্পর্কে কিছুই বলতে পারে না। এই তিনটি প্রধান সত্যের পরে ‘হিতকরী’ বলছে, “তবে সাধারণে প্রকাশ লালন ফকীর জাতিতে কায়স্থ ছিলেন। কুষ্টিয়ার অধীন চাপড়া ভৌমিক বংশীয়রা ইঁহার জাতি”। হরফে গুরুত্বারোপ করছি আগের সত্যগুলি প্রতিষ্ঠার পর ‘হিতকরী” পরের কথা যে প্রামাণ্য তথ্য হিশাবে হাজির করছে না সেই দিকে নজর রাখবার জন্য। তাই তিনি যে জাতিতে কায়স্থ সেটা ‘সাধারণে প্রকাশ’ বলে বলা হচ্ছে। কোন প্রমাণিত সত্য হিশাবে নয়। সাধারণে প্রকাশিত কেচ্ছা যে প্রমাণের অতীত সেটা নিশ্চিত করবার জন্য বলা হয়েছে, “ইঁহার কোন আত্মীয় জীবিত নাই”। অর্থাৎ সাধারণে প্রকাশ্য তাঁর জন্ম পরিচয়ের যে কেচ্ছা জারি আছে তার সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য তাঁর কোন আত্মীয়কে জীবিত খুঁজে পাবার উপায় ছিল না। তাঁর জীবিত কালে তার জাতিগোষ্ঠীর অন্যান্য লোকজন তো কুষ্টিয়াতেই থাকবার কথা। কিন্তু কেউ জানলো না লালনের মা কে, বাপ কে? কোন পরিবারে তার জন্ম? মীর মশাররফ হোসেনের ‘হিতকরী’ লোকমুখের গল্পকেই সততার সঙ্গে লোকমুখের কেচ্ছা বলেই প্রকাশ করেছে।
কিন্তু ‘সাধারণে প্রকাশ” কথাটার মানে কি শুধু লোকমুখের কেচ্ছা? এর আগে কুষ্টিয়ার হরিনাথ মজুমদার বা কাঙাল হরিনাথ সম্পাদিত ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’-তে ১৮৭২ সালের আগস্ট মাসে ‘জাতি’ নামে একটি লেখায় লালনকে জাতিতে কায়স্থ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই লেখাটিও কে লিখেছেন জানা যায় না। লেখা হয়েছে, “লালন শা নামে এক কায়স্থ আর এক ধর্ম্ম আবিষ্কার করিয়াছে। হিন্দু মুসলমান সকলেই এই সম্প্রদায়ভূক্ত”। এতোটুকুই।
ফকির লালন শাহকে কায়স্থ হিন্দু হিশাবে প্রতিষ্ঠার এই প্রয়াসের পর বসন্তকুমার পাল ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় “হিতকরী”-র লেখা অনুসরণ করে প্রবন্ধ লিখে লালনের হিন্দুত্ব প্রতিষ্ঠিত করবার উদ্যোগ নেন। আগে যে তথ্য ‘সাধারণে প্রকাশ’ বলে জারি ছিল এখন তাকে সরেজমিনে প্রমাণ করবার একটা উৎকট প্রয়াস দেখা যায়। বসন্তকুমার পালও স্বীকার করেন যে “পরিতাপের বিষয় তাঁহার পূর্ব্বপুরুষের বিষয় ঠিক ঠিক বলিতে সক্ষম এমন কেহ আর এখন জীবিত নাই”। কিন্তু তবু তিনি লালনের মা বাপ খুঁজে বের করেন! তাঁর দাবি, “যে স্থানে আমার বাড়ী তাহার অপর পাড়া অর্থাৎ ভাণ্ডারিয়া গ্রামে যে স্থানে সম্প্রতি সেখ চৌকিদার বাড়ি করিয়া আছে, ঠিক সেই স্থানেই সাঁইজীর জননী শেষ জীবন অতিবাহিত করিয়া যান”। যারা ঠিক ঠিক বলিতে সক্ষম তারা কেউই আর জীবিত নাই তবুও বসন্তকুমার পাল বলছেন, “তবে সাঁইজী এই গ্রামেরই লোক ইহা প্রাচীন অধিবাসীদিগের প্রায় সকলেরই জানা আছে।”
