স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের আলোচনা চায় গেরিলারা

অসমের স্বাধীনতাকামী গেরিলাদের সাথে অবশেষে ‘শান্তি-আলোচনা’ শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে ইনডিয়া। ইউনিয়ন সরকারের উদ্যোগের অংশ হিশাবে অসম রাজ্য সরকার গত মাসের শেষ দিকে গেরিলা সংগঠন উলফার সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করার উদ্যোগ চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। উলফার শীর্ষস্থানীয় দশজন নেতাকে জেলবন্দি করেই তবে এই উদ্যোগ নিলো ইনডিয়ান ইউনিয়ন। কিন্তু ‘পায়ে শেকল নিয়ে’ কোনো শান্তি আলোচনায় যাবে না বলে জানিয়েছেন উলফা প্রধান রাজখোয়া ও সামরিক প্রধান পরেশ বড়–য়াসহ শীর্ষ নেতারা। তাছাড়া সংগঠনটি বলছে, ‘অসমের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব’ যদি এজেন্ডার মধ্যে থাকে তবেই আলোচনায় বসবেন তারা।

torun gogiঅসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গোগি মে মাসের আটাশ তারিখে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম (উলফা) এর নেতাদের যখন সরকারের তরফে শান্তি আলোচনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানালেন, ওই গেরিলা নেতারা তখন কেউ তাদের ‘মুক্ত এলাকা’ বা ‘যুদ্ধশিবিরে’ ছিলেন না; বরং সবাই ছিলেন রাজ্যটির রাজধানীস্থ কারাগারে। এর আগেই তারা বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন এবং দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার তাদের ইনডিয়ার কাছে হস্তান্তর করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন খবরও এসেছে যে, ইনডিয়ার গোয়েন্দারাই তাদের এখান থেকে ধরে নিয়ে গেছে।

paresh baruaশান্তি আলোচনার কথা উঠলে উলফার কমান্ডার ইন চিফ পরেশ বড়ুয়া বলেন, সরকার অসমের স্বাধীনতার কথা বললে, বসতে রাজি। এর বাইরে অন্য কথা নয়। পরেশ বড়ুয়ার সাথে রাজখোয়া’র দ্বন্দ্বের কথা উঠলে তিনি বলেন, রাজখোয়ার সাথে তার কোনো দ্বন্দ্ব নাই। তাদের মধ্যে কোনো মতভিন্নতাও নাই। অসমের স্বাধীনতা অর্জনের জন্যই তারা লড়াই করছেন। এর বাইরে আর কোনো পথ খোলা নাই। তিনি জানান, রাজখোয়া কখনও আত্মসমর্পণ করেন নাই। এটা ইনডিয়া সরকারের ষড়যন্ত্র। সরকার গেরিলাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। উলফার সামরিক শাখার এই শীর্ষ নেতা জেলে থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানান যে, স্বাধীনতার জন্য বারো হাজার অসমীয় প্রাণ দিয়েছে, এ কথা ভুলে থাকলে চলবে না।

 

আলোচনায় আগ বাড়াবে কে?

উলফা এবং অসম সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনার যে কথা উঠেছে, তা আস্তে আস্তে জটিলতার দিকে যাচ্ছে। স্বাধীনতাকামীরা বলছে সরকারকেই শান্তি আলোচনার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অথচ গত ক’দিন আগেও দুই পক্ষ শান্তি আলোচনার ব্যাপারে বেশ নমনীয় ছিল। এখন শান্তি আলোচনার পথ খোলা থাকলেও দুই পক্ষের কেউ আর সামনে এগোচ্ছে না। উলফার উপ-প্রধান প্রদীপ গগি জানিয়েছেন, সরকারই প্রথমে আমাদের কাছে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু যেখানে আমাদের অধিকাংশ নেতা জেলে আটক আছে, সে অবস্থায় তাদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত সরকারের সাথে কোনো আলোচনায় আমরা বসতে পারি না।

