চিন্তা


চিন্তা ও তৎপরতার পত্রিকা

রায়… ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড, ইতিহাস খালাস

চিন্তা, বছর ৭, সংখ্যা ১৭-১৮, ৩০ নভেম্বর, ১৯৯৮

“কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না।”

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান মৌলিক অধিকার (তৃতীয় ভাগ) অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত অনুচ্ছেদ ৩৫(৫)।

“আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িক ভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষতঃ আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্য (আরো পড়ূন)

সংবিধান ও গণতন্ত্র 

ভূমিকা

এক 

পত্র পত্রিকায় ‘কলাম’ বলে খ্যাত যেসব লেখালিখি নব্বই সালের দিকে করেছি, তাদের মধ্যে কয়েকটি 'সংবিধান ও গণতন্ত্র' নামের পুস্তিকায় প্রতিপক্ষ প্রকাশনী ছেপেছিল ১৯৯৩ সালে— প্রায় পনেরো বছর পার হতে চলেছে। অনেকদিন হোল পুস্তিকাটি আর পাওয়া যাচ্ছে না। নানা কারণে পুস্তিকাটির কথা অনেকে বলেন। কিছু চাঁচাছোলা কথা সেই নব্বইয়ের শুরু থেকেই আমি বলে আসছি যার গুরুত্ব ক্রমে ক্রমে বাংলাদেশের বাস্তব রাজনৈতিক ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে বেড়েছে। যে সকল প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছি তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি কিভাবে প্রসঙ্গগুলো তুলেছিলাম সেই দিকটাও মূল্যবান বলে মনে করেন অনেকে; বিশেষত রাজনৈতিক ব (আরো পড়ূন)

‘ঘোড়ার জীন মাটিতে লাগে না, রাজাবাবুকে চড়ে বসলেই হোল’ অথবা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্ম হয় কীভাবে? 

একটি প্রবাদ শুনেছিলাম এরকম: ‘ঘোড়ার জিন মাটিতে লাগে না, রাজাবাবুকে চড়ে বসলেই হোল’। বাক্যটির পশ্চাতে সামন্ত ব্যবস্থার প্রতি একটা কটাক্ষ আছে‌। রাজার শরীর আর তার বাহনের উপর স্থাপিত আসনের সঙ্গে মাটির কোনো যোগ নেই। প্রজাদের সঙ্গে ধরাছোঁয়া নেই। আমাদের মত দেশে যেখানে আমরা পশ্চাদপদ সামন্ত সম্পর্কগুলোকে রাজনৈতিকভাবে লড়ে বিনাশ করি নি সেখানে ঔপনিবেশিক শক্তি সরে যাবার পর তার গাঁথুনির উপর ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্র হিসাবে যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটাও সেই রকম : ‘ঘোরার জীন মাটিতে লাগে না, রাজাবাবুকে চোড়ে বসলেই হোল’।

সেই সামন্ত উপনিবেশিক ধারাবাহিকতায় একদিকে আমাদের দেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও নিপীড়নের সকল রাষ্ট্রিক (আরো পড়ূন)

গণঅভ্যুত্থানের বিকল্প নাই 

গত সোমবার নভেম্বরের বারো তারিখে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন তাঁর পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাকে ‘নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প নাই’ শিরোনামে বর্তমান আন্দোলন সম্পর্কে তাঁর স্পষ্ট উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। তিনি লিখছেন, ‘সুস্থ চিন্তা-ভাবনার লোকদের উদ্বেগের শেষ নাই, কীভাবে আন্দোলনকে নিয়মতান্ত্রিক পথে রাখা সম্ভব।’ কেন এই উদ্বেগ? মইনুল হোসেন লিখছেন, ছাত্র-জনতা ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফাটিয়া পড়িতেছে। আন্দোলনে সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পাইতেছে। কোন কোন দায়িত্বশীল নেতা এই আশঙ্কা ব্যক্ত করিয়াছেন যে, আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের দিকে মোড় নিতেছে। ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সমাজ এইবারের আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করিতেছে বিধায় আন্দোলন যে ঘামিবার নয় তাহাও বুঝি (আরো পড়ূন)