কিন্তু বসন্ত কুমার পালকে স্বীকার করতে হয়েছে যে, “এখানে (অর্থাৎ ভাঁড়রা বা ভান্ডারিয়া গ্রামে –ফ.ম) সাঁইজীর বিশেষ কোন পরিচয় গ্রহণ করিতে না পারায় সেঁউড়িয়া আখড়ায় যাই। তথায় তাঁহার শিষ্য পাঁচু শাহের কাছ থেকে কি তথ্য পেয়েছেন এবং তার সত্যমিথ্যা কিভাবে তিনি যাচাই করলেন তার কিছুই তিনি উল্লেখ করেন নাই। বরং স্বীকার করেছেন পাঁচু শাহ (বাংলা ১৩২৯) তখন বৃদ্ধ, ৯৯ বছর বয়স। কোন্ তথ্যের কি উৎস কিম্বা তথ্যের কোন প্রকার প্রামাণ্যতা বা প্রদর্শন ছাড়াই দাবি করেছেন, “সাঁইজী কায়স্থ কুলে চাপড়ার বিখ্যাত কর মহাশয়দের বংশে জন্ম গ্রহণ করেন”। এই তথ্য তাঁকে কে দিল কিছুই জানা যায় না। আগে যা ‘সাধারণে প্রকাশ’ হিশাবে জারি ছিল, এখন বসন্ত কুমার পাল নিজেই ফকির লালন শাহকে হিন্দু কায়স্থ হিশাবে এভাবেই প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা চালান। তাঁর কথাই প্রমাণ হয়ে ওঠে। বসন্ত কুমার পাল এটাও জানিয়েছেন “...শ্রীমান আবুল আহসান চৌধুরীকেও চিঠিপত্র ও সাক্ষাতে সবকিছু জানাইয়াছি”। (পাল ২০০৮; পৃ-৭১১-৭১২)
জসিম উদ্দীন প্রবাসীতে প্রকাশিত বসন্ত কুমার পালের নিবন্ধের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। “হিতকরী”তে প্রকাশিত প্রবন্ধের উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি লিখছেন, “সম্প্রতি গত শ্রাবণ মাসের ‘প্রবাসী’তে বাবু বসন্তকুমার পাল মহোদয় তাঁর সম্বন্ধে যে সুন্দর প্রবন্ধ লিখিয়াছেন তাহাতেও এই বৃত্তান্তের অনুসরণ করা হইয়াছে”। অর্থাৎ বসন্তকুমার পাল “হিতকরী”র গল্পই অনুসরণ করেছেন। এরপর জসিমউদ্দীন ঠাট্টা করে লিখেছেন, “এমনকি তিনি লালনের পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিচয় দিতেও কুন্ঠিত হন নাই। আমরা কিন্তু লালনের গ্রামের কাহারও কাছে এরূপ বৃত্তান্ত শুনি নাই”। জসীমউদ্দীন বসন্ত কুমার পাল যেটাকে লালনের বাড়ি বলে দাবি করেছেন তার পূর্ব পাশে এক বৃদ্ধ তাঁতীর কাছে আরেক গল্প শুনেছেন। সেই কেচ্ছা অনুযায়ী লালন ছিলেন ব্রাহ্মণের ছেলে। ছেলেবালায় তাঁকে নিয়ে মা তীর্থে যাবার সময় লালন বসন্তে আক্রান্ত হলে তাকে ফেলে যান। এক মুসলমান মেয়ে তাকে পায়। যত্নে সুস্থ করে তোলে। এরপর যশোরের উলুবেড়িয়া গ্রামের সিরাজ সাঁই তাকে চেয়ে নেয় এবং শিক্ষা দেয়। একসময় ব্রাহ্মণের ছেলে মুসলমান হয়ে যায়। ব্রাহ্মণের ছেলে মুসলমান হবার যে বাসনা সাধারণত মুসল্মান মানসে গোপনে কাজ করে এই কেচ্ছার পেছনে সেটা কাজ করে থাকতে পারে। তবে জসীমুদ্দীন দুটো গল্পই ফকির লালন শাহের শিষ্য ভোলাই শাহকে জানান। ভোলাই সুস্পষ্ট জবাব দিয়েছিলেন, “অনেকে তাঁর সম্বন্ধে অনেক কথাই বলে বটে কিন্তু কেউই প্রকৃত ঘটনা জানে না”। ভোলাই শাহের বক্তব্য জসিমউদ্দীন উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। (জসিম উদ্দীন ২০০৮; পৃ-৭৬৩-৭৬৪)