রাজ্যের মন্ত্রীসভা গত পঁচিশ মে উলফার সাথে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়। অসমের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, উলফা যদি আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় তবে তাদের উচিত আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারকে জানানো। কারণ আগে একটা বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ দুই পক্ষকেই তৈরি করতে হবে। দুই পক্ষের বিবৃতি শেষ পর্যন্ত এটাই স্পষ্ট করে যে, শান্তি আলোচনা অত্যন্ত ধীর গতিতে এগোচ্ছে। এর ভেতরে দুপক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। চূড়ান্ত উদ্যোগের বিষয়ে দুই পক্ষের কারও বক্তব্য স্পষ্ট না।

 

বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য

জাতি-ধর্ম-বর্ণ বা গোত্রের ভিত্তিতে বিভাজনের বিরুদ্ধে উলফার অবস্থান। উলফা শুধু অসমীয়া ভাষাভাষীদের সংগঠন না। সকল জাতি-বর্ণ-গোত্র-ধর্মের সংগঠন। শোষিতরা সংঘবদ্ধ হোক, এটা কোনো কালেই শাসকরা চায় নাই। তাই উলফা বলছে, অসমীয়া ভাষাগোষ্ঠীরা কেবল এখানে বসবাস করবে তা নয়, অন্যান্য ভাষাভাষীরা নিজ অধিকার নিয়ে বাস করবে। অসমের অভ্যন্তরীণ গোলমাল দূর করতে উলফা ও এনডিএফবি সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। উলফা তার রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতে ‘অসম: এ্যান ইন্ট্রোডাকশন’ শিরোনামে একটা বই প্রকাশ করেছে। এ বইয়ে অসম সমাজে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মিশ্রণ এবং এ বহু বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ওপর জোর দিয়েছে।

 

উলফার ‘স্বাধীনতা ভাবনা’

সংগঠনটির যেসব প্রকাশনা বাইরে পাওয়া যায় সেগুলোতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, উলফা শুধু স্বাধীনতা, ন্যায় আর ক্ষমতা পেতে লড়াই করছে না। বরং ‘সমগ্র মানবজাতির অধিকার’ আদায়ের লড়াইয়ের অংশ হিশাবেই তারা লড়ছে। গেরিলাদের মতে, অসমের যে প্রাকৃতিক সম্পদ অবাধে লুট হচ্ছে, তা শুধু ইনডিয়ার জনগণের না, গোটা মানবজাতির। সমস্ত মানুষের এই সম্পদ রক্ষা করতে তারা লড়াই করছে। সব প্রাকৃতিক সম্পদ মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে চায় তারা। ইনডিয়ার ঔপনিবেশিক আগুনে পোড়া অন্যান্য সাতটা রাজ্যের নাগরিকদের মুক্তির জন্য তারা এ লড়াই করছে। উলফা তাই নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মেঘালয়, অরুণাচল, মিজোরাম ও ত্রিপুরার মানুষ যাতে ইনডিয়ার ‘দখলদারি’ থেকে মুক্ত হতে পারে সেজন্য তাদেরও সহযোগিতা করছে। কেবল এ সাত বোনই না পাঞ্জাব, সিকিম ও কাশ্মিরে যারা ইনডিয়ার ঔপনিবেশের শিকার তাদের প্রতিও উলফার সহানুভূতি আছে। উলফা জানে ইনডিয়ার সাধারণ মানুষ এ শোষণের বাইরের কেউ না। তাদের মতে; মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, ট্রান্সন্যাশনাল কোম্পানির কাছে অসমের স্বাধীনতা বেচে দিয়েছে শাসকরা।


প্রাসঙ্গিক অন্যান্য লেখা


Name

Email Address

Title:

Comments


Inscript Unijoy Probhat Phonetic Phonetic Int. English
  

View: 5500 Leave comments (0) Bookmark and Share

Go Back To Issues
EMAIL
PASSWORD