ফারাক্কা দিবস:লংমার্চ ও মওলানা ভাসানীর দর্শন


ফরহাদ মজহার
Sunday 16 May 10

জলের জল্লাদদের বিরুদ্ধে জলদেবতার যুদ্ধের ডাক

আজ মে মাসের ১৬ তারিখ। আজ ফারাক্কা দিবস। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালের এই তারিখে ফারাক্কা অভিমুখে প্রাণঘাতী ব্যারাজ ধ্বংস করে দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের দুই পাশের মানুষ, পশুপাখি, জীব-অণুজীব--অর্থাৎ দৃশ্যগ্রাহ্য বা দৃশ্যের বাইরে থাকা সকল প্রাণের রক্ষা এবং তাদের হেফাজত নিশ্চিত করবার জন্য এক অভূতপূর্ব মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তখন তিনি অসুস্থ। হাঁটতে তাঁর কষ্ট হচ্ছিল। মওলানা ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহকারী সৈয়দ ইরফানুল বারী মওলানা ভাসানী সম্পর্কে লিখেছেন, ‘শতাব্দির বার্ধক্য ও জরা উপেক্ষা করে মরণপণ মার্চারদের পয়লা কাতারে দাঁড়িয়ে মওলানা ভাসানী প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষ অজেয়-অকুতোভয়। তারা ভাঙবে, তবু নুইবে না। আজ তাই সাবধান হবার সময় হয়েছে এই কথা অনুধাবন করার যে, একটি জাগ্রত জাতিকে দমিয়ে রাখবে এমন শক্তি কারো নেই। ফারাক্কা মিছিল দেশে-বিদেশে জাগিয়েছে বিরাট আলোড়ন।’ (হক-কথা ২৪ মে ১৯৭৬)

সেই মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে নিজের শরীরের বিরুদ্ধে নিজের ইচ্ছাশক্তিকে কিভাবে প্রয়োগ করেছিলেন তার দীর্ঘ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা আমার বন্ধু আহমদ ছফার কাছে আমি কয়েকবারই শুনেছি। আমি বারবারই ছফার কাছে ভাসানীর এই মিছিলের কথা শুনতে চাইতাম। ছফার কথার সূত্র ধরে আমি আজ থেকে বহু বছর আগে ভোরের কাগজ পত্রিকায় “পানির ‘হক’ আদায়, পরিবেশ কিম্বা এক জলদেবতার গল্প” শিরোনামে একটি লেখা লিখেছিলাম (৩ জুলাই ১৯৯৫)।

ছফা বলছিল, ‘পেশাবের বেগ তিনি ধরে রাখতে পারছেন না, বেদনায় তাঁর সমস্ত মুখ ফ্যাকাশে হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে সর্বনাশ ঘটছে এটা তাঁর চেয়ে কেউই আর এতো স্পষ্ট করে বোঝে নি। ফলে জীবনের শেষ সেকেন্ডগুলো তিনি হিশাব করে খরচ করছিলেন।’ মওলানা যখন দাবি করলেন বাংলাদেশের জন্য ফারাক্কা বাঁধ হিরোশিমা-নাগাসাকির চেয়েও ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি ডেকে আনবে, তখন তাঁর এই দূরদর্শিতা অনেকের কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়েছিল। আজ কারো পক্ষেই অস্বীকার করা অসম্ভব যে, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আসলে কমই বলেছিলেন।