অভ্যুত্থান পরবর্তী পদক্ষেপ: এখন কী করতে হবে 

এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে দুটো ব্যাপার লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। একদিকে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নেতৃত্বে এক অসাধারণ গণঅভ্যুত্থান, অথচ অপরদিকে সমরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গায়ে একটি আঁচড় না লাগা। জনগণকে দমন করবার সকল নাট-বল্টুসহ রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক ভিত্তি ও কাঠামো পুরোপুরি সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত থেকে গেছে। অবাক লাগে, এত বড় অভ্যুত্থান হবার পরেও রাষ্ট্রের গায়ে একটি আঙ্গুলের টোকাও টুক্ করল না। ওটা বহাল তবিয়তেই খোশহাল বজায় আছে। এটাও আশ্চর্যের যে এতো বড়ো বিজয়ের পরেও আমরা ব্যক্তির মৌলিক অধিকার বিরোধী গণধিকৃত স্পেশাল পাওয়ার এক্টিটি পর্যন্ত এখনো রদ করতে পারি নি। অন্যান্য কালো আইনের কথাটি অনেক দূরের ব্যাপার। ইতিমধ্যে চক্রান্ত শুরু হয়েছে, সর্বদলীয় ছাত (আরো পড়ূন)

সংবিধান ও নাগরিকদের গণতান্ত্রিক চেতনা, ইচ্ছা ও সংকল্প 

বিচারপতি সৈয়দ সাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার রোকনুদ্দিন মাহমুদ। প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে তুলেছেন বা আইনি ভাষায় ‘রেফারেন্স’ প্রেরণ করেছেন। তার মানে প্রধান বিচারপতি বা জুডিশিয়াল কাউন্সিল মনে করেছেন বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার। রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি বা জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেলেও তদন্তের নির্দেশ দেবার এখতিয়ার রাখেন। খবরের কাগজে যখন আমরা দেখলাম যে, রাষ্ট্রপতি এই ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ চেয়েছেন তখন নাগরিক হিশাবে অনেক সাংবিধানিক এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আন্তরিক- অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ (আরো পড়ূন)

গণতন্ত্রের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের মৌলিক সংঘাতটা কোথায়? 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির যে নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে তাতে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এই বর্বরতা শুধু ভয় জাগিয়েই ক্ষান্ত হয় নি, সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকের মনে প্রশ্নও জাগিয়ে তুলেছে হাজারো রকম। কী চায় জামায়াত-শিবির? তারা কি চায় নির্বাচন না হোক এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির অজুহাতে সেনাবাহিনী আবার ক্ষমতা দখল করুক? অপরদিকে প্রশ্ন জাগে, এরশাদ ও তার অনুচররা তো এখন আর ক্ষমতায় নেই, অতএব প্রশাসনের নির্ভয়ে এখন কাজ করতে পারা উচিত। স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের অবর্তমানে এ ধরনের ঘটনা ঘটা তো অনেক পরের কথা, ঘটবার আগেই প্রশাসনের উচিত ছিল তা নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ দূরে থাকুক ঘটনা ঘটবার সময় পুলিশকে বরং দেখা গেলো ঘটনা ঘট (আরো পড়ূন)

যুদ্ধ আরো কঠিন আরো গভীর

ফরহাদ মজহারের এই নিবন্ধগুলো এক-এগারোর সময়কালে বিভিন্ন সময়ে লেখা। এক-এগারোর সময়কাল ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে পরের বছর ২০০৮ সাল জুড়ে। নিবন্ধগুলো ২০০৮ সালের রাজনৈতিক ঘটনা-ঘটনের পটভূমিতে বসে সমসাময়িক সময় ও প্রসঙ্গ নিয়ে লেখা। ফলে ইতিহাসের বাস্তব ও সুনির্দিষ্ট উপাদানে ভরপুর। তবে এটা কেচ্ছাকাহিনীর মতো বলে যাওয়া কোনো বিবরণ নয়। বরং তার মধ্য দিয়ে মূলত বাস্তবতা ও বাস্তব ঘটনাঘটনের প্রতি তাৎক্ষণিক পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা হয়েছে। এই লেখালিখিগুলো বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দানে নতুন বয়ান ও মতামত হাজির করেছে, রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে। ফলে আমরা লেখাগুলিকে খোদ এই ইতিহাসের প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই পড়তে পারি। এই লেখাগুলি আ (আরো পড়ূন)

