প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ে: বেনিয়াবৃত্তি বনাম জাতীয় সার্বভৌমত্বের পররাষ্ট্রনীতি
ট্রানজিট থেকে কানেক্টিভিটি : ইনডিয়ার প্রয়োজনের রকমফের (প্রথমপর্ব)
ট্রানজিট: বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বনাম ইনডিয়ার অর্থনীতিক-মুলা (দ্বিতীয়পর্ব)
কোনো রাষ্ট্রই তার আভ্যন্তরীণ কোনো সুযোগ সুবিধা অপরের সাথে বিনিময়ের বিষয়টাকে প্রধানত টাকা পয়সায় ভাড়া খাটানোর মামলা আকারে দেখতে পারে না। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রই নিজস্ব এই সুবিধাকে কৌশলগত সম্পদ বিবেচনা করে থাকে। সেটা আর দশটা বাজারি পণ্যের মতো কেবল দরদামে বিকোবার জিনিষ নয়। সেখানে অবধারিতভাবেই রাজনৈতিক উপাদানই মুখ্য নিয়ামক। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই সেই কৌশলগত সুবিধা বিনিময়ের জন্য নির্ধারক। সেখানে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বিবেচনা হবে -যা তার পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে প্রতিফলিত- রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও স্বার্থের ভারসাম্যে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করা। বিশেষত, সেইসব বিষয়ে যেখানে অন্যের প্রয়োজনের তাগিদ থেকে পারস্পরিক সুবিধাদি বিনিময়ের প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে। সুতরাং বিনিময়টা হতে হবে পরস্পরকে রাজনৈতিক সুবিধা প্রধানের। উল্টো বরং বাংলাদেশ সরকার এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রয়োজনকে নিজের দায় মেটানোর দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করছে যেন! ধারাবাহিক প্রতিবেদনের শেষপর্ব পড়ুন।--সম্পদকীয়।
এসকাপ প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতীয় সংসদ বা অন্য কোনো ফোরামে আলোচনা না করেই সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশকে এসকাপের পরিকল্পিত এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আন্ত:মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সিদ্ধান্তটি নেয়ার পর যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন, এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হলে বাংলাদেশ বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে। মন্ত্রী সেই সঙ্গে বলেছেন, অনেক আগেই বাংলাদেশকে এতে যুক্ত করা দরকার ছিল। কিন্তু এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করে জোটসরকার রাষ্ট্রের অনেক বড় ক্ষতি করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার এখন সে ক্ষতিই পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার জন্য সরকারের ব্যতিব্যস্ততা এবং মাত্র সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার জন্য আদিখ্যেতা দেখে সঙ্গত কারণে প্রশ্ন ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন এসেছে রাজনৈতিক সত্তা ও বাণিজ্যিক কারবারের ভেদরেখা বজায় রেখে এই সমস্ত বিষয়ে একটি সম্মানজনক জাতীয় অবস্থান তৈরির প্রয়োজ কি বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছে, না কি ফেলতে চাইছে? বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থান কি নিছক রাস্তা ভাড়া খাটাবার অধিক কিছু হয়ে উঠতে পারে নি? একটা স্বাধীন রাষ্ট্র বছরে মাত্র ৫০০ মিলিয়ন ডলার বা সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার হিসাবের খাতায় যদি অনেক অমীমাংসিত ও (নিত্যনৈমিত্যিক সীমান্ত হত্যাকাণ্ডে নিয়োজিত) বৈরী সম্পর্কের আরেকটা রাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত সুবিধা বিনিময়ের যাবতীয় পাঠ চুকিয়ে ফেলে তাহলে তাদেরকে ট্রাকভাড়ায় ব্যস্ত পরিবহন মালিক সমিতির অধিক কিছু ভাবা অসম্ভব।
সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের ‘অনেক বড় ক্ষতি' করার অভিযোগ তোলা হলেও কৌশলগত সমস্যা, জাতীয় নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের সুরাহা না হওয়ায় দাবিতে চার দলীয় জোট সরকার বাংলাদেশকে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত করতে সম্মত হয় নি। কারণ, প্রকারন্তরে ইনডিয়ার ইচ্ছামাফিক বর্তমান রুটের বাস্তবায়ন করা হলে, পরাশক্তি হতে উন্মুখ ইনডিয়ার সদূরপ্রসারি সামরিক পারিকল্পনার নিরিখে বাংলাদেশের স্বাধীন অবস্থান ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো সমূহ আশংকা দেখা দেবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আর নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো অবস্থান বজায় থাকবে না। বাংলাদেশ চারটি টুকরো হয়ে যাবে। তাছাড়া চারটি মহাসড়কের তিনটিই রয়েছে ভারত অভিমুখে। এগুলো দিয়ে ভারতীয়রা এবং তাদের যানবাহন ও পণ্যসামগ্রী যাতায়াত করবে। সেক্ষেত্রে তাদের অবাধ যাতায়াত অবারিত থাকার ফলে বাংলাদেশের সার্বভৌম সীমা খুব সহজেই তাদের চারণক্ষেত্রের অধীনস্ত থাকবে। যখন ইচ্ছা এই সুযোগকে সামরিক প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারবে। সেটা কার্যকরভাবে মোকাবেলার মতো পরিস্থিতি ও দক্ষতা বাংলাদেশের আছে কি? পৃথিবীর অনেক দেশই এ ধরনের হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। কিন্তু কোনো দেশকেই বাংলাদেশের মতো চার-চারটি টুকরো করে ফেলা হয় নি। বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা থেকে তামাবিল পর্যন্ত মহাসড়কের দিকে লক্ষ্য করলে এ সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এর পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য আসলে ভারতের জন্য বাংলাদেশের জমিন ও সড়ক-মহাসড়ক উন্মুক্ত করিয়ে নেয়া। সোজা কথায়, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতকে করিডোর পাইয়ে দেয়া। এই করিডোর পাওয়ার জন্যই ভারত বহুদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এতদিন সোজাসুজি দেশটি ট্রানজিটের জন্য চাপাচাপি, দেনদরবার জানিয়েছে, এবার এসকাপের মাধ্যমে নিচ্ছে এশিয়ান হাইওয়ের আড়াল। কিন্তু দুটো প্রস্তাবনার মধ্যেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বার্থ ও নিরাপত্তার বিষয়টিকে আমলে নিয়ে বাস্তবসম্মত বিনিময়ের প্রশ্ন আলোচিত হয় নি। বাংলাদেশ শুধু যেন ভাড়া দেবার মতো একখণ্ডভূমির অধিক কিছু নয়। পারস্পরিক আস্থাবৃদ্ধি ও মর্যাদার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্যোগের ছিটেফোটাও এর মধ্যে নাই। অনেকটা জবরদস্তি ও হুমকি ধামকি দিয়েই এইগুলো তারা আদায় করে নিতে চাইছে। ভারতের প্রভাবে সাথে যুক্ত হয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও (এডিবি, বিশ্বব্যাংক ...ইত্যাদি), যা তাদের কাজের আওতার মধ্যে পড়ে না। কূটনীতিক ও বহুপক্ষীয় ফোরামে আমরা নিজেদের অবস্থান ও স্বার্থ তুলে ধরতে ব্যর্থ হওয়ার এও এক নজির।
প্রকৃত এশিয়ান হাইওয়ে হিসেবে এসকাপের পরিকল্পনায় যে মহাসড়কটি চিহ্নিত আছে সেটা জাপান থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান ও তুরস্ক হয়ে ইওরোপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এর ভিত্তিতে চারদলীয় জোটসরকারের দাবি ছিল, শের শাহর আমলে তৈরি গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড ধরে দক্ষিণের আরাকান রোড (শাহ সুজা রোড) ও নাফ নদী হয়ে এশিয়ান হাইওয়ে মিয়ানমারের মংড়ু শহরে পৌঁছাবে এবং মংড়ু ও আকিয়াব থেকে রাজধানী ইয়াংগুন