‘জলদেবতা’। মওলানা সম্পর্কে এই শব্দনিবন্ধ চয়ন আহমদ ছফার। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী--যাঁকে আমরা মূর্খরা ‘ইসলামি সমাজতন্ত্র’ নামক ধারণার প্রধান প্রবক্তা বানিয়ে ফাইলবন্দী করে ক্লিপ এঁটে সিলছাপ্পড় মেরে নিজেদের বেড়ে ওঠার ইতিহাস ও চিন্তাচেতনার জগৎ থেকে বিদায় দিয়ে দিয়েছি, তাঁর সম্পর্কে আহমদ ছফার শব্দচয়ন আমার কবিস্বভাবকে নাড়া দিতো প্রচণ্ডভাবে। নাড়া দিতো এই কারণে যে, এর বিপরীতে ভারত সম্পর্কে ছফার বিশেষণ ছিল ‘জলজল্লাদ’। এক দিকে জলের ‘দেবতা’ অন্য দিকে জলের ‘জল্লাদ’। জল্লাদ আরবি শব্দ। অথচ ‘দেবতা’ এমন একটি শব্দ সেটা একজন ‘মওলানা’-র ক্ষেত্রে খাটে না। অথচ প্রতীকের এই বিপরীত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে কাব্যস্বভাবী ভাষা এমন কিছু গভীর অর্থের দিকে ইঙ্গিত করতে সক্ষম হয় যা হাজার পাতা গদ্য লিখেও কূল পাওয়া যায় না। জলের দেবতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এই উপমহাদেশে মানুষসহ সকল পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, জীব-অণুজীব--সকলের প্রাণ রক্ষার জন্য শেষবার চরম অসুস্থ শরীর নিয়েও আগুনের মতো জ্বলে উঠেছিলেন। আজ ফারাক্কা দিবসে সেই মওলানার ভজনা না করে এই দিবস সম্পর্কে কোন কথা বলা অসম্ভব। আজ আমি পানি নিয়ে পানির ইঞ্জিনিয়ারদের হিশাব, পানির হিস্যা নিয়ে দরকষাকষি, পুরানা কেচ্ছা, যৌথ নদী কমিশনের কৃতিত্ব বা বেঈমানী--সেই সব নিয়ে কিছু বলতে বসিনি। এই সকল কেচ্ছা শুনতে শুনতে আমাদের কানের পর্দায় পচন ধরে গিয়েছে। কিন্তু ফারাক্কা তো ফারাক্কার জায়গাতেই আছে। অথচ এ দিকে বাংলাদেশ পানিশূন্য কারবালাই শুধু হয় নি, আরো ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। ভারত শুধু ফারাক্কা নির্মাণ করে ক্ষান্ত হয় নি। উজানের প্রায় প্রতিটি নদীর প্রবাহ কোন না কোন ভাবে রুদ্ধ করে চলেছে। এমনকি টিপাইমুখ নিয়ে এতো প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের পরও ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করছে বলে ভারতীয় পত্রিকাতেই খবর ছাপিয়েছে। আহমদ ছফা যে দিকটার ওপর জোর দিতো সেটা হোল--ফারাক্কা কূটনৈতিক ভাবে সমাধানের বিষয় নয়। ইঞ্জিনিয়ার ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পানি মাপামাপি করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পানি বণ্টনের মামলা নিষ্পত্তি মাত্র নয়। ফারাক্কা ব্যারাজ বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের জনগণের জন্যই প্রাণঘাতী। উভয় দেশেরই পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য, জীবন ও জীবিকার জন্য এই ক্ষেত্রে একটি মাত্র রাজনীতিই সঠিক--সেটা হচ্ছে দুই দেশের জনগণের উপলব্ধির ভিত্তিতে দিল্লির শাসক শ্রেণী সীমান্তের দুই পাশে উজানে ও ভাটির দেশগুলোর মধ্যে চিরকালীন শত্রুতা জিইয়ে রাখার যে ফন্দি এঁটেছে, তাকে রুখে দেওয়া। সমাধান একটাই, ফারাক্কা ভেঙে দেওয়া। অন্য কোন বিকল্প নাই।

মনে রাখতে হবে সময়টা ১৯৭৬ সাল। বাকশালী ফ্যাসিবাদ, একনায়কতন্ত্র এবং সর্বোপরি বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের রক্ষীবাহিনী দিয়ে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নজির বাংলাদেশের জনগণকে নির্বাক করে দিয়েছিল। এরই মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলেন। দেশের জনগণের মধ্যে বিভক্তি ও অনৈক্য তীব্র আকার ধারণ করলো। মওলানা মিছিলের আগে পরিষ্কার জানিয়েছিলেন ফারাক্কা মিছিল জাতীয় জাগরণ ও জাতীয় ঐক্যের সংগ্রাম। স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব সংহত করবার সংগ্রামের প্রতীক। ভারতীয় স¤প্রসারণবাদ এবং তাদের এজেন্টদের আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করা, দুর্নীতি, রাহাজানি, লুট, হাইজ্যাক প্রতিরোধ করবার উদ্দেশ্যে সকলকে এক হবার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। সকল বিভেদ, অনৈক্য ও জড়তা ভেঙে সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনে শরিক হবার ডাক ছিল মিছিল শুরুর প্রথম থেকেই।