দখলদারদের বিরুদ্ধে ঐক্য চাই, ফাঁদে পা দেবেন না

ফরহাদ মজহারের এই নিবন্ধগুলো এক-এগারোর সময়কালে বিভিন্ন সময়ে লেখা। এক-এগারোর সময়কাল ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে পরের বছর ২০০৮ সাল জুড়ে। নিবন্ধগুলো ২০০৮ সালের রাজনৈতিক ঘটনা-ঘটনের পটভূমিতে বসে সমসাময়িক সময় ও প্রসঙ্গ নিয়ে লেখা। ফলে ইতিহাসের বাস্তব ও সুনির্দিষ্ট উপাদানে ভরপুর। তবে এটা কেচ্ছাকাহিনীর মতো বলে যাওয়া কোনো বিবরণ নয়। বরং তার মধ্য দিয়ে মূলত বাস্তবতা ও বাস্তব ঘটনাঘটনের প্রতি তাৎক্ষণিক পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা হয়েছে। এই লেখালিখিগুলো বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দানে নতুন বয়ান ও মতামত হাজির করেছে, রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে। ফলে আমরা লেখাগুলিকে খোদ এই ইতিহাসের প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই পড়তে পারি। এই লে (আরো পড়ূন)

প্রস্থানপথ নাই, অতএব পদলেহন...

ফরহাদ মজহারের এই নিবন্ধগুলো এক-এগারোর সময়কালে বিভিন্ন সময়ে লেখা। এক-এগারোর সময়কাল ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে পরের বছর ২০০৮ সাল জুড়ে। নিবন্ধগুলো ২০০৮ সালের রাজনৈতিক ঘটনা-ঘটনের পটভূমিতে বসে সমসাময়িক সময় ও প্রসঙ্গ নিয়ে লেখা। ফলে ইতিহাসের বাস্তব ও সুনির্দিষ্ট উপাদানে ভরপুর। তবে এটা কেচ্ছাকাহিনীর মতো বলে যাওয়া কোনো বিবরণ নয়। বরং তার মধ্য দিয়ে মূলত বাস্তবতা ও বাস্তব ঘটনাঘটনের প্রতি তাৎক্ষণিক পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা হয়েছে। এই লেখালিখিগুলো বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দানে নতুন বয়ান ও মতামত হাজির করেছে, রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে। ফলে আমরা লেখাগুলিকে খোদ এই ইতিহাসের প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই পড়তে পারি। এই লে (আরো পড়ূন)

জনগণের গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে উঠুক

ফরহাদ মজহারের এই নিবন্ধগুলো এক-এগারোর সময়কালে বিভিন্ন সময়ে লেখা। এক-এগারোর সময়কাল ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে পরের বছর ২০০৮ সাল জুড়ে। নিবন্ধগুলো ২০০৮ সালের রাজনৈতিক ঘটনা-ঘটনের পটভূমিতে বসে সমসাময়িক সময় ও প্রসঙ্গ নিয়ে লেখা। ফলে ইতিহাসের বাস্তব ও সুনির্দিষ্ট উপাদানে ভরপুর। তবে এটা কেচ্ছাকাহিনীর মতো বলে যাওয়া কোনো বিবরণ নয়। বরং তার মধ্য দিয়ে মূলত বাস্তবতা ও বাস্তব ঘটনাঘটনের প্রতি তাৎক্ষণিক পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা হয়েছে। এই লেখালিখিগুলো বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দানে নতুন বয়ান ও মতামত হাজির করেছে, রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে। ফলে আমরা লেখাগুলিকে খোদ এই ইতিহাসের প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই পড়তে পারি। এই লে (আরো পড়ূন)

