- মনসান্তোর জিএমও কারসাজি
- আমাদের এখনকার সংকট
- আওয়ামি লিগের ইতিহাসও পারিবারিক ইতিহাসে পর্যবসিত হয়েছে...
- বাংলাদেশে 'নিউকনি' সিপাই
- রাষ্ট্রপ্রধান ও উচ্চ আদালত নিয়ে রাজনীতি
- রোকেয়া পাঠের স্থান কাল পাত্র
- গণতান্ত্রিক বিপ্লবের তিন লক্ষ্য
- মোদীর ভারত এবং বিশ্ব শক্তির ভারসাম্য বদল
- দেখলেই গুলি?
- আদালতের কর্তৃত্ব ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
ভাসানী, রবুবিয়াত ও নতুন বিপ্লবী রাজনীতি
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে বাংলাদেশের উদয়, বেড়ে ওঠার ইতিহাস এবং উপমহাদেশের জনগনের লড়াই সংগ্রাম থেকে যেভাবে মুছে ফেলা হয়েছে সে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। বাংলাদেশে নতুন রাজনীতির পুনর্গঠনের প্রশ্ন মওলানা ভাসানীকে নতুন ভাবে জানা, পড়া ও চর্চায় নিয়ে যাবার ওপর নির্ভরশীল। এই পরিপ্রেক্ষিত মনে রেখে মওলানা ভাসানী সম্পর্কে লেখাগুলোর পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গঠনের গলদ, গণতন্ত্র ও এখনকার কর্তব্য
বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি, আইন ও বিচারব্যবস্থার গোড়ার গলদ হচ্ছে শুরু থেকে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা ও গঠন করা যায় নি। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু ও সংঘটিত হয়েছিল একাত্তরের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে -- যার ঘোষিত ও লিখিত মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ কায়েম ও চর্চার উপযোগী গণমানুষের রাষ্ট্র গড়ে তোলা। কিন্তু ডান কি বাম প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা ধারা মুক্তিযুদ্ধ ও গণমানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। গণশক্তির বিকাশ ও বিজয় ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লবই অসমাপ্ত যুদ্ধ সম্পন্ন করতে পারে, এটাই এখনকার রাজনৈতিক কাজ। এদেশের সকল মানুষের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, লোকায়ত জ্ঞান ও ভাবুকতা সবই রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে গড়ে ওঠার আন্তরিক ও ঐতিহাসিক উপাদান। কিন্তু গণ ঐক্য ও গণশক্তি বিকাশ বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা ধর্মের নামে, ধর্ম বিরোধিতার নামে কিম্বা বাস্তবতা বিবর্জিত নানান আসামানি মতাদর্শের দোহাই দিয়ে জনগণকে বিভক্ত ও আশু রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন ও কর্তব্য পূরণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে তারাই -- ডান কিম্বা বাম -- জনগণের শত্রু।
- চতুর্থ সংশোধনীতে হারানো ক্ষমতা সামরিক আইনে ফিরে পাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছে আদালত
- আইনের শাসনের তামাশা ও বাকশাল ‘দর্শনের’ জের
- আদালত অবমাননার বিচার ও দণ্ড প্রসঙ্গ
- ‘কমিউনিস্ট’দের রিমান্ড সমস্যা
- হাসিনার কনস্টিটিউশন সংশোধন: আসলে কি হতে যাচ্ছে?
- সংজ্ঞাহীন অবারিত এখতিয়ার বন্ধ হবে কবে?
- ছয় বছরেও চূড়ান্ত হয় নাই আদালত অবমাননা আইন
বাংলার ভাবসম্পদ
লালন ও ভাবান্দোলন
চিনিয়ে দেওয়া, ধরিয়ে দেওয়া
স্বাধীনতার লড়াইয়ে অসমীয় জনগণ
সার্কের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে দুইশ পঞ্চাশটিরও বেশি ছোটবড় আলাদা জাতিগোষ্ঠী আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ইনডিয়া, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানে কমবেশি জাতিগত সংঘাত রয়ে গেছে। বাংলাদেশের সংবিধান এখনও পর্যন্ত পার্বত্য জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয় নাই। পাকিস্তানের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত প্রায়ই রক্তক্ষয়ের দিকে গড়ায়। কিন্তু ইনডিয়া ও শ্রীলংকার ভেতরকার সংঘাতের ধরণ একদমই আলাদা। দেশ দুটোতে বিষয়টি শুধু ‘জাতিগত সংঘাতের’ পর্যায়ে ছিল না বরং ‘জাতিগত আত্মনিয়ন্ত্রণের লড়াই’ হিশাবে ছিল, আছে। শ্রীলংকায় তামিলদের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের খবর দুনিয়ার খুব কম মানুষের অজানা, যদিও সেই যুদ্ধে জাতিগতভাবে তামিলরা শেষ পর্যন্ত চরমভাবে হেরেছে, কিন্তু আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে যায় নাই। ইনডিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ‘জাতিগত সমস্যা’ আছে। আর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, সাতবোন অঞ্চলের জাতিগোষ্ঠীগুলা ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নিজেদের স্বাধীনতার ও সার্বভৌমত্তের জন্য লড়াই করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
সাতবোন রাজ্যের মানুষ নিজেদের পরিচয় দেন ‘মৃত্যু উপত্যকার’ মানুষ হিশাবে। ইনডিয়ার ভাষায় এটা ‘মারাত্মক গোলযোগপূর্ণ এলাকা’। তাই দেশটি তার সেনাবাহিনীকে এ অঞ্চলে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, গ্রেফতার সহ দমন-নিপীড়নের সবরকম বন্দোবস্ত, আইনি অধিকার দিয়ে দিয়েছে। একটি বিশেষ আইন--আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট (এএফএসপিএ) কার্যকর করে সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীসহ সব আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীকে যে কোনো অপরাধ থেকে আগাম দায়মুক্তি দিয়ে রেখেছে ইনডিয়ার সরকার। প্রতিটি জেলায় সামরিক বাহিনীর ক্যাম্প আছে। পুলিশ-সেনাবাহিনী প্রতি রাতে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে হয়রানি ও লুটপাট করছে। কাউকে সন্দেহ হলেই তুলে নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা উপুর্যপরি ধর্ষণ করে মেরে ফেলছে। বাংলাদেশের জনগণ যেমনি পাকিস্তানি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়েছে, অসমীয়রাও ঠিক তেমনি ইনডিয়ার আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়ছে। পাকিস্তানিরা যেমনি বাংলাদেশের পাটের আয় নিয়ে যেত, ইনডিয়ার দৃষ্টি তেমনি অসমের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর পড়েছে।
অসমের প্রাকৃতিক সম্পদ
অসমের প্রাকৃতিক সম্পদের ভিতরে আছে তেল, কয়লা, লাইমস্টোন, প্রাকৃতিক গ্যাস। শষ্যের মধ্যে প্রচুর চা, ধান, পাট, ডাল ও তিশি উৎপাদিত হয়, বনজ সম্পদেও খুব সমৃদ্ধ রাজ্যটি। ইনডিয়া অর্থনৈতিকভাবে অসমকে শোষণ করেই চলছে, অথচ এই অঞ্চলের উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখছে না দেশটি। সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত গ্যাস উত্তোলন করছে অসম থেকে। অসম থেকে উত্তোলিত তেল দেশটি মূল ইনডিয়ার রাজ্যগুলাতে পাঠিয়ে দেয়। চা শিল্প থেকে প্রতিবছর ষাট কোটি টাকার বেশি বিদেশী মুদ্রা অর্জন করে, পঁচিশ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করে। কয়লা, লাইমস্টোনও অন্য রাজ্যগুলাতে নিয়ে যায়। শোষকরা চেষ্টা করছে যত দ্রুত অসমের তেল, গ্যাস, লাইমস্টোন নিঃশেষ করে নেয়া যায়। তার বিপরীতে দেশটি ওই রাজ্যের শিল্পখাত উন্নয়ন বা বিস্তারে কোনো উদ্যোগই নেয় নাই, কৃষির উন্নয়নে তারা তেমন কিছুই করে নাই। শিক্ষার হার বাড়ানোর কোনো চেষ্টা করা হয় নাই। বন্যা নিয়ন্ত্রণে ন্যূনতম কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নাই। আর অসমে দিল্লির শাসন টিকিয়ে রাখতে রাজ্য সরকার দালালের পাট নিয়েছে। এ রকম শোষণ থেকে বাঁচতে অসমীয়রা লড়াই করে যাচ্ছে।
যেভাবে গড়ে উঠলো অসমের স্বাধীনতার লড়াই
অসমের জনগণের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ের বয়স প্রায় একশ ত্রিশ বছরেরও বেশি হয়ে গেছে। মোগলরা সতেরো বার হামলা করেও যাদের পরাস্ত করতে পারে নাই; সে অসমীয়রা আঠারশ ছাব্বিশ সালের চব্বিশ ফেব্র“য়ারি ইংরেজ ও মায়ানমারের মধ্যে ‘ইয়ান্দাবু চুক্তি’র ফলেই পরাধীন হয়ে গেল। তাদের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইটা শুরু হয় তখন থেকেই। ইংরেজ চলে গেলে স্বাধীন হল ইনডিয়া, কিন্তু ঔপনিবেশিক পরাধীনতা থেকে অসমের জনগণ মুক্তি পায় নাই। অসম এখন সম্প্রসারণবাদী ইনডিয়ার অংশ। শোষণের যাতাকলে পড়ে অসমের জনগণ আজ নিঃস্বপ্রায়। সমস্ত