প্রতিরোধের কবিতা: সুলাইমান দাগাশ
সুলাইমান দাগাশ এর জন্ম ১৯৫২ সালে ফিলিস্তিনের গ্যালীলির পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের আল মাগার গ্রামে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে দাগাশ শ্রম ব্যবস্থাপনা ও লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে সম্মান কোর্স সমাপ্ত করেন। স্নাতকোত্তর কোর্স সম্পন্ন করেন বৃটেনে। শৈশব থেকেই তিনি রাজনৈতিকভাবে বেড়ে ওঠেন। ১৯৮৯ সালে সমাজতান্ত্রিক প্রগতিশীল পার্টির প্রতিষ্ঠার পর তিনি দলের সভাপতি নিযুক্ত হন। সত্তরের দশকে ক্রমাগত প্রতিরোধের কবিতা লেখে তিনি বিপুলভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে তাকে বেশ কয়েকবার কারাগারে যেতে হয়। প্রতিরোধ তার মুখ্য বিষয় হয়ে উঠলেও তিনি বিচিত্র বিষয়ে কবিতাকে হাজির করেন। কবিতার স্বীকৃতি স্বরূপ সুলাইমান দাগাশ ফিলিস্তিনের অন্যতম রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘সাইফু কানআন’ সহ আরো অনেক সম্মাননা পদক লাভ করেন।
সে চাঁদ নিয়ে আসবে
সে অচিরেই আসবে
চাঁদ নিয়ে
ভেজা রুমাল নিয়ে
বৃক্ষের ডাল নিয়ে
হায় সন্তানহারা চড়–ই
হায় ভোরের স্বপ্ন দেখা পদ্ম যাকে বলা হয়
সে আত্মহত্ম করেছে
হৃদয়ের ডালপালায় পল্লবিত হয়ে ওঠে প্রেম
যেখানে জখমের পাশে
বেড়ে উঠেছে ফুলকানন...
তবে আমাকে ক্ষমা করো...
যদি আমি চন্দ্রচোখের পাতার উপর রুমাল ঝুলিয়ে দেই
কারণ বৃক্ষের পাতারও রয়েছে
অপেক্ষমান বসন্তের হাজার প্রতিশ্র“তি...
সে আসবে শীঘ্রই
চাঁদ নিয়ে
ভেজা রুমাল নিয়ে
বৃক্ষে ডাল নিয়ে
সুতরাং তোমার দুচোখে খুলে দাও
তাজা আর পাকা খেজুরের দিগন্ত
আমাকে ছেড়ে দাও আমি পান করবো ঐশ্বরিক প্রভাত
আমি মুক্ত হবো রাত্রি থেকে
ভ্রমণের ক্লান্তি থেকে
আমরা কী আশা করি
যখন নরম বৃষ্টির ভেতর
জ্বলে ওঠে রঙধনু
দেখো সে অচিরেই আসবে
চাঁদ নিয়ে
ভেজা রুমাল নিয়ে
বৃক্ষের ডাল নিয়ে
হায় সন্তানহারা চড়–ই
হায় নিয়তির শত্রতাগ্রস্থ ভোর
হৃদয় আমার কম্পমান হায়ফায়
হৃদয় আমার কম্পমান ইয়াফায়
হৃদয় আমার কম্পমান এই মাটিতে, জলপাইতে, সবুজ ঘাসে।
নদীর মতো কম্পমান আমার সংগীত
যখন আমার গন্ডদেশ অতিক্রম করে পাথর
হৃদয় আমার কম্পমান সুতরাং হৃদয়কে সীমাবদ্ধ করো না।
স্বদেশই কেবল সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।
অচিরেই সে আসবে চাঁদ নিয়ে
সুতরাং আমাকে ক্ষমা করো
যদি আমি একটু দেরি করে ফেলি
যদি আমি অনেক দেরি করে ফেলি
তারা লুন্ঠন করে নিয়ে যাবে আমার চাঁদ!!
কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি
কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি
আমি ভালোবাসি আমার বন্দিত্ব
আমি ঘোষণা করি: আমি জীবনকে ভালোবাসি
কারণ আমি তোমাকে চাই
আমার কপালের উপর জখম ঝলমল করে
অগ্নিশীখাময় পূর্ণ চাঁদের মতো
কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি
আমার অক্ষিপলকের উপর এখন আকাশ বিস্তৃত হয়ে যায়
পাঁজরের উপর ঈশ্বর কেঁপে ওঠে
আমি অসম্ভবে ঝঁপিয়ে পড়ি
ডানদিকে যখন তারা সমুদ্রকে তোমার কাছে আসবার আমার পথ করে দেয়
আমি তার ব্যাপ্তি গুটিয়ে অতিক্রম করে যাই।
কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি
সুতরাং আমি পানিপথ পার হয়ে
অচিরেই আসছি !!
