চিন্তা প্রতিবেদন


Tuesday 15 June 10

print

অসমের স্বাধিকার আন্দোলন ও শান্তি আলোচনা

উলফার শীর্ষ নেতাদের তিনজন; অরবিন্দ রাজখোয়া, অনুপ চেটিয়া ও পরেশ বড়–য়া তাদের বক্তব্যে বহুবার বলেছেন, এই বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই তারা জান-প্রাণ দিয়ে লড়াই করছেন স্বাধীনতার জন্য। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তারা সহায়তা করেছে। তারা মনে করছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা জনগণ ইনডিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের স্বাধীনতা-সংগ্রাম সম্পর্কে সচেতন। কারণ এ লড়াই তো তাদেরও। কিন্তু বাংলাদেশ বরাবরই উলফার সাথে ‘অযৌক্তিক’ আচরণ করেছে। ইনডিয়ার সাথে সম্মানজনক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কিম্বা আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যে নিজেদের অবস্থান তৈরি--কোনোটিই বিবেচনা না করে, একেরপর এক গেরিলা নেতাদের ইনডিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি এক্ষেত্রে নিজের দেশের বা আন্তর্জাতিক আইন কানুন বা মানবাধিকার, কিছুই আমলে নেয় নাই দেশটি।

যেমন সর্বশেষ উলফা প্রধান রাজখোয়াকে আটকের ঘটনা। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার দেয়া তথ্যমতে, রাজখোয়ার আত্মসমর্পণ এবং হস্তান্তরের পুরা বিষয়টা সাজানো নাটক বৈ আর কিছু না। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতেই ২৮ নভেম্বর রাজখোয়াকে ঢাকা থেকে কক্সবাজার নেয়া হয়। বাংলাদেশের ভূমিকা প্রসঙ্গে আনন্দবাজার বলছে, বাংলাদেশের কোনো দায় রইলো না। এটা না করলে রাজনীতিতে অবশ্যই হাসিনা সরকার চাপে পড়ত। এর আগের কিস্তিতে হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসলে ১৯৯৮ সালে উলফার সাধারণ-সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেফতার করে। এইবার ক্ষমতায় এসে আরও দুইজন শীর্ষ নেতাকে ইনডিয়ার হাতে হস্তান্তর করল।

 

বাংলাদেশের প্রতি অভিযান বন্ধের আহ্বান

ইনডিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের চলমান অভিযান বন্ধের আহ্বান করছে উলফা। সংগঠনটির কমান্ডার ইন চিফ পরেশ বড়ুয়া বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বলেন, যে দলটা একটা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে, স্বাধীনতার প্রতি আমাদের আকুলতা তাদের বোঝা উচিত। উলফার সাথে আরো চারটি স্বাধীনতাকামী দল সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান। দল চারটি হল, মনিপুর পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (এমপিএলএফ), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোড়োল্যান্ড (এনডিএফবি), ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (এনএলএফটি) এবং অল ত্রিপুরা টাইগার্স ফোর্স (এটিটিএফ)। এনডিএফবি ২০ লাখ বোরোর জন্য একটি স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার লড়াই করছে। যারা অসমের পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে এবং এই বোরোরাই রাজ্যের অন্যতম আদি বাসিন্দা। ভারতের রাজ্য মনিপুরের বিদ্রোহী সংগঠন এমপিএলএফ। এনএলএফটি এবং এটিটিএফ ত্রিপুরার স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করছে।

তারা বলেন, সবসময় স্বাধীনতার চেতনার বিজয় হয়েছে, যদিও তা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের মানুষও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ। তাই তারা অসমের মুক্তি সংগ্রামে সহানুভূতি ও সমর্থন দেবে। যদিও তা বর্তমান সরকারের নীতির সাথে মিলবে না। পরেশ বড়ুয়া বলেছেন, একাত্তর সালে উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে, সহায়তা করেছে। তা হলে বাংলাদেশের মানুষ অসমের স্বাধীনতায় সমর্থন দেবে না কেন!

উলফা প্রধান অরবিন্দ রাজখোয়াকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করেছে বলে দাবি বিএসএফের। কিন্তু ইনডিয়ার সংবাদমাধ্যমের খবর হল, তাকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গত পাঁচ মে গৌহাটির আদালতে রাজখোয়াকে হাজির করার সময় সাংবাদিকদের তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তাকে বাংলাদেশ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই সময় রাজখোয়া বলেছেন, বাংলাদেশ উলফার সাথে বিশ্বাসঘাতকের মত আচরণ করেছে। কোনো দেশ তার শত্রুর সাথেও এমন আচরণ করতে পারে না। বাংলাদেশ সরকার রাজখোয়াকে গ্রেফতার করে ইনডিয়ার হাতে তুলে দেয়ার পর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলো দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, বাংলাদেশ সরকার তাদের স্বাধীনতাকামী নেতাকে গ্রেফতার করে ইনডিয়ান ইউনিয়নের হাতে তুলে দিয়েছে। অথচ ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এ তিনটি রাজ্যের জনগণের অবদান খাটো করে দেখার সুযোগ নাই। অসম, মেঘালয় ও ত্রিপুরার মানুষ আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশের হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে। শত শত বাংলাদেশী অভিবাসীকে জীবিকা নির্বাহের জন্য জায়গা দিয়েছে তারা। তারপরও এ তিন রাজ্যের মুক্তিসংগ্রামে বাংলাদেশ সরকার ন্যূনতম অনুগ্রহ না দেখিয়ে যে আচরণ করেছে তাকে বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।

উল্লেখ্য, এর আগে উলফার সামরিক শাখার উপ-প্রধান রাজু বড়ুয়া, অর্থ সম্পাদক চিত্রবন হাজারিকা, পররাষ্ট্র বিষয়ক সম্পাদক শশধর চৌধুরী সপরিবারে আটক হয়েছে বাংলাদেশে। সর্বশেষ চীন থেকে মায়ানমার সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকলে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরেশ বড়ুয়াকে গ্রেফতার করে।


প্রাসঙ্গিক অন্যান্য লেখা


Name

Email Address

Title:

Comments


Inscript Unijoy Probhat Phonetic Phonetic Int. English
  

View: 4241 Leave comments (0) Bookmark and Share

Go Back To Issues
EMAIL
PASSWORD