হয়ে ক্রমান্বয়ে কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, ব্যাংককের মধ্য দিয়ে চীন, লাউস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামকে যুক্ত করবে। এসকাপের মূল পরিকল্পনাতেও সেটাই ছিল। কিন্তু ভারতের প্ররোচনায় ১৯৯৩ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লীতে অনুষ্ঠিত এসকাপের বৈঠকে নতুন হাইওয়ে ম্যাপ তৈরি করে। এসকাপ এএইচ-১ নামে প্রধান যে রুটটি নির্ধারণ করেছে সে রুটের শুরু হবে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে এবং বেনাপোল থেকে ঢাকা ও সিলেট হয়ে রুটটি বাংলাদেশের তামাবিল সীমান্তে পৌঁছাবে। এসকাপের এএইচ-২ নামের দ্বিতীয় রুটটি পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্তে শুরু হবে এবং সেখান থেকে দিনাজপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও ঢাকা হয়ে আবারও সিলেটের একই তামাবিল সীমান্তে গিয়ে শেষ হবে। এরপর হাইওয়েটি তামাবিল থেকে দুর্গম পাহাড়ী পথ বেয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং ও আসামের রাজধানী গৌহাটির পাশাপাশি মনিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম হয়ে দক্ষিণে যাবে- যে পর্যন্ত যাওয়ার পর ভারতের এশিয়ান হাইওয়ের আর কোনো প্রয়োজন থাকবে না। মিজোরাম থেকে এশিয়ান হাইওয়ে মিয়ানমারের প্রদেশ শান, কুচিন, কারেন, চীন প্রভৃতির ভেতর দিয়ে ইয়াংগুন পর্যন্ত যাবে। এর ফলে বাংলাদেশকে অন্তত ২০০০ কিলোমিটার বা প্রায় ১২০০ মাইল অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, এসকাপের কথামতো তামাবিল-আসাম-মেঘালয় রুটে যুক্ত হতে হলে বাংলাদেশকে নিজের খরচে প্রায় ১০৫০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। উল্লেখ্য, অনেকটা সান্তনা দেয়ার জন্য এসকাপ তার প্রকল্পে এএইচ-৪১ নামেও একটি রুটের প্রস্তাব রেখেছে। এর শুরু হবে খুলনার মংলা বন্দর থেকে। এটা সিরাজগঞ্জের হাতিকুমরুলের মধ্য দিয়ে ঢাকা ও কাঁচপুর হয়ে প্রথমে চট্টগ্রামে এবং তার পর চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যাবে। বাংলাদেশের জন্য লোভনীয় মনে হলেও এএইচ-৪১ নামের রুটটি রয়েছে এসকাপের সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের তালিকায়। এর বাস্তবায়ন আদৌ কখনো হবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। হলেও এর মাধ্যমেও ভারতই উপকৃত হবে, বাংলাদেশ নয়। এসকাপ যাকে এএইচ-৪১ সাব-রিজিওনাল বা উপ-আঞ্চলিক রুট করতে চাচ্ছে তাকেই প্রধান রুট তথা এএইচ-১ করা হলেই শুধু বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। একবার এএইচ-১ এবং এএইচ-২ মহাসড়ক দুটি নির্মিত হয়ে গেলে তৃতীয় সড়ক অর্থাৎ আঞ্চলিক সড়কটির প্রস্তাব হিমাগারে নিক্ষিপ্ত হবে। কারণ, আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণের জন্য তখন কোনো আন্তর্জাতিক ঋণ প্রদানকারী সংস্থাই অর্থায়নে এগিয়ে আসবে না। সে ক্ষেত্রে এশিয়ান হাইওয়ের নামে মূলত ভারতের চাহিদামতো একটি নয়, দু-দুটি করিডোর নির্মাণ হবে যাবে এবং পরিবর্তে বাংলাদেশকে চার দিক থেকে বেঁধে ফেলতে সক্ষম হবে ভারত।
অথচ বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়েতে চট্টগ্রাম-টেকনাফ-মংড়ু -আকিয়াব-ইয়াংগুন হয়ে যেতে পারলে বাংলাদেশের জন্য ইয়াংগুন পর্যন্ত দূরত্ব হবে মাত্র ৩০ মাইলের মতো। যেখান থেকে সহজেই চীনের কুনমিং, রেঙ্গুন, হ্যানয়, থাইল্য্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়া যাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দেবার প্রয়োজন হবে না। বাংলাদেশ এই হাইওয়ে দ্বারা সহজেই ভারত, নেপাল, ভুটান ও সিকিমের সাথে সংযুক্ত হতে