একটি জাগ্রত জাতিকে দমিয়ে রাখবে এমন শক্তি কারো নাই। কথাটা কি আসলে ঠিক? ‘জাগ্রত জাতি’ কথাটারই বা মানে কী? জাতিকে কি শেষাবধি জাগানো গিয়েছিল? জাতি কি এখন আদৌ জেগে আছে? মওলানা ভাসানীর ফারাক্কা মিছিলের কথা দূরে থাকুক, আজ মওলানা আবদুল খান ভাসানী নামে বাংলাদেশের জনগণের একজন অসামান্য নেতা ছিলেন, সেই মানুষটির নাম তরুণ প্রজন্মের কয়জন জানে? যার আন্দোলন-সংগ্রাম ছাড়া বাংলাদেশ আদৌ স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হোত না। সেটা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মওলানা ভাসানীকে মুছে ফেলা হয়েছে। এই তো ‘জাতি’! তাই না?

ভাসানীর ফারাক্কা মিছিলের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হয়েছিল তীব্র এবং অনেক সময় কুৎসিত ভাষায়। যেহেতু বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত এবং তার কুফল ভোগ করবে বাংলাদেশের জনগণ, ফলে ফারাক্কা-বিরোধিতা রূপ নিলো ভারত-বিরোধিতায়। এর ফলে মওলানা ভাসানী উপমহাদেশে পরিবেশ ও প্রাণরক্ষার প্রশ্নে নতুন যে রাজনীতির সূচনা ঘটাচ্ছিলেন তা চাপা পড়ে গেলো। তিনি চেয়েছিলেন পানিসম্পদের ওপর সকল প্রাণের ‘হক’ প্রতিষ্ঠা হোক। কিন্তু ‘রবুবিয়াত’-এর এই রাজনীতি চাপা পড়ে গেলো জাতিবাদী-বিরোধিতায়। ফারাক্কা ভেঙে দিতে হবে শুধু বাংলাদেশের মানুষ কিম্বা এই ভূখণ্ডের প্রাণ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য নয়--পানির প্রবাহ বন্ধ হলে ভারতের বিশাল জনগোষ্ঠীও ক্ষতিগ্রস্ত হবে--সেখানেও প্রাণ ও পরিবেশ ধ্বংস হবে। জাতিবাদী-বিরোধিতার আড়ালে মওলানা ভাসানী বিশ্বপালনকর্তার তরফে সীমান্তের দুই পাশের সকল প্রাণ রক্ষার যে রাজনীতি সামনে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন, সেটা মার খেয়ে গেলো। ঠিক যে তার মিছিলের কারণে দুনিয়ার মানুষ ফারাক্কার কুফল সম্পর্কে কিছুটা অবহিত হোল। দিল্লির শাসকদের আধিপত্যবাদী এবং স¤প্রসারণবাদী নীতি সম্পর্কেও অনেকের হুঁশ হোল। কিন্তু ব্যাপারটা দাঁড়ালো আন্তর্জাতিক নদীর ‘ব্যবহার’ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের বিরোধ হিশাবে। জয় হোল দিল্লির।

দিল্লি ভারতের জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হোল যে, মওলানা একজন ইসলামপন্থী লোক, কমিউনিস্টদের সঙ্গে তার সম্পর্ক আসলে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আড়াল করবার একটা ফন্দি মাত্র। তাদের পক্ষের পত্রপত্রিকা বোঝালো শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে নিহত হবার পরে ফারাক্কা মিছিল আদতে ছিল ইসলামপন্থি প্রতিক্রিয়াশীলদের ভারত-বিরোধী রাজনীতি চাঙ্গা করে তোলার একটি প্রয়াস। মওলানা ভাসানীর ওফাতের পর বাংলাদেশে ফারাক্কা-বিরোধিতার মধ্যে সব সময়ই জাতিবাদী-বিরোধিতাই প্রকট ভাবে হাজির থেকেছে। এই সুযোগে তাকে সাম্প্রদায়িক খাতে প্রবাহিত করবার প্রবণতাই কাজ করেছে। ফলে ভারতে প্রাণ ও পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে যে সকল বড়ো আন্দোলন হয়েছে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলার সম্ভাবনা দুর্বল হয়েছে। প্রভূত উপকার হয়েছে দিল্লির শাসকদের। বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাজ্যের জনগণের সঙ্গে মৈত্রীর জায়গাগুলো বিকশিত করবার প্রক্রিয়াগুলোও শুকিয়ে গিয়েছে। ফারাক্কার বিরুদ্ধে লড়াই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে হিন্দু রাষ্ট্র ভারতের বিরোধিতায় পর্যবসতি হবার কারণে জাতি, ধর্ম, রাষ্ট্র নির্বিশেষে প্রাণ ও পরিবেশ রক্ষার রাজনীতির নেতা হিশাবে উপমহাদেশে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর তাৎপর্য ম্লান করে দেওয়া সহজ হয়েছে।

