যানজট নিরসন: নীতি ও পরিকল্পনা


আতাউর রহমান রাইহান
Thursday 27 May 10

জনপরিবহনে জোর দিলে যানজট এমনিতে কেটে যাবে

ঢাকা শহরে অতিমাত্রায় কেন্দ্রীভূত প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে লোকসমাগম। সমান তালে যাতায়াতের প্রয়োজন ও পরিমাণ বৃদ্ধি। অন্যদিকে ক্রমাগত বিস্তৃত নগরায়নের ফলে চলাচলের আওতাও প্রসারিত হচ্ছে দ্রুত। এমনসব যুক্ত উপাদান ও বাস্তবতা মাথায় রেখে একটি কার্যকর নগর পরবিহন পরিকল্পনা সাজানো দরকার। যাতে বেড়ে চলা প্রয়োজনকে ধারণের প্রস্তুতি এবং একইসাথে বিদ্যমান সংকটের সুরাহার সমন্বয় হয়। নইলে সবসময় সমস্যার পিছু দৌড়ে হয়রান হতে হবে। আগাম প্রস্তুতির কাজ কিছুই আগাবেনা। আর এখানে প্রধান এবং প্রথম বিবেচনায় আসতে হবে সমস্যার প্রকৃতি ও চরিত্র। যা থেকে একটি সুষ্ঠু নীতি ও প্রয়োগ সফল পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব। কিস্তু এখন পরিবহন পরিকল্পনা হয়ে দাঁড়িয়েছে যানজট নিরসন ব্যবস্থাপনা। আর যানজট নিরসন ব্যবস্থাপনা গিয়ে ঠেকেছে নতুন নতুন স্থাপনা বাড়ানোর প্রকল্পে। আবার সেই প্রকল্পে প্রাধান্য পাচ্ছে সিকি ভাগেরও কম যাত্রী পরিবহন--প্রাইভেট মটর ভেহিকল। তাই এটা আমাদের শ্রমঘণ্টা অপচয়জনিত জাতীয় উৎপাদনশীলতার ক্ষতি, জ্বালানী সাশ্রয় বা অসহনীয় দুর্ভোগ কমাতে আদতে কোনোই কাজে লাগছে না। তাহলে এ থেকে উত্তরণের পথ কি? লিখেছেন, আতাউর রহমান রাইহান

প্রথম পর্ব: ফ্লাইওভার ও সংযোগ সড়ক

রাজধানীর তীব্র যানজট দূর করতে সরকারের নেয়া প্রতিটা উদ্যোগ উল্টা যানজট বাড়িয়ে দিচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ফ্লাইওভার ও বিকল্প সড়ক তৈরি, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল চালু কিম্বা একমুখী সড়ক ও রিকশা নিয়ন্ত্রণের মতো অনেক প্রচেষ্টা শহরের জনপরিবহন ব্যবস্থাকে আরো অকার্যকর করে তুলেছে। এ মাসের শুরুতে তেমনি আরেকটি উদ্যোগ--শহরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে একটা ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করার সময় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, শহরবাসীর যাতায়াতের চরম মুশকিল আসান করতে তার সরকারের ‘নানামুখী পরিকল্পনা’ আছে যা খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের পরিবহন ব্যবস্থা যদি সাজানো হয় গাড়ি চলাচলকে প্রাধান্য দিয়ে--তবে যানজট সহ সার্বিক যাতায়াত সমস্যা বাড়তেই থাকবে।

যানজট কমানো : ছোট উদ্যোগে জট অল্প বাড়ে, মস্ত উদ্যোগে দ্বিগুণ

এই সমস্যা মোকাবিলায় এর আগেও অনেক উদ্যোগের বাস্তবায়ন করেছে কর্তৃপক্ষ। দিনের বেলা শহরে ট্রাক ও আন্তঃনগর বাসের প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। দেশের কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশনটা রাজধানী শহরের মধ্যে হওয়ায় রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে অনেক ব্যস্ত রাস্তা একটা উল্লেখযোগ্য সময় ধরে বন্ধ থাকে, ফলে ট্রেন চলাচলের সময় বদলানো হয়েছে, দূরগামী যাত্রীর সুবিধা অসুবিধার কথা খেয়াল না রেখে। বিভিন্ন রাস্তায় রিকশা চলা বন্ধ করা হয়েছে। পথচারী পারাপারের জন্য রাস্তায় যে জেব্রা ক্রসিং ছিল সেগুলা বাতিল করে ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস তৈরি করা হয়েছে। ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি চালু করা হয়েছে, সর্বশেষ সিসি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে। এসবের কোনোটাই কাজে আসে নাই। জেব্রা ক্রসিং তুলে দেয়ায় হয়তো গাড়ি চলাচল একটু সুবিধার হয়েছে, কিন্তু কিছু রাস্তায় রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়ার মতো এমনসব উদ্যোগের ফলে জনপরিবহন ব্যবস্থা শহরবাসীর জন্য আরো বেশি পেরেশানি তৈরি করেছে।