বিপ্লবী নবী 

মওলানা আবদুল কাদির আজাদ সুবহানি (১৮৯৬-১৯৬৩) ছিলেন বিখ্যাত রব্বানি দর্শনের প্রবক্তা। তিনি আল্লামা আজাদ সুবহানি নামে অধিক পরিচিত। ইসলামের নবি রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসালামকে রুহানি বয়ানের আলোকে পেশ করা এবং  'বিপ্লবী নবি হিশাবে হাজির করার প্রচেষ্টা সাহসী ও নতুন। ধর্ম নির্বিশেষে  মোহাম্মদ (সা) দলিত,  গরিব, হতদরিদ্র, লাঞ্ছিত, নিপীড়িত জনগণের সিপাহসালার হিশাবে  হাজির করার মধ্য দিয়ে আজাদ সুবহানি  বিখ্যাত হয়েছেন। বলাবাহুল্য ইসলামকে ক্রমাগত পরকালবাদী জগৎবিমুখ ধর্ম হিশাবে প্রতিষ্ঠিত করার  ধারা শক্তিশালী। বিপরীতে বিপ্লবী রাজনৈতিক চিন্তার জায়গা থেকে রাসুলকে (আরো পড়ূন)

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সমস্যা

‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সমস্যা’ চটি পুস্তিকাটি মোহাম্মদ তোয়াহা (২ জানুয়ারি ১৯২২ - ২৯ নভেম্বর ১৯৮৭) গত শতাব্দির আশির দশকের মাঝামাঝি লিখেছেন। এটি প্রকাশিত হয়েছে ১লা অগাস্ট ১৯৮৫ সালে। বাংলাদেশের তরুণরা বাংলাদেশে বিপ্লবী কমিউনিস্ট ধারার চিন্তা ও কর্মতৎপরতা সম্পর্কে কিছুই প্রায় জানে না। এই পুস্তিকাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে বিপ্লবী কমিউনিস্ট ধারার বহু ভুলভ্রান্তি রয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান আমলে এবং পুরা ষাট ও সত্তর দশকে তাদের অবদান ছিল অসামান্য।  সামন্ততন্ত্র, আধা বা সামন্ততান্ত্রিক অবশিষ্ট – অর্থাৎ প্রাক-পুঁজিতান্ত্রিক সকল সম্পর্ক উৎখাত করে উৎপাদন শক্তির গতিশীল বি (আরো পড়ূন)

মত প্রকাশের স্বাধীনতা বনাম চিন্তার স্বাধীনতা: একটি তৎপর চিন্তার পত্রিকা দরকার

[এই লেখাটি ৮ অগাস্ট ১৯৯১ সালে চিন্তা প্রথম প্রস্তুতি সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। বাংলাদেশে 'পাক্ষিক চিন্তা'র মতো একটি পত্রিকা বের করার পেছনে কী ধরণের ইচ্ছা কাজ করেছিল তার কিছুটা হদিস এই লেখায় পাওয়া যাবে। চিন্তা পত্রিকা এবং চলমান সাপ্তাহিক  চিন্তা পাঠচক্রকে বুঝতে হলে এই লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ।  চিন্তা পাঠচক্রের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান হচ্ছে সক্রিয় ও সজীব চিন্তাকে 'মত' বা ছকে বাঁধা আদর্শ থেকে আলাদা গণ্য করা। একে আমরা সজীব ও সক্রিয় চিন্তার পর্যালোচনার সঙ্গে  মতাদর্শিক বিশ্বাসের পার্থক্য হিশাবেও গণ্য করতে পারি। চিন্তা গ্রুপের স্বাতন্ত্র্য বা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাংলাদেশে পর্যালোচনার  (Critique) সামর্থ্য গড়ে তোলা।

বাংলা ভাষায় পর্ (আরো পড়ূন)