হত্যাযজ্ঞ
নিহত লাশের পর ঝরে পড়ছে নিহত লাশ
যেমন ঝরে পড়ে খেজুরের পর খেজুর
লাশ ঝরে পড়ছে আর শাহাদাতের জন্য এ যেনো বিশেষ লগ্ন
আমরা যেমন গুণে গুণে দেখি ঋতু এবং সময়
এবং শাহাদাতের জন্য রয়েছে বিশেষ পাথর
গভীর তিক্ততা, অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, আগমন
তাই বুঝি আমরা ফিরে আসছি আমাদের বাড়ির পাথরগুলোর কাছে
আমরা আবার ধ্বংসাবশেষগুলোকে গুছিয়ে নিচ্ছি
লাশ ঝরে পড়ছে, ইব্রাহীমের জন্ম হচ্ছে আর সমস্ত অসম্ভব সম্ভব হয়ে যাচ্ছে
যেনো ইব্রাহীম প্রভাতের পদ্ম ফিরিয়ে আনছেন
যেনো ইব্রাহীম অশ্ব-তরবারী আবার ধারালেন
লাশের পর লাশ ঝরে পড়ছে
যেনো খেজুরের পর খেজুর ঝরে পড়ছে
এবং গ্যালীলির বন্দুকের স্তুপের উপর
ফেটে পড়ছে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ
আকস্মিক মৃত্যুরা ছড়িয়ে পড়ছে
সুতরাং হায় বুলেট, হায় অচেতন
তবু ঝরে পড়ছে বুলেট, বেরিয়ে আসছে মরিয়মের গর্ভ থেকে
ইব্রাহীম
যেনো তিনি কবুতরের ভাষায়, পাপীয়ার কন্ঠে
শহীদদের বলবেন
আর কটি নক্ষত্র ঝরে পড়বে অস্তাচলে
শাহাদাতের পথে
আর কটি নক্ষত্র হাসির প্রদীপ জ্বালাবে
নিহত লাশের ঠোঁটের পর
তহে এ মাটির দেহে জীবন্তরা তোমাদের জন্য সুসমাচার!
দখলকারীরা শীঘ্রই মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে.......
স্মৃতি
আমি স্মৃতিবিহীন ফিরে আসবো
তোমার কাছে
জেসমিন ফুলে ভরে দিবো আমার বুক
আর আমার বাহুর উপর ঘুমিয়ে যাবে ভারুই পাখি
আমিই কেবল ফিরে আসবো
তোমার কাছে স্মৃতিবিহীন
আমি এক বিনিদ্র কামনা
আমি প্রবল বৃষ্টির জন্য আঙ্গুরের তৃষ্ণা
সুতরাং আমাকে বঞ্চিত করো না
হে প্রবল প্রেমময়
তুমি আমার জন্য হয়ে যাও
পৃথিবী
উদ্যান
তুমি আমার জন্য হয়ে যাও
কবর
স্মৃতিবিহীন ফিরে আসবো আমি
তোমার কাছে
আমি জেসমিনের যন্ত্রণাময় আসক্তি
দেশান্তরিতদের উদ্দিপ্ত প্রেম
আমি কবুতরের কাছে একটু খুঁটি একটু খিলানের প্রতিশ্রতি পূরণকারীু
আমি নিয়ে আসবো তোমার জন্য
পূর্ণ চাঁদ
সুতরাং আমার জন্য অপেক্ষা করো
আমি আসবো চাঁদনী রাত নিয়ে
স্মৃতিবিহীন
আমি ফিরে আসবো তোমার কাছে
যখন আমার মুখ দিয়ে রুদ্ধ করা হবে তোমাদের সেতু
আমাকে ক্ষমা করো
আমার সমস্ত রক্তই হবে.... সেই স্মৃতি
গ্যালীলির গান
গ্যালীলিতে
ঝরছে বরফ বয়ে যাচ্ছে প্রবল ঝড়
এবং কেবল গ্যালীলি জুড়ে
শুকনো জখমগুলো
দীর্ঘ রাস্তার পর দেয়াশলাই আর লবন চেটে খাচ্ছে।
যেখানে ক্ষেতের পেটে মাঠের গর্ভে শিশুদের জন্ম
তারাই এখন বহন করে
গোলাপ, গম, যব
খেজুরের ডাল
যারা বিনিদ্র রাত কাটে
তারা সন্ধ্যাকে ভয় করে না
তবু প্রাচীন কল্প উপাখ্যান দাফন করে দাও
তবেই দেখবে
পরাজয়ের কবরের উপর
বিপ্লবী প্রজন্মের দোলনা
তবুওতো বরফ ঝরে পড়ে
ঝড় শক্তিশালী হয়
এবং শুকনো জখমরা
গ্যালীলির দীর্ঘ রাস্তার পর চেটে খায়
দিয়াশলাই আর লবন
এবং অনবরত জখমেরা
সুর তোলে
গ্যালীলির।
এবং গান ধরে
এবং গান করে
এবং গান গায়।
Available tags : হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র, ভারত, ভাষা, সংস্কৃতি, মারাঠি, গুজরাটি, মালয়ালি, অসমীয়া, বিহারী, সিকিমি, কাশ্মীরি
Good
chaliye jan.... ভাল লাগল ....