কর্তৃপক্ষ বর্তমানে আগেকার চেয়ে আরো বেশি মস্ত মস্ত সব উপায় বিবেচনা করছেন। এ মাসের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর কুড়িলে একটা ফ্লাইওভার তৈরির কাজ উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন; ঢাকা শহর যানজট মুক্ত রাখতে সরকার সংযোগ সড়ক, ফ্লাইওভার, দ্বিতল সড়ক, ভূতল সড়ক, কমিউটার রেল, ঢাকা শহরের চারদিকে রিং রোড, ওয়াটার ওয়ে সহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া না-কি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন। সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। স্যাটেলাইট টাউন নির্মাণে সরকারের আগের পরিকল্পনার কথাও তিনি আবার জানান। ঠিক এই ধরনের উদ্যোগের বিশাল ও ব্যয়বহুল পরিকল্পনার কথা বলতেন আগের সরকারগুলাও। যেগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত কেবল ফ্লাইওভার ও সংযোগ সড়কের পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ পেয়েছে। এবং তার ফলও পাওয়া গেছে নগদানগদ--ফ্লাইওভার কিম্বা সংযোগ সড়কের কাছাকাছি রাস্তাগুলাতে যানজটের মাত্রা আগের চেয়ে প্রায় দুইগুণে পৌঁছেছে। যেমন ২০০৪ সালের ২ নভেম্বর চালু হওয়া মহাখালি ফ্লাইওভার এবং সর্বশেষ চালু হওয়া বিজয় সরণি-তেজগাঁও ওভারপাস। বেশ কয়েকজন জনপরিবহন বিশেষজ্ঞ যে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই নানাভাবে সতর্ক করে আসছিলেন।

পরিকল্পনা নেয়া হয় অনুমানে ভর করে

মস্ত উদ্যোগগুলোর মধ্যে সর্বশেষ চালু হলো বিজয় সরণি-তেজগাঁও সংযোগ সড়ক। ১২২ কোটি টাকা খরচে তৈরি করা এই সড়কটি একটি ওভারপাস; বিজয় সরণি মোড় থেকে সোজা পূর্বগামী গাড়িগুলোকে নাবিস্কো মোড়ে নির্বিঘ্নে পৌঁছেদিতে এটা তৈরি করা হয়েছে, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে কমলাপুর স্টেশনে আসা রেলওয়ে সড়কের ওপর দিয়ে সড়কটি নাবিস্কোর কাছে তাজউদ্দীন আহমেদ সরণিতে গিয়ে মিলেছে। সড়কটি চালু হওয়ার পর তার কাছাকাছি সড়কগুলোতে যানজট প্রায় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গেছে। বিজয় সরণি ধরে পশ্চিম দিক থেকে বা নজরুল এভিনিউ ধরে দক্ষিণ দিক থেকে কিম্বা ওই এভিনিউ ধরে উত্তর দিক থেকে আসা গাড়িগুলো সংযোগ সড়কে উঠতে পারে। যেহেতু এই রাস্তাগুলো থেকে আলাদাভাবে ওভারপাস সড়কটিতে ওঠার সুযোগ নাই, মোড়ের ওপর দিয়ে ওই রাস্তাগুলোর সাথে ওভারপাসটি যুক্ত নয়, ফলে সব গাড়িগুলাকে তাই মোড় পার হয়ে সংযোগ সড়কে উঠতে হয়। যার ফলে যেদিকের রাস্তাই ওভারপাসে যাওয়ার জন্য খোলা থাকুক না কেন, ওই সময় বাকি কমপক্ষে দুটা রাস্তা বন্ধ রাখতে হয়। আর ওভারপাস থেকে গাড়ি নামার পথে সবুজ বাতি থাকলে বাকি সব রাস্তায়ই লাল বাতি থাকে। যার ফলে ওই মোড় থেকে চন্দ্রিমা উদ্যান- ফার্মগেট- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মোড় পর্যন্ত যানজট আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ব্যস্ত সময়ে যান চলাচল প্রায় বন্ধই থাকে। এই প্রতিবেদকের পরপর তিনদিন বিকালে নাবিস্কো থেকে সিএনজি স্কুটারে ওভারপাসটি পার হতে সময় লেগেছে গড়ে আটচল্লিশ মিনিট। যার মানে হচ্ছে, যেসব গাড়ি সড়কটি যারা ব্যবহার করে সেগুলো দীর্ঘ সময় জটে আটকে থাকে অন্যদিকে সড়কটির কারণে শহরের যানজটের বিস্তার আরো বেড়েছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমের কাছে যে তথ্য দিয়েছেন, তা জনপরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত অদক্ষতার নজির। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা--সন্তোষ কুমার রায় জানিয়েছেন যে কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই সড়কটি তৈরি করা হয়েছে। জনাব সন্তোষ অধিদপ্তরটির পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বিভাগের নির্বাহী পরিচালক। তিনি সম্প্রতি একটি বাংলা দৈনিককে বলেন যে, ‘যানজট নিরসন হবে এ অনুমান থেকেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ২০০৮ সালে এ সংযোগ সড়কটি নির্মাণে হাত দেয়।’ জনাব সন্তোষ যানজট সহ সামগ্রিক জনপরিবহন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞও বটে। দৈনিক কালের কণ্ঠের সাথে সাক্ষাতকারে তিনি বলেন ‘ওভারপাসসহ নির্মিত সংযোগ সড়কটি যানজট নিরসনে কোনো ভূমিকাই রাখবে না।’