কিন্তু ভোলাই শাহের এই কথার পরেও জসীম উদ্দীনের মনে হয়েছে লালনের ব্রাহ্মণের ছেলে হবার গল্পটাই সঠিক। পরিণত বয়সে নয়, অল্প বয়সেই তিনি মুসলমান হয়েছিলেন। এক কেচ্ছার বদলে নতুন আরেক কেচ্ছা বানানোর মধ্যেই সাম্প্রদায়িকতার উল্টা পৃষ্ঠার বয়ান শুরু হয়ে যায়। জসিম উদ্দীনের যুক্তিও তথ্যের নির্ভরতা বা প্রামাণ্যতার ওপর দাঁড়াবার প্রয়োজন বোধ করে নি। তাঁর দাবি, “লালনের জীবন-কথা জানা সহজ না হইলেও অসম্ভব নয়। কারণ এখনও বহু বৃদ্ধ জীবিত আছেন যাঁহারা লালনের সম্বন্ধে অনেক খবরই রাখেন”। যে বৃদ্ধ তাঁতীর কাছে জসীম উদ্দীন ব্রাহ্মণ লালনের গল্প শুনেছেন সেই কারিগরই তাহলে তেমনই এক সবজান্তা বৃদ্ধ। ব্রাহ্মণ লালন ছিলেন, কম বয়সে মুসলমান হয়েছেন এই গল্প কেন তার বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে তার যুক্তি অদ্ভূত। জসীম বলছেন, গল্পটি “বিশ্বাস করবার একটি কারণ আছে এই যে, লালনের সমস্ত গান পড়িয়া দেখিলে তাহাতে হিন্দু প্রভাব হইতে মুসলমান ধর্মের প্রভাব বেশি পাওয়া যায়। সম্প্রতি আমরা লালনের স্বহস্তলিখিত একখানা হাকিমী বই এবং মুসলমানি দোয়া কালাম লেখা একখানা খাতা পাইয়াছি। তাহা পড়িয়া মনে হয় লালন ফারসি কিম্বা আরবি জানিতেন। তাঁর কোন কোন গানে কোরানশরিফের অনেক আয়াতের অংশবিশেষ পাওয়া যায়। ইহাতে মনে হয় তিনি কোরান শরিফ পড়িতে পারিতেন। এখন লালন যদি পরিণত বয়সে মুসলমান হইয়া থাকেন, তবে যেসব অশিক্ষিত সমাজের মধ্যে তিনি থাকিতেন, তাহাতে অত বয়সে মুসলমান শাস্ত্র এতটা যে তিনি কিরূপে আয়ত্ত করিয়া লইলেন, সেটা ভাবিবার বিষয়”। তবে তিনি লালনের যে গানগুলি নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন সেখানে হিন্দুয়ানি বা মুসলমানি প্রভাব আলাদা করা রীতিমত ধড় থেকে মাথা আলাদা করার মতো দুঃসাধ্য ব্যাপার।
সম্প্রতি (২০০৮) আবুল আহসান চৌধুরী ‘লালন সমগ্র’ নামে একটি বিশাল বই বের করেছেন। এর আগে বাংলা একাডেমি তার বই ‘লালন শাহ’ বের করেছে ১৯৯০ সালে। ‘লালন সমগ্র’ বইয়ের ভূমিকাংশে তিনি জানিয়েছেন লালন জীবনীর “প্রামাণ্য উপকরণ ও প্রাচীন বিবরণও অতি দুর্লভ”। তা সত্ত্বেও তিনি দাবি করেছেন “হিতকরী (১৫ কার্তিক ১২৯৭/৩১ অক্টোবর ১৮৯০) পত্রিকার নিবন্ধ, সরলা দেবীর প্রবন্ধ (‘ভারতী’, ভাদ্র ১০২, মৌলবী আব্দুল ওয়ালীর প্রবন্ধ (‘Journal of the Anthropological Society of Bombay’, Vol V, No 4; 1490), বসন্তকুমার পালের প্রবন্ধ (‘প্রবাসী’, শ্রাবণ ১৩৩২ ও বৈশাখ ১৩৩৫) ও বই (‘মহাত্মা লালন ফকির’ ১৩৬২) এবং মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের ‘হারামণি’ (২ খণ্ড, ১৯৪২, ৪র্থ খণ্ড, ১৯৫৯, ৭ম খণ্ড, ১৩৭১) গ্রন্থে “লালন সম্পর্কিত কিছু নির্ভরযোগ্য উপকরণ পাওয়া যায়, যার সাহায্যে লালন জীবনীর একটি কাঠামো নির্মাণ সম্ভব”। ‘নির্ভরযোগ্য উপকরণ’ কথাটির ওপর আমাদের গুরুত্বারোপ করতে হচ্ছে। কিসের ভিত্তিতে আবুল আহসান চৌধুরীর কাছে এইগুলি ‘নির্ভরযোগ্য’ মনে হোল? কোন যুক্তি তিনি দেন নি। প্রশ্ন করা যেতে পারে জসীমউদ্দীনের লালনের জন্ম নিয়ে গল্প কেন নির্ভরযোগ্য মনে হোল না? বিপরীতে বসন্তকুমার পালের কেচ্ছা কেন নির্ভরযোগ্য মনে হোল? নির্ভরযোগ্য উপকরণের এই তালিকা বিচার করলে