বড়ো ক্ষতি হয়েছে আমাদের। এক দিকে ফারাক্কার বিরুদ্ধে কোন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা যায়নি--মওলানা যা চেয়েছিলেন। অন্য প্রশ্ন থাক, উজানের দেশ ভারতকে ভাটির দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে পানি ব্যবহার নিয়ে একটা ন্যায্য চুক্তিতে বাধ্য করবার জন্য যে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ছিল, আজ অবধি তা গড়ে তোলা যায়নি। জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা দূরে থাকুক, বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিয়ে এমন এক সরকারকে বসিয়েছে যে এই সরকার দিল্লির সরকারের আনুকূল্যের জন্য বাংলাদেশকে পানিশূন্য করবার রাজনীতি প্রকাশ্যেই করছে। এই প্রাণঘাতী রাজনীতির বিরুদ্ধে সমাজে যে ধরনের প্রতিবাদ হবার কথা তা কি হয়েছে? দুই-একটি বিবৃতি, দুই-এক অক্ষর হুমকির ভাষা কিংবা লোক দেখানো দুই-একটি মিছিল ছাড়া?

যে দিকটি সবচেয়ে ভয়াবহ বলে আমি করি সেটা হোল নদী ও পানির প্রবাহ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এখন যেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা আর কূটনৈতিক ভাবে সমাধান অসম্ভব। এরূপ আগামি দিনে কী দাঁড়াবে এখনই বলা সম্ভব নয়। পানি এই অঞ্চলের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রশ্নের সঙ্গে এখন এতো প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছে যে, ফারাক্কা দিবস পালন করা আর না করার বিশেষ কোন তাৎপর্য আছে বলে আমি মনে করি না। যদি ফারাক্কা দিবস পালনের উদ্দেশ্য হয় গণসচেতনতা বৃদ্ধি, তাহলে সেই গণসচেতনতার উদ্দেশ্য কেবল তখনই ফলপ্রসূ হবে যদি গণপ্রতিরক্ষার জন্য জনগণকে সংগঠিত ও সঙ্ঘবদ্ধ করাই তার মুখ্য কাজ হয়। জনগণকে বুঝতে হবে পানির ওপর ‘হক’ আদায়ের লড়াই মওলানা নিরস্ত্র ও অহিংস মিছিলের মধ্য দিয়ে ভারতের শাসক শ্রেণীর বিবেক জাগিয়ে হাসিল করতে চেয়েছিলেন। সেটা ২০১০ সালে আর সম্ভব বলে আমি মনে করি না। ভারতের সঙ্গে শক্তিতে এখন আমাদের বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়ে কিছু অর্জন করাও বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভবই বলতে হবে।

গণপ্রতিরক্ষার কথা বলবার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্ত এখন কার্যত ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরাই পাহারা দিচ্ছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে টিকে আছে সত্য, কিন্তু কার্যত তাদের বীরত্বের নমুনা আমরা মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের আমলে যথেষ্ট দেখেছি। বিডিআর বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে বিডিআর ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলা যায়। গ্রেফতার হওয়া জওয়ানদের কাছ থেকে তথ্য আদায় করবার পরিণতি আমরা দেখেছি কিভাবে অভিযুক্তরা বিচারের আগেই লাশ হয়ে যায়। যে তিক্ততা, বিভক্তি, সহিংসতা ও নির্মম ভাবে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের রেওয়াজ দেখছি তাতে নিজেদের প্রাণ, পরিবেশ, পানি, খাদ্য--অর্থাৎ বেঁচে থাকবার শর্ত রক্ষার জন্য জনগণকেই সংগঠিত হতে হবে। কোথাও কোন ভরসা নাই। জনগণকে রক্ষা করবার জন্য কোন ফেরেশতা আকাশ থেকে মাটিতে নেমে আসবেন না।