গোপাল ভাঁড়ও এভাবেই রাজার সমালোচনা করতেন

এই লেখাটি ৭ জুন ২০১৪ দৈনিক যুগান্তরে উপসম্পাদকীয় হিশাবে ছাপা হয়েছে। 'গোপাল ভাঁড়' রসিক সন্দেহ নাই, গোপাল শুধু হাসায় না, দার্শনিক আগ্রহও জাগায়।  কিন্তু গোপাল নিয়ে মনের মতো কিছু লেখা হোল না।  এই লেখাটি কবে লিখেছিলাম নিজেই ভুলে গিয়েছি। মোহাম্মদ রোমেল মনে করে দিয়েছেন এবং জোগাড়ও করে দিয়েছেন। রোমেলকে অশেষ ধন্যবাদ।

সাম্প্রতিক কালে 'ভাঁড়', বিশেষত রাজকীয় ভাঁড়ামির দার্শনিক তাৎপর্য নিয়ে নতুন করে ভাবা জরুরী হয়ে পড়েছে। রাজা যখন একই সঙ্গে শাসক,  আইনদাতা ও বিচারক তখন কিভাবে আপনি আপনার কথা পেশ করবেন?  আপনাকে তখন ভান করতে হবে, আপনি সিরিয় (আরো পড়ূন)

কবি ফররুখ আহমদের কি অপরাধ?

এই লেখাটি ফররুখ আহমদকে নিয়ে আহমদ ছফা লিখেছিলেন ১৯৭৩ সালে। সেই সময়ের 'গণকন্ঠ' পত্রিকায় সম্ভবত  ১৬ জুন তারিখে এটি  ছাপা হয়েছিল। এই লেখার মধ্যে আহমদ ছফার মানবিক দিকটি স্পষ্টতই ধরা পড়ে। ফররুখের কাব্য প্রতিভার শক্তি নিয়ে ছফার কোন দ্বিধা ছিল না। তবে ছফা বাংলাদেশে আরও অনেক ভাল মানুষের মতো ফররুখ আহমদকে 'ইসলামি রেঁনেসা'র কবির অধিক ভাবতে পারেন নি। উচ্চবর্ণের হিন্দুর হাতে সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বাঙালির যে নবজাগরণ ঘটেছিল শিল্প-সংস্কৃতির আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতার মানদণ্ড তার দ্বারাই নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বলাবাহুল্য ১৯৭৩ সালে সেই সাম্প্রদায়িক অচলায়তন আহমদ ছফার পক্ষেও ভাঙা সহজ ছিল না। তারপরও ফররুখ আহমদ সম্পর্কে ছফার এই সাহসী, স্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন অ (আরো পড়ূন)

সাম্রাজ্যবাদী পানীয় কোক-পেপসি

কোকাকোলা কোম্পানি নিয়ে এই লেখাটি পাক্ষিক চিন্তা পত্রিকার 'সাম্রাজ্যবাদঃ যুদ্ধ ও বাণিজ্য' সংখ্যায় (বছর ১৪, সংখ্যা ২; কার্তিক ১৪১৩/নভেম্বর) প্রকাশিত হয়েছিল। এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে চিন্তা অনলাইনে ২৬ মে ২০১০ সালে আমরা আরেকবার ছেপেছিলাম। সম্প্রতি ভাষার মাসে কোকাকোলার 'নিখোঁজ' বাংলা শব্দ প্রকল্প আমাদের আবার হুঁশে এনেছে। কর্পোরেট বাণিজ্যের সাংস্কৃতিক রাজনীতির বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করবার জন্য লেখাটি আবার পেশ করছি।

এই প্রসঙ্গে বলা জরুরি যে বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক রাজনৈতিক লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বহুজাতিক কর্পোরেট বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো গভীর ভাবে জড়িত। আমরা আগেও অনেকবার বলেছি, পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার কোন সংস্কৃতি নাই, পুঁজির আছে শুধু এডভারটাইজ (আরো পড়ূন)

নদিয়ার ভাব ও লালন শাহ

এক

ফকির লালন শাহ তিরোধান করেছিলেন পহেলা কার্তিকে। বাংলা বছর ১২৯৭ আর ইংরেজি ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর। এই বছর পহেলা কার্তিক ১৪২২ (১৬ অক্টোবর ২০১৫), ফকির লালন শাহের ১২৫তম তিরোধান দিবস। 