যানজট নিজে কোনো সমস্যা নয়, সমস্যার ফল মাত্র

ফ্লাইওভার কিম্বা সংযোগসড়কের মতো এই যে উদ্যোগগুলোর কারণে যানজট আরো তীব্র হচ্ছে--এসব প্রকল্পই একটি ব্যাপক পরিকল্পনার-- ২০০৫ সালে নেয়া স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্লান বা এসটিপি’র অংশ। এসটিপির নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নে কোনো উপযোগিতা যাচাই না করা, যথাযথভাবে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা এবং কার্যকারিতা নির্ধারণ না করা ও নকশা-কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রায় সবগুলো বাস্তবায়িত প্রকল্পই উল্টা যানজট বাড়াচ্ছে। যেমন এসটিপির আওতায় বর্তমানে চলমান বেগুনবাড়ি সংযোগসড়ক প্রকল্প। প্রকল্পটি শেষ হলে পর ঢাকার যানজট সমস্যায় যে নতুন মাত্রা যোগ করবে, তা হলো জট আরো কিছুটা বাড়াবে। একদিকে নজরুল এভিনিউর দক্ষিণ প্রান্তে--শাহবাগ-বাংলামোটর-সোনারগাঁ এলাকায় এক কিলোমিটারের মতো রাস্তায় আরো একটা সিগন্যাল বাড়াবে, অতটুকু রাস্তায় এখনি পাঁচটা সিগন্যাল আছে। সংযোগ সড়কের অপর প্রান্তের বেলায়ও একই অবস্থা।

এসটিপির প্রকল্পগুলোর মধ্যে শুধু একটা প্রকল্পই যানজট বাড়ায় নাই--২০০৫ সালে চালু হওয়া খিলগাঁও ফ্লাইওভার। ওই এলাকায় গাড়ির চলাচলের গতিমুখের সাথে নকশা যথাযথ হওয়ার কারণে অন্য কোনো রাস্তায় যানজট বাঁধানো ছাড়াই গাড়ি পার হতে পারছে ফ্লাইওভারে। কিন্তু তাতে করে তো জনপরিবহনের মূল সমস্যার বিন্দু মাত্র সুরাহা হয় নাই। যেসব গাড়ি এই ফ্লাইওভার বা সংযোগ সড়ক ব্যবহার করতে পারে সেগুলোর প্রায় সবই ব্যক্তিগত গাড়ি। অর্ধেকের অনেক বেশি নাগরিককে ফ্লাইওভারের দুই প্রান্তেও যাত্রীতে ঠাসা পাবলিক বাসে ওঠার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়ার ‘টিকিট বাসে’ও যাত্রীতে ঠাসাঠাসি। পর্যাপ্ত বড় বাস নেই। বাসস্টপে নেমে তারপর নিজের গন্তব্যে বাসায় বা অফিসে পৌঁছানোর জন্য কোনো যানবাহন নাই। ঢাকায় ‘ট্যাক্সি সার্ভিস’ নাই বললেই চলে; না সিএনজি স্কুটার না ক্যাব, কোনোটিই যাত্রীর সংখ্যার তুলনায় যথেষ্ট না, ভাড়াও অধিকাংশ নাগরিকের নাগালে নাই। আর যা আছে তা-ও ট্যাক্সি হিশাবে--যাত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী ও নির্ধারিত ভাড়ায়--চলে না। কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা নাই। চলছে চরম নৈরাজ্য। রাজধানীতে ট্যাক্সি সার্ভিস দেয়া যানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে যে প্রাচীন, সেই রিকশা এখন ঢাকার অধিকাংশ ব্যস্ত রাস্তায় নিষিদ্ধ। বাইসাইকেল চালানো অনিরাপদ, আলাদা লেন নাই সাইকেলের জন্য। হাঁটাপথ মানে ফুটপাথও নাই হাঁটার মতো।