সংগঠিত হবার প্রেরণা হিশাবে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর রবুবিয়াতের রাজনীতির মর্ম উপলব্ধি করবার প্রয়োজনীয়তা আমি বিশেষভাবে উপলব্ধি করি অনেকগুলো কারণে। সেই বিষয়ে দুই-একটি কথা বলে শেষ করব।

পরিবেশ রক্ষা, প্রাণের হেফাজত ও প্রাণের প্রতিপালন রবুবিয়াতের মূল কথা। শব্দটি আরবি হবার কারণে একে মুসলমানি ধারণা গণ্য করবার কারণ নাই, তবে ইসলামের ভাবগত দিকের সঙ্গে এই পরিবেশবাদী চিন্তার মিল আছে অবশ্যই।

ধরা যাক যদি আমরা নিজেদের নাস্তিক বলে দাবি করি, মাইকে সারা শহরে চিৎকার করে বলি--আল্লাহ বলে কিছু নাই বা সব নবী-রসূল, অলি-আউলিয়া সবাই ভুয়া--তাহলে সূর্যের আলো কি আমাদের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে? নদীর প্রবাহ মেঘের বৃষ্টি, কিংবা বাতাস কি আমার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে? আমাদের রিজিক কি পরম শক্তিধর আল্লাহ ধ্বংস করে দেবেন? যিনি নাস্তিক তাঁর কাছে অবশ্য এইসব আদৌ কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নয়। এতে তার কিছুই আসে-যায় না, কিন্তু যিনি সত্যি সত্যিই মোমিন তিনি তখন আল্লাহর এই ‘রব’ বা প্রতিপালক রূপে মুগ্ধ হন। তাঁর আশেকী বাড়ে এবং সৃষ্টির প্রতি তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি আরো যত্নবান হয়ে ওঠেন। আল্লাহকে মানা-না-মানা বা ইসলামপন্থি হওয়া-না-হওয়া এখানে মূল প্রশ্ন নয়। যে ভাবগত চর্চা আমাদের প্রাণ ও পরিবেশ রক্ষায় আগ্রহী করে তোলে, প্রাণের প্রতিরক্ষা ও হেফাজত করবার জন্য যে নীতি আমাদের ইহলৌকিক দুনিয়ায় কার্যতই আল্লাহর খলিফা হিশাবে প্রতিষ্ঠিত করে, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী মানুষের মধ্যে সেই রূপচর্চার--বা আল্লাহর এই বিশেষ গুণচর্চার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তার তুলনা মেলা ভার।

এর জন্য তাঁকে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছে। নাস্তিকদের কাছে তিনি ছিলেন যেকোন মওলানা-মাশায়াখের মতোই পারলৌকিক অর্থে নিছকই একজন ইসলামপন্থি। তিনি ইসলামই কায়েম করতে চেয়েছিলেন। অন্য দিকে ইসলামপন্থীদের কাছে তিনি ছিলেন ছদ্মবেশী কমিউনিস্ট। নাস্তিক--অতএব কাফের। অথচ যে দিব্য অনুভূতি, অভিজ্ঞতা এবং মানুষসহ সকল প্রাণের প্রতি প্রতিপালকের স্নেহ ও প্রেম ছাড়া কোন ধর্মই নিজেকে ধর্ম বলে দাবি করতে পারে না--অন্য দিকে কমিউনিজম তো দূরের কথা, কোন রাজনীতিই সেই দিব্য অনুভূতি ছাড়া নিজেকে মানুষের ইহলৌকিক স্বার্থ রক্ষা করছে বলে দাবি করতে পারে না--মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তো সেই ধর্ম আর সেই কমিউনিজমই আমাদের শিখিয়েছেন। উভয়ের মধ্যে যে আদতে কোন বিরোধ নাই--এই শিক্ষা দিয়ে তিনি ধর্মের সম্ভাব্য বিপ্লবী