পারবে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বাংলাদেশকে নেপালে যেতে ভারতের মধ্য দিয়ে মাত্র ৪০ মাইলেরও কম ট্রানজিট প্রয়োজন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি পাবে, কারণ বহির্বিশ্ব থেকে আগত মালামাল সহজেই চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে নেপাল বা ভুটানে এমনকি ভারতেও সরাবরাহ করা সহজ হবে। বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই আরো সমৃদ্ধ হবে এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সৃষ্টি হবে না। ভারত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য আমদানি করে আরো লাভবান হতে পারবে।
আপাতদৃষ্টিতে, যোগাযোগ ব্যবস্থার যেকোনো সম্প্রসারণ উন্নয়নবান্ধব। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসকাপ ভারতের চাহিদা অনুযায়ী রুট নির্ধারণ করার ফলে বাংলাদেশের স্বার্থ সেখানে সম্পূর্ণভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। অথচ বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে উচিত ছিল আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক এই উভয়বিধ চাহিদা ও প্রয়োজনের প্রকৃতি যেমন আলাদা তেমনি যোগাযোগ বা অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বিষয়টিও সেই ভিন্নতার আলোকে পৃথক করে আলোচনা করা। বাংলাদেশ বা ভারত পারস্পরিক কী প্রয়োজনের দ্বারা নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ বিনিময়-ব্যবহার করবে তার সাথে সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক প্রয়োজন ও পরিস্থিতিকে গুলিয়ে না ফেলা। বাংলাদেশের সাথে ভারতের দ্বিপাক্ষি বিনিময়ের সম্পর্ককে আলাদা রেখে সেখান থেকে আমাদের নিজেদের ন্যায়ত প্রাপ্য ও দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর একটা সুরাহার কৌশল নিয়ে এগুনো যেত। আমরা ভারতকে বলতে পারতাম যে তাদের আভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন ও অপরাপর সুবিধাদি মিটানোর জন্য বাংলাদেশ অবশ্যই সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। কিন্তু এশিয়ান হাইওয়েকে এশিয়ান হাইওয়ে হিসেবেই রেখে তারপরেই সেটা হতে পারে। দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক স্বার্থ ও সম্পর্কসুত্রকে আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত রেখে পৃথক এজেন্ডা নিয়েই আলোচনার টেবিলে বসা উচিত। বাংলাদেশের প্রয়োজন এবং স্বার্থ কেবল এই নীতিতেই রক্ষিত হতে পারে।
এখানে উল্লেখ করা দরকার, ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ সময়সীমা নির্ধারণ করে এসকাপ এই বলে হুমকি দিয়েছিল যে, ওই তারিখের মধ্যে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর না করলে বাংলাদেশকে বাদ দিয়েই এশিয়ান হাইওয়ে নির্মাণ ও চালু করা হবে। ভারতের কূটকৌশলে মিয়ানমারও বাংলাদেশকে বাদ দিয়েই এশিয়ান হাইওয়ে চালু করার ব্যাপারে চুক্তি করেছিল। কিন্তু এত কিছুর পরও তখনকার সরকার এসকাপের হুমকি এবং ভারতের চাপ ও কূটকৌশলের কাছে নতি স্বীকার করে নি।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, হুমকি দেয়া সত্ত্বেও এসকাপ কিন্তু বাংলাদেশকে বাদ দেয় নি বরং দীর্ঘ চার বছর পর আবারো বাংলাদেশের কাছে ধরণা দিতে শুরু করেছে। ভারতও এগোতে পারে নি। এর সহজবোধ্য কারণটি হলো, বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে কোনো আয়োজনই ভারতের জন্য লাভজনক হবে না। ভারতের দরকার বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নিজের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাতায়াত করার সুবিধা আদায় করা। বাংলাদেশকে বাদ দেয়া হলে সেটা সম্ভব নয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে যেতে হলে প্রথমেই পাড়ি দিতে হবে ১৫০০ কিলোমিটার। এতে বাংলাদেশের কিছুই যাবে-আসবে না। সুতরাং ভারত এবং ভারতের প্রভাবে এসকাপ যতোই ভয়-ভীতি দেখাক না কেন, বাংলাদেশের ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং বাংলাদেশ নিজের অবস্থানে অনড় থাকাটাই তার শক্তির জায়গা। এটাই বাংলাদেশের দরকষাকষির সূবর্ণ সুযোগ।
ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক বা এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাঙ্কের যেসব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ভারত প্রস্তাবিত পথে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবার জন্য তদবির করছেন বা বাংলাদেশেকে পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁদেরও বুঝতে হবে এটা অন্যায় এবং নীতিবিরুদ্ধ, বাংলাদেশ ছোট দেশ বলে একে উপেক্ষা করে শুধু ভারত নির্দেশিত পথের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে বাংলাদেশের সুবিধা-অসুবিধাটাও দেখতে হবে। আর উন্মুক্ত আলোচনায় একসঙ্গে বসে এসব বিষয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করার দৃষ্টান্তও দিতে পারবেন।
অনেকে হয়তো বলবেন ভারতীয় যানবাহন বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে যাতায়াত করতে দিলে সেখান থেকে বাংলাদেশ টোল আদায়ের মাধ্যমে কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারবে। কিন্তু সঠিকভাবে হিসাব করলে সহজেই বোঝা যায় যে কিছু টোলের টাকা আদায় করতে গিয়ে আমরা ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে যেটুকু পণ্য রপ্তানী করে থাকি সেটা একেবারেই হারিয়ে ফেলবো। হারানো রপ্তানীর পরিমাণ কি এই টোলের অর্থের চেয়ে কয়েকশো গুণ বেশি নয়?
পূর্বেই বলা হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার যেকোনো সম্প্রসারণ উন্নয়নবান্ধব। কথা হলো সেই সুফল কে কিভাবে ঘরে তুলবে। স্বার্থের সেই প্রতিযোগিতায় আমরা দক্ষতার সাথে নিজের জন্য সর্বোচ্চটা আদায় করে নিতে পারব নাকি এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো পন্থায় ভারতকে করিডোর দিয়ে বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রাপ্তির সম্ভাবনাটুকুও ধুলিসাৎ করে বসব? চরম ঔদাসিন্য কিংবা বেপরোয়া ক্ষমতা লিপ্সায় জাতীর ভবিষ্যতকে বিকিয়ে দিব? স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নকে গুরুত্বহীন করে সার্বিক জাতীয় নিরাপত্তা বিপর্যস্ত করে ভয়ানক হুমকির মুখে পড়ব? জাতীয় স্বার্থ সর্বাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এরকম যে কোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে এখনই দেশপ্রেমিক সকল শক্তিকে অশুভ চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হতে হবে।
ই-মেইল- nasar.du@yahoo.com
Available tags : হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র, ভারত, ভাষা, সংস্কৃতি, মারাঠি, গুজরাটি, মালয়ালি, অসমীয়া, বিহারী, সিকিমি, কাশ্মীরি
Fascism
From the very beginning, there has been hell lot of events explicitly indicating that ruling regime unlocking its undemocratic claw. Now Aamar Desh acting Editor Mahmudur Rahman is under Remand, 12 days already given. surely, this severe retribution poured out from the venom and related atrocity is inbuilt in the very nature-- their intolerance and disrespect against any dissenting voice. By these AL has clearly proved they are coming out as a Fascist force. but we urge them to think n wish their good sense will prevail.