শহরের অর্ধেকের বেশি নাগরিকের যাতায়াত ও যাতায়াতের যেসব উপায় ও মাধ্যম থাকতে পারে; সেই পাবলিক বাস-ট্যাক্সি সার্ভিস-বাইসাইকেল লেন-ফুটপাথ, এই সবই ‘নাই’ এর তালিকায়। রাজধানীর পরিবহন সমস্যা দূর করতে এখন চালু থাকা এসটিপি এসব বিষয়ে কোনো নজর দেয় নাই। ওই পরিকল্পনাটি কার্যত গাড়ি এবং বিশেষত ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দিয়ে করা হয়েছে। শহরের মধ্যে গাড়ি চলাচল আরো গতিবান ও বাঁধাহীন করা যায়--সে লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগের পরিকল্পনা করা হয়েছে এসটিপিতে। জটে আটকে থাকা রাস্তায় তাকালে দেখা যায় মাঝখানে দূরে দূরে যাত্রীতে ঠাসাঠাসি কয়েকটা পাবলিক বাস আর যানবাহনের বেশিরভাগই ব্যক্তিগত গাড়ি। যেই গাড়িকে প্রাধান্য দিয়ে--হাঁটাপথ, বাইসাইকেল, স্বল্পমূল্যের ট্যাক্সি সার্ভিস (যেমন রিকশা) বা পাবলিক-বাস ইত্যাদি বাদ দিয়ে যেই সব প্রকল্প নেয়া হচ্ছে সেই গাড়িই যানজটের কারণ এবং যানজটের শিকার। ফলে রাজধানী শহরের অধিবাসীরা পরিবহনের ক্ষেত্রে মূলত যেই সমস্যায় ভুগছে সেই সমস্যার--বেশিরভাগ নাগরিকের পরিবহন সমস্যার--জনপরিবহনের সমস্যার সুরাহা তো হচ্ছেই না, উল্টা জনপরিবহেনর অভাবে একদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে অন্যদিকে যানজট বাড়ছে। কিন্তু কেন এমনতরো হচ্ছে, আসল গলদ কোথায় সেইদিকে নজর ফেরাব আগামী কিস্তিতে।

View: 6928 Posts: 5 Post comments

খুব ভাল। এই ধরণের লেখা পাঠকদের আকৃষ্ট করবে। যানজট নিরসনের জন্য একটা প্রস্তাব তোলা যায় সেটা হচ্ছে, স্কুলগুলোতে একটি শিশুর জন্যে একটি গাড়ী ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। স্কুলের বাস চালু করা খুব দরকার।

গাড়ী-বান্ধব জনপরিবহনের জায়গা থেকে সরে আসতে হবে

@ ফরিদা আখতার আপনার প্রস্তাব ভালো। কিন্তু এটা কিছুটা হলেও 'যানজট বন্ধ করা'র মতো বিষয়। একটা শিশুর জন্য একটা গাড়ী ব্যবহার বন্ধ করার মতো বিষয়। জনপরিবহন তদারকির জায়গা থেকে নগর কর্তৃপক্ষের পক্ষে সব স্কুলের নিজস্ব গাড়ি নিশ্চিত করার কাজ করা সুবিধাজনক না। আমার মতে যেটা করতে হবে তা হলো, নগরির মধ্যে পুরো জনপরিবহনই গাড়ী-বান্ধব জায়গা থেকে সরে আসতে হবে, আরো বিশেষত ব্যাক্তিগত গাড়ি। তার একটা অংশ অবশ্যই, নগরির মধ্যে ব্যক্তিগত পার্কিং এর সুযোগ কমিয়ে আনতে হবে। রাস্তার ওপর গাড়ী পার্কিং যদি বন্ধ করে দেয়া হয়, এবং যেকোনো অনুমোদিত পার্কিং প্লেসে যদি চড়া ফি নেয়া হয় তবে, শহরে যেখানে সেখানে পার্কিং তো বটেই- প্রাইভেট স্পেস ছাড়া পার্কিং ই বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য। তারপরও কেউ যদি ওই কড়াকড়ি এবং বেশি খরচে কম সুযোগটা নিতে চায়, ব্যক্তিগত গাড়ি শহরের মধ্যে ব্যবহার করতে চায়, সেই সুযোগ থাকা উচিত।