কলকারখানা চলে গেছে শাসকদের কব্জায়। বঞ্চিত করা হয়েছে সমস্ত সরকারি চাকরি, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা হতে। তাদের বলা হতে লাগল ইনডিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি। সাতচল্লিশের পর ইনডিয়ার মূলভূমি থেকে কয়েক লাখ এবং অনেক অ-ইনডিয়ানকেও রাজ্যটিতে ঢোকানো হল আদিবাসী অসমীদের সংখ্যালঘু বানাতে। বিশেষ করে ইনডিয়া-পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাওয়ার পর যে সকল হিন্দু বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গেছে তাদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন না করে অসমে ঠেলে দেওয়া হল। যার দরুন আদিবাসী অসমীয়দের সংখ্যা এখন চল্লিশ শতাংশে নেমে এসেছে।
অসামের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য রাখা হয় নাই। পুরাপুরি চাকরিমুখি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে অসম সরকার। ফলে অসমের ভাষা, সমাজ, সাংস্কৃতিক নিজস্বতা হারিয়ে যাচ্ছে। অসমের জনগণের মধ্যে কোন্দল তৈরি করতেও তারা নানারকম চক্রান্ত চালাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপট ধরে ১৯৭৯ সালের সাত এপ্রিল সশস্ত্র বিল্পবী সংগঠন উলফা’র জন্ম নেয়। যার পুরা নাম ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ অসম। উলফা অসমকে একটা স্বাধীন-সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিশাবে দেখতে চায়। আর সেটা দেখতে হলে অসমকে ইনডিয়ার দখলদার মুক্ত করতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনো পথ তাদের কাছে আপতত খোলা নাই।
‘অখণ্ড ভারতে’র ধারণায় ভর করে এগোচ্ছে সম্প্রসারণবাদী ইনডিয়ান ইউনিয়ন
উলফার মতো সংগঠনের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্ঠায় অসমীয়রা এখন বুঝতে শিখেছে যে, সাধারণভাবে ‘ভারতীয়’ বলতে যা বুঝায় তা ইনডিয়ার শাসক শ্রেণীর ‘অখণ্ড ভারত’ তত্ত্বেরই ফসল। ইনডিয়ার মূলভূমির মধ্যে নানা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার কিম্বা সাতবোন অঞ্চলের প্রধান প্রধান জাতিগোষ্ঠীর স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব তো বটেই, পাশাপাশি নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশের পৃথক অস্তিত্বকেও হুমকির মুখে ফেলে দেয় এই অখণ্ড ভারত তত্ত্ব। অসমের স্বাধীনতাকামীরা মনে করে, রাষ্ট্র হিশাবে প্রতিষ্ঠিত হবার পরেই সাতবোন অঞ্চলসহ নানা অঞ্চলে আগ্রাসন চালানোর মধ্য দিয়েই ইনডিয়া তার স¤প্রসারণবাদী বৈশিষ্ট্যের নজির এবং নখর প্রকাশ করতে শুরু করে।
1
আর একটা কথা লেখক মহাত্মাকে বলছি, আপনি লিখেছেন "স্বাধীকার আন্দোলন"। কিন্তু স্বাধীনতা আর স্বাধীকার এক জিনিস নয়। এটা দুটো পদ। এমন কি স্বাধীনতার সাথে স্বরাজ শব্দটাও আপনি বসাতে পারবেন না। এর ব্যবধান অনেক বড়। স্বাধীনতা শব্দটার সাথে স্বার্বভৌম শব্দটাও লাগানো যায়। কিন্ত স্বাধীকার, স্বরাজ এ শব্দগুলোর সাথে সার্বভৌমত্বের কোন সম্পর্ক নাই।
আমি জানি, অসমের জনগণ স্বাধীকার আন্দোলন করছে না। করছে না স্বরাজও। তারা করছে স্বাধীনতা আন্দোলন। স্বার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য। ভারতীয় সম্প্রসারণবাদী শক্তির হাত থেকে শোষণ থেকে মুক্তি তাদের উদ্দেশ্য।
এখন পরের কথা গুলো বলি, উলফা শান্তি আলোচনায় যেতে কে? অসমের জনগণ উলফাকে সে অধিকার দেয় নাই। যে বারো হাজার অসমীয় স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে জীবন দিয়েছেন, তাদের রক্ত কে অবমূল্যায়ন করে শান্তি আলোচনায় যেতে পারে না উলফা।
মহাত্মা লেখক, অসমীয় জনগণ যখন স্বাধীনতা ও সার্বভৌত্বের জন্য লড়াই করছে, যখন উলফা নেতারা গ্রেফতার হচ্ছে তার মানে কি দাড়ায়। আপনি অতি কষ্টে উলফা গুনকীর্তনে যে সময়টা ব্যয় করেছেন, তার কোন মানে আর থাকে না।
অর্থাৎ শান্তি আলোচনা পদটার খোসাটা আলাদা করলে যা দেখা যায়, তা হল পরাজীত উলফা, মাথা নিচু করে অস্ত্র সমর্পন করছে।
হায়, অসমীয় জনগণ, হায় পৃথিবীর স্বাধীনতাকামী মানুষ!
Thursday 24 June 10
?????? ??????