দেখা যায় লিস্টি একটা আমাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ঘুরে ফিরে আবুল আহসান চৌধুরী হুবহু বসন্ত কুমার পালের গল্পকেই ‘নির্ভরযোগ্য উপকরণ’ গণ্য করেছেন। সেই গল্পের ভিত্তিতেই ফকির লালন শাহ সম্পর্কে পুরানা ভুয়া কেচ্ছাটাই ফের বলেছেন তিনি। অথচ হাজির করেছেন এমন ভাবে যাতে মনে হয় তিনি বুঝি অনেক গবেষণা করে একটা একাডেমিক সিদ্ধান্তে এসেছেন। লিখেছেন, “প্রচলিত মতে, লালন সাঁই ১৭৭৪ সালে সেই সময়ের নদীয়া জেলার অধীন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত গড়াই নদীর তীরবর্তী ভাঁড়ারা গ্রামে (চাপড়া গ্রাম সংলগ্ন) জন্মগ্রহন করেন। হিন্দু কায়স্থ পরিবারের সন্তান লালনের জনক-জননীর নাম যথাক্রমে মাধব কর ও পদ্মাবতী”। এর পক্ষে সূত্র হিসাবে একমাত্র বসন্ত কুমার পালকেই তিনি ‘নির্ভরযোগ্য’ গণ্য করেছেন। (চৌধুরী ২০০৮; পৃ-১১)
লক্ষ্য করবার বিষয়, আবুল আহসান চৌধুরী বসন্তকুমার পালের কেচ্ছা যে আসলে ‘নির্ভরযোগ্য’ নয় সেটা জানেন। তাঁর জন্ম সম্পর্কে আসলে যে কিছুই জানা যায় না এই সহজ সত্যটার ওপর দাঁড়ালে চৌধুরীকে বসন্তকুমার পালের কাহিনীটাকে ‘প্রচলিত মত’ বলে চালাবার অন্যায় চেষ্টা করতে হোত না। অথচ এটা তো ‘প্রচলিত মত’ নয়। কিন্তু তিনি সেটা করেছেন। এই মতটাকে বসন্ত কুমার পালের কেচ্ছা বললেই বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে সৎ কাজ হোত। লালনের জন্মসূত্র যদি জানা না যায় তাহলে তাকে অজানা থাকতে দেওয়াটাই ছিল সততার লক্ষণ। সহজ সরল সত্যটাই প্রতিষ্ঠার দরকার ছিল যে ফকির লালন শাহের জন্মের হদিস বা জন্ম বৃত্তান্ত কিছুই জানা যায় না। তাঁর মতো একজন গবেষক যদি এই কথাটা জোরের সঙ্গে বলতেন তাহলে সাম্প্রদায়িক বিষের হাত থেকে ফকির লালন শাহ রক্ষা পেতেন। আমরাও স্বস্তি বোধ করতাম।
ফকির লালন শাহকে হিন্দু বা মুসলমান প্রমাণ করবার ভেদবুদ্ধিটাই ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক। দুর্ভাগ্য যে এই ভেদবুদ্ধির চর্চা অনেকদিন ধরেই হয়ে আসছে। লালন নিয়ে যারা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন বা করছেন তারা আবুল আহসান চৌধুরীকে সাক্ষী মেনে বসন্তকুমার পালের কেচ্ছাকেই ক্রমাগত প্রচার করে চলেছেন। সুধীর চক্রবর্তীর মত সতর্ক গবেষকও এই প্রয়াস থেকে মুক্ত নন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মনের মানুষ’ ও একই নামের গৌতম ঘোষের সিনেমাটিও বসন্তকুমার পাল ও আবুল আহসান চৌধুরীর ভুয়া কেচ্ছার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ফকির লালন শাহকে হিন্দু প্রমাণ করবার যে পুরানা বাসনা জারী ছিল তাকেই এখন উপন্যাস ও সেলুলয়েডে আরো উলঙ্গ ভাবে আমরা দেখছি।
