প্রতিরোধের কবিতা: তওফীক জিয়াদ


তরজমা: শাহাদাৎ তৈয়ব
Sunday 13 September 09

তওফীক জিয়াদ কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। জন্ম ১৯৩২ সালে ফিলিস্তিনের নাছেরায়। তিনি তার শিক্ষাকাল সমাপ্ত করেন নাসেরায় এবং রাশিয়ায়। রুশ সাহিত্যে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য তিনি সোভিয়েত রাশিয়া গমন করেন। দীর্ঘকাল ব্যাপী তিনি ফিলিস্তিনের অধিকৃত ভূমিতে রাজনৈতিক জীবন যাপন করেন। এবং তিনি তার জনগোষ্ঠীর অধিকারের লড়াইয়ে আমৃত্যু ঘনিষ্ঠভাবে সক্রিয় ছিলেন। শৈশবেই জিয়াদ ইসরাইলী কমিউনিস্ট পার্টি রাকাহ’র সদস্য হন। রাকাহ’র প্রতিনিধি হিশাবে বহুবার তিনি নির্বাচিত হয়ে ইসরাইলী নেসেটের সদস্য পদ লাভ করেন। এমনকি তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দীর্ঘ সময় নাসেরার নগর প্রধান (মেয়র) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি প্রচুর রুশ সাহিত্য এবং নাজিম হিকমতের রচনাবলী আরবী ভাষায় তরজমা করেন। সৃজনশীল ও বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গল্পসহ তার বিপুল রচনা। বলা যায় তার সমস্ত রচনাই রাজনীতি, স্বাধীনতা, লড়াই ও প্রতিরোধ সম্পর্কিত। ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত তার “আশাদ্দু আলা আইয়াদীকুম” কাব্য গ্রন্থকে ইসরাইল বিরোধী ফিলিস্তিনীদের লড়াইয়ের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিশাবে গণ্য করা হয়। এছাড়া তার অধিকাংশ কাসীদাই গীতিময়। তিনি মৃত্যু বরণ করেন ১৯৯৪ সালে। এখানে তার কিছু কবিতার বাংলা তরজমা দেওয়া হল সেই দ্যুতিময় কাব্যস্বাধ আস্বাধানের জন্য।

যতোই দীর্ঘ হয়

ততোই কাছাকাছি।

এক শহীদ কঁন্যা শিশু

এই সেই শিশু, যার কপাল জুড়ে আছে

পাঁচটি বুলেট

আছে সূর্য

শাহাদাৎ

আছে তার দুচোখ জুড়ে রক্তলাল ভারুই পাখি

কপোল জুড়ে অসংখ্য মানুষ

সোনার পদ্মফুল হয়ে ঝরে পড়ে

নগরীর ভেতরে বয়ে যাওয়া

উদিয়মান মুক্তির রাজপথে।

এখন অলিগলি অসংখ্য সরুপথের ভেতর দিয়ে

উদিয়মান রাজপথ।

এখন সুরক্ষিত দুর্গের ভেতর থেকে

ফেটে পড়ছে বিজয়ের ধ্বনি-

অস্তিত্ত্ব....ক্ষমতা।

সুতরাং হৃদয়ের ভেতরে সে এক তীব্র ধ্বনি।

গলা জুড়ে সে এক নন্দিত মালা।

সেই এখন বইয়ের শিরোনাম

সেই

এক ইতিহাস

এক জন্ম।

 

বৃষ্টি নেমে এসো

বৃষ্টি নেমে এসো

নেমে এসো বৃক্ষের উপর

ফসলরা শুকিয়ে গেছে, পশুদের স্তনরা মরে গেছে

চোখেরা শুকিয়ে গেছে, সুতরাং হে বৃষ্টি নেমে এসো

চাঁদ হে উদিত হও

উদিত হও বৃক্ষের উপর

ভারুই পাখির ডানা বেয়ে

সময়রা বয়ে গেছে। বয়ে গেছে তীব্র বেগে অনেক দূর।

আর আমাদের রাত্রিরা বড় বেশী ভারি হয়ে গেছে।

দুশ্চিন্তা আর আমাদের জুলুম ও কষ্টের ভার কঠিন হয়ে পড়েছে।

পিপাসা, আমরা এবং পথেরা বড় দীর্ঘ হয়ে গেছে।

আমাদের মুখ লালাহীন শুষ্ক হয়ে গেছে।

তবু এতোটুকু ধৈর্য হৃদয়ের ভেতর

অগ্নিশিখার মতো জ্বলে আছে অনির্বান।

নিরাপত্তারা..... এক নির্যাতন..... চিনির মতো মিষ্টি!

বিপ্লবী গরীবদের পথ

এবং এ্যালিটদের মন

বুঝি এখন আমাদের সর্বশেষ মুক্তির আশ্রয়।

সুতরাং হে চাঁদ জাগ্রত হও

সুতরাং বৃষ্টি হে

নেমে এসো

নেমে এসো

হে

বৃষ্টি।

 

তারা আমাকে ঝুলিয়ে রেখেছে ক্রুশের উপর

তারা আমাদেরকে ঝুলিয়ে রেখেছে ক্রুশের উপর

যাতে আমরা ফিরে আসি

এই উল্টানো পৃথিবীই

শেষ পৃথিবী নয়

আমরা গোলাম নই

সুতরাং মুছে নাও অশ্র“

নিহতদেরকে কবর দাও

আবার নতুন করে জেগে ওঠো

হে মজলুম মানুষ

তুমিই পৃথিবী

তুমিই একমাত্র সত্য ও কল্যাণের উৎসধারা

তুমিই ইতিহাস

তুমিই এই অস্তিত্ত্বের জগতে

হাস্যোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ

অতপর এসো

হাতে হাতে জড়ো হই

আগুনের পথ ধরে ছুটে চলি

মুক্তির আগামী

যতোই দীর্ঘ হয়

View: 3172 Posts: 0 Post comments

Home
EMAIL
PASSWORD