রাস্তার মোড়ে বিকল্প ব্যবস্থা

যানজটের বড় একটা কারণ যেহেতু রাস্তার মোড়ের গাড়ী ব্যবস্থাপনা, তাই গুরুত্বপূণর্ মোড়ে ছোট ছোট ফ্লাইওভার নিরমানের বিষয়টি ভাবা যেতে পারে। আর ঢাকা ছাড়াও অন্যান্য শহরের দিকেও নজর দিতে হবে।

@ মুসা

আপনি 'মোড়ের যানজট ব্যবস্থা' বলে কি বোঝালেন সে বিষয়ে ঠিক পরিস্কার হওয়া গেল না, একটু বিস্তারিত করবেন দয়া করে!

ঢাকা পৃথিবীর খারাপতম দ্বিতীয় বাসযোগ্য শহর 10 june 2010 মি রায়হানের সাথে আমি আরো কিছু কথা যোগ করতে চাই। তা হলো--------------------------- খবরটি হলো বিশ্ববিখ্যাত ইকোনোমিষ্ট পত্রিকার। প্রতিবছরের মতো তারা এবারো পুরো পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে বাসযোগ্য শহরগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সারা বছর জুড়ে তারা তথ্য উপাত্ত যোগাঢ় করে তাদের গবেষণা দল একটি তালিকা বের করেছে যেখানে বিশ্বের সবচে ভালো বাসযোগ্য শহরগুলোকে দেখানো হয়েছে। সেই তালিকায় প্রথম রয়েছে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহর। সারা পৃথিবীর প্রথম দশটি বাসযোগ্য শহরের মধ্যে ভ্যাঙ্কুভার এক নম্বরে। গত বছরও তারা প্রথম স্থানেই ছিল। একটি শহরের ষ্ট্যাবিলিটি, স্বাস্থ্য সেবা, সংস্কৃতি, পরিবেশ, শিক্ষা, ইনফ্রাষ্ট্রাকচার, নিরাপত্তা ইত্যাদি ত্রিশটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যে নম্বর দেয়া হয়েছে তাতে ভ্যাঙ্কুভার পেয়েছে শতকরা ৯৮ ভাগ। মোট ১৪০টি শহরের ভেতর যে দশটি শহর সবচে বেশি বাসযোগ্য তারা হলো ১. ভ্যাঙ্কুভার (কানাডা) ২. ভিয়েনা (অষ্ট্রিয়া) ৩. মেলবোর্ন (অষ্ট্রেলিয়া) ৪. টরোন্টো (কানাডা) ৫. ক্যালগ্যারী (কানাডা) ৬. হেলসিঙ্কি (ফিনল্যান্ড) ৭. সিডনী (অষ্ট্রেলিয়া) ৮. পার্থ (অষ্ট্রেলিয়া) ৯. অ্যাডেলাইড (অষ্ট্রেলিয়া) এবং ১০. অকল্যান্ড (অষ্ট্রেলিয়া)। পুজিবাদ নির্ভর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনও শহর এই তালিকায় দশের ভেতর নেই। লস এঞ্জেলেসের অবস্থান ৪৭তম, নিউইয়র্কের অবস্থান ৫৬তম এবং লন্ডনের অবস্থান ৫৪তম। সারা পৃথিবীর প্রথম দশটি বাসযোগ্য শহরের মধ্যে ভ্যাঙ্কুভার এক নম্বরে। ভ্যাঙ্কুভার এমন সুন্দর একটি শহর যার প্রেমে না পড়ে কোনও উপায় নেই। এবারে বসবাস যোগ্যতার তালিকায় সবচে খারাপ শহরগুলোর নাম দেখা যাক - ১. হারায়ে (জিম্বাবুয়ে) ২. ঢাকা (বাংলাদেশ) ৩. আলজিয়ার্স (আলজেরিয়া), ৪. পোর্ট মোরেসবি (পাপুয়া নিউ গিনি) ৫. লাগোস (নাইজেরিয়া) ৬. করাচী (পাকিস্তান) ৭. ডাউয়ালা (ক্যামেরুন) ৮. কাঠমুন্ডু (নেপাল) ৯. কলোম্বো (শ্রীলংকা) এবং ১০. ডাকার (সেনেগাল)। এর অর্থ হলো, ঢাকা শহর হলো নীচের দিক থেকে দ্বিতীয়।
Home
EMAIL
PASSWORD