লালনকে ‘হিন্দু’ প্রমাণ করবার প্রত্যক্ষ কুফল হচ্ছে পালটা তাকে ‘মুসলমান’ বানাবার চেষ্টা। হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার বিপরীত প্রতিক্রিয়া হিসাবে এটা মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার চেহারা। সাম্প্রদায়িকতার আরেক নমুনা। এ সম্পর্কে সুধীর চক্রবর্তী খুব উষ্মার সঙ্গে তাঁর ‘ব্রাত্য লোকায়ত লালন’ বইতে আলোচনা করেছেন। এখানে জায়গা সংকুলান হবে না বলে সেই বিষয় বিস্তারের সুযোগ পাব না। সুধীর চক্রবর্তী লিখছেন, “কিন্তু ইতোমধ্যে ঘটে গেছে একটা বড়ো মত বদলের পালা, বিশেষত বাংলাদেশে। ১২৯৭ সালের ‘হিতকরী’র সম্পাদকীয় নিবন্ধ থেকে লালন ফকিরের যে জীবনী এবং তাঁর হিন্দু উৎসের কথা সবাই জানতেন সে সম্পর্কে সংশয় সন্দেহ ঘনাতে শুরু হয়েছে পঞ্চাশ দশকে। ১৩৩৫ সালে বসন্তকুমার পাল লালন ফকিরের বিস্তৃত পরিচিতি লেখান ‘প্রবাসী’ পত্রে। পরে পূর্ণাঙ্গ বই ‘মহাত্মা লালন ফকির’ লেখেন ১৩৬২ সালে। মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন, উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, মতিলাল দাস প্রমুখ অগ্রণী লালন-গবেষকরা সকলেই সেই জীবন বিবরণ জানতেন এবং মানতেন যে লালন ভাঁড়ারা গ্রামের অর্থাৎ কুষ্টিয়ার মানুষ, জন্মত হিন্দু কিন্তু নানা ঘটনাপরম্পরায় তিনি হয়ে যান জাতিহীন বাউল বা ফকির। কিন্তু একদল নতুন গবেষক বলতে চাইলেন লালন জন্মসূত্রেই মুসলমান”। (চক্রবর্তী ১৯৯২;পৃ-৩০-৩১)
সুধীর চক্রবর্তী যেদিকটা উপেক্ষা করছেন সেটা হচ্ছে বসন্তকুমার পালের বানানো কেচ্ছাটাই অন্যরা জানতেন ও মানতেন। এই ভূয়া কেচ্ছার পাল্টা আরেকটি ভূয়া কেচ্ছা বানান হচ্ছে আদিতে লালনকে হিন্দু বানিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বপন করা হয়েছিল বলেই। আর দুই সাম্প্রদায়িক ধারার মাঝখানে চেপ্টা হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে লালনের ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও আগ্রহীরা। তিনি আরেক কাঠি এগিয়ে বললেন একে বুঝতে হবে হিন্দু-মুসলমান দ্বিজাতিসমস্যার আলোকে। লালনের তিরোধান ঘটেছে ১৮৯০ সালে, “সেই থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত, দুই বাংলার কোন গবেষক বা পণ্ডিত লালনকে মুসলমান-বংশদ্ভূত বলেন নি। লালন যে মুসলমান এই দাবি প্রথম তোলেন পাকিস্তান আমলে মুহম্মদ আবু তালিব তার ‘লালন পরিচিতি (১৯৬৮) বইয়ে। এতে বিস্ময় প্রকাশ করে সুধীর চক্রবর্তী লিখছেন, “কিন্তু ইতিহাসের কৌতুক এইখানে যে, লালন কী জাত ছিলেন তা সযত্নে গোপন করে রেখে গেছেন” । (চক্রবর্তী ১৯৯২; পৃ-৩২)
দেখা যাচ্ছে সুধীর চক্রবর্তী জানেন যে ফকির লালন শাহ নিজে “কী জাত ছিলেন তা সযত্নে গোপন করে রেখে গেছেন”। তাহলে তিনি কেন দাবি করছেন যে বসন্তকুমার পালের বানানো কেচ্ছাটাই অন্যরা জানতেন ও মানতেন। তিনিওবা কেন বসন্তকুমার পালের কাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়ান নি? বসন্তকুমার পাল লালনের জন্ম ও জীবনের গোপন জিনিস জেনেই যদি ফেলে গিয়ে থাকেন তাহলে লালন কিভাবে নিজের জাত গোপন করে রাখতে পারলেন? দুর্ভাগ্য লালনের। ইতিহাসের কৌতুকটা আসলে কার সঙ্গে কার? সুধীর চক্রবর্তী নিজেও আবুল আহসান চৌধুরীর মারফতে বসন্তকুমার পালের কেচ্ছাটাই জেনেছেন। ফকির লালন শাহ যে আসলেই নিজের ‘জাত’ গোপন করবার জন্যই সজ্ঞানে, সচেতন ভাবে জেনে শুনে নিজের জন্ম, পরিবার, জাত ইত্যাদির সকল হদিস গোপন রেখে গিয়েছেন সেই সত্যও জানেন, অথচ দাড়িয়েছেন বসন্তকুমার পাল ও আবুল আহসান চোধুরীর কাতারে। তাদে কেচ্ছাকেই মেনে নিয়েছেন।
অথচ লালন যে তার জন্মের কোন হদিসই রেখে যান নি এই সত্য জানা ও প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই ফকির লালন শাহকে কেন্দ্র করে সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে ও বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। এটাই এখনকার প্রধান কাজ। তাঁকে হিন্দু বানানো চলবে না, মুসলমানও না। তখনই দিশা মিলবে ফকির লালন শাহের জীবন ও ভাবচর্চার সদর দরজার। বসন্তকুমার পাল কিম্বা মুহাম্মদ আবু তালিব -- উভয় প্রকার সাম্প্রদায়িকতার হাত থেকে ফকির লালন শাহকে উদ্ধার না করলে সেই দরজা কোনদিকে সেটা কোনদিনই জানা সম্ভব হবে না। আবুল আহসান চোধুরী, সুধীর চক্রবর্তী ও আরো অনেকে ফকির লালন শাহকে মুহম্মদ আবু তালিবের হাত থেকে বাঁচাতে চান, কিন্তু সেটা চান বসন্তকুমার পালের হাতে তাঁকে তুলে দেবার জন্য। তারা চান এতকাল তাঁরা যা জেনে এসেছেন ও মেনে এসেছেন আমরাও সেই ‘প্রচলিত মত’-টাই জানি ও মানি। প্রহসনটা আসলে এখানেই।
সাম্প্রদায়িকতাসহ সকল প্রকার পরিচয়ের রাজনীতি বিলোপ করবার সাধনার মধ্যে ফকির লালন শাহের জীবন ও ভাবচর্চার অর্থ আমরা ধরতে পারব। সেই দিক থেকে এতোটুকু জানাই যথেষ্ট যে তিনি কালীগঙ্গা নদীতে ভেসে এসেছেন। তাঁকে কারিগর মলম শাহ অজ্ঞান ও অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেন। মলম ও তাঁর স্ত্রী মতিজান তাঁকে সেবা শুশ্রূষায় নতুন জীবন দান করেন। এরপর তিনি মলম আর মতিজানকে ছেড়ে যান নি। তাঁর কবরের পাশেই ফকির মতিজানকে কবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরই ইচ্ছানুযায়ী। ব্যস। এতোটুকুই। জীবের জীবন নয়, তাঁর সাধক জীবন ও সাধনাই তাঁর পরিচয়।
... ... ... ...
লেখালিখির হদিস
পাল ২০০৮
বসন্তকুমার পাল, ‘ফকির লালন শাহ। আবুল আহসান চৌধুরীর সঙ্গহ-গবেষণা-ভূমিকা-সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘লালন সমগ্র’। পাঠক সমাবেশ ২০০৮। ঢাকা।
জসিম উদ্দীন ২০০৮
জসিম উদ্দীন, ‘লালন ফকির’। আবুল আহসান চৌধুরীর সংগ্রহ-গবেষণা-ভূমিকা-সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘লালন সমগ্র’। পাঠক সমাবেশ ২০০৮। ঢাকা।
চৌধুরী ২০০৮
আবুল আহসান চৌধুরীর সংগ্রহ-গবেষণা-ভূমিকা-সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘লালন সমগ্র’; পাঠক সমাবেশ ২০০৮। ঢাকা।
চক্রবর্তী ১৯৯২
সুধীর চক্রবর্তী, ‘ব্রাত্য লোকায়ত লালন’। পুস্তক বিপণি। কলিকাতা ১৯৯২।
লেখাটি নিয়ে এখানে আলোচনা করুন -(0)