তিরোধান দিবস হবার কারনে দিনটি শোকের দিন হিশাবে তাঁর অনুরাগী ও অনুসারীরা পালন করে থাকেন। তাদের জন্য এটা কান্নাকাটির দিন। কিন্তু এখন এই দিনটিকে একধরণের উৎসবে পরিণত করা হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে দেখছি পহেলা কার্তিকে ছেঁউড়িয়াকে একটা মেলায় পরিণত করা হয়। এর নানা কারন আছে।  লালন ফকিরের ধাম যাদের 'টাঁকশাল' সেই সাধকরা কার্যত তাদের নিজেদের ধাম থেকেই বিতাড়িত। তাঁরা ধামের রক্ষা বা ব্যবস্থাপনায় নাই। (আরো পড়ূন)

কামরাঙ্গীর চরে মাদ্রাসায় শিক্ষা বিপ্লবের সূচনা

আহমদ ছফার একটি পুরানা লেখা। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের আবির্ভাবের কারনে কওমি মাদ্রাসা নানান দিক থেকে আলোচিত। সেই ক্ষেত্রে আহমদ ছফার এই পুরানা লেখাটি প্রাসঙ্গিক হতে পারে ভেবে আমরা এখানে তুলছি। বাংলাদেশের আলেম ওলামাদের প্রতি আহমদ ছফা সদয় ছিলেন, সন্দেহ নাই। তাঁদের কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করেছেন একসময় এবং তাঁদের মনমানসিকতায় পরিবর্তন আনবার জন্য যথেষ্ট কোশেশ করেছেন। তাঁর লেখার সেই স্বীকারোক্তি আছে। কিন্তু তিনি সফল হতে পারেন নি। এর নানা কারন থাকতে পারে। যেমন, ‘রেঁনেসা’, ‘আধুনিকতা’, ‘আধুনিক শিক্ষা’ ইত্যাদির প্রতি তাঁর নির্বিচার পক্ষপাত তাঁকে আলেম-ওলামাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল হয়ত। তিনি নিজেও সে ব্যাপারে সচেতন (আরো পড়ূন)

অহিংসা ও বিপ্লব

[ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী উপমহাদেশে অহিংসার বাণী শুনিয়েছিলেন, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তাতে মোহিত হন নি, তিনি তাকে ‘আফিম খাওয়ানো’ মনে করতেন। মওলানার দাবি, “অহিংসার বাণী এবং অহিংস কৌশল মানুষের বিপ্লবী চেতনাকে ভোঁতা” করে দেয়। কিন্তু এটা নিছকই চেতনাগত সমস্যা নয়। এটা হচ্ছে “চোয়ালেই লাগাম আঁটিয়া দেওয়া”। চিন্তার যে গভীরতা থেকে ভাসানী কথাগুলো বলেছেন তা বুঝতে হলে তাঁর 'অহিংসা ও বিপ্লব' লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।

প্রথমত অহিংসাবাদ জালিম ব্যবস্থা উৎখাত করবার জন্য ব্যবস্থার রক্ষকদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের অনিবার্যতা ও প্রয়োজনীয়তাকে (আরো পড়ূন)

শেখ মুজিবুর রহমান

[ দুই বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতি সমাজ ভাবনাকে এক মলাটের মধ্যে তুলে ধরার বাসনায় কবি গৌতম চৌধুরী গত শতকের ৯০ দশকে কলকাতা থেকে ‘যুক্তাক্ষর’ নামে একটি কাগজ বের করেছিলেন। প্রথম সংখ্যা বেরোয় আগস্ট ১৯৯৪ সালে। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার বাংলাভাষীদের লেখা একই মলাটে পেশ করা। ওর মধ্য দিয়ে পরস্পরকে চেনা ও জানা ছিল প্রাথমিক একটি উদ্দেশ্য। কিন্তু আরও বড় আশা ছিল সীমান্তের দুই দিকেই উপমহাদেশের ইতিহাস ও তার ফলাফলকে নির্মোহ দৃষ্টি দিয়ে বিচার করবার চর্চা প্রশস্ত করা এবং তার ইতিবাচক ফল হিশাবে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি সমাজ ইতিহাস ভাবনা ইত্যাদির মধ্যে তা আত্মস্থ করা। অল্প কয়েকটি সংখ্যা বেরিয়েছিল, তবুও স্ব (আরো পড়ূন)

ফিলিস্তিন ও জায়নবাদবিরোধী লড়াই

আধিপত্যবাদ? বর্ণবাদ? সাম্রাজ্যবাদ?

ফিলিস্তিনের জনগণের লড়াইকে সাধারণত ‘পাশ্চাত্য আধিপত্যে’র বিরুদ্ধে সবচেয়ে দীর্ঘ, বেদনাজনক এবং কঠিন সংগ্রাম বলে গণ্য করা হয় যার কোনো শান্তিপূর্ণ আশু মীমাংসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ফিলিস্তিনের প্রশ্ন কি নিছকই ‘আধিপত্য' সংক্রান্ত প্রশ্ন? এ লড়াই একই সঙ্গে ‘বর্ণবাদ’ এবং ‘সাম্রাজ্যবাদ’ বিরোধী লড়াই। আল কুদস দিবস পালন উপলক্ষে অনেকে যথার্থই এই লড়াইকে ‘বর্ণবাদ’ ও ‘সাম্রাজ্যবাদ’ বিরোধী লড়াই বলে গণ্য করেছেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কথাগুলোর মানে কী? ‘আধিপত্যবাদ’, ‘ব (আরো পড়ূন)

ইন্তিফাদা জিন্দাবাদ: ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোরদের ঢিল আর গুলতি লড়াই

ফিলিস্তিনের শিশু-কিশোররা লড়ছে ঢিল আর গুলতি দিয়ে। তাদের বিরুদ্ধে ইজরাইলের আধুনিক মারণাস্ত্র, স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, মারকেভা ট্যাংক, মিসাইল, হেলিকপ্টার গানশিপ আর আনুষঙ্গিক ভারি যুদ্ধবাহন। একেকটি ঢিল আর গুলতির গুলির বিপরীতে সব স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র গর্জে উঠছে ইজরায়েলি সৈন্যদের হাতে। শিশু-কিশোরদের বুক আর মাখার খুলি লক্ষ্য করে ছোঁড়া হচ্ছে গুলি। মরছে তারা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনের উল্লেখ করে মার্কিন ভাষাতত্ত্ববিদ এবং মানবাধিকারের প্রশ্নে সরব নোয়াম চমস্কি বলছেন, এই ধরণের বিশদ ও বিস্তৃত প্রতিবেদনের কোনো উল্লেখ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হয় না বললেই চলে। চমস্কি যখন তার ‘আল আকসা ইন্তিফাদা’ নিবন্ধটি লিখছেন ততদিনে কমপক্ষে ১০০ জন ফিল (আরো পড়ূন)

গান্ধী, ফিলিস্তিন ও ইসলাম


‘ফিলিস্তিন আরব জনগণের, ঠিক যে-অর্থে বিলাত ইংরেজদের, অথবা ফ্রান্স ফরাসিদের। আরবদের ওপর ইহুদি জনগোষ্ঠীকে চাপিয়ে দেয়া ভুল কাজ এবং অমানবিকও বটে। ... নিঃসন্দেহে এটা মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ হবে যদি আরবদের অপমানিত করে ফিলিস্তিনের খানিকটা বা পুরোটাই ইহুদিদের হাতে তাদের জাতীয় আবাস দাবি করে তুলে দেয়া হয়।’

এই মন্তব্য একজন মহাপুরুষের। তিনি বিতর্কের উর্ধ্বে নন, সত্যি। এই উপমহাদেশের হিন্দু ও মুসলমান দুটো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসা, দ্বেষ ও দাঙ্গা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তার আন্তরিক অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু তিনি হিন্দু জনগোষ্ঠীর কাছে যতোটা গ্র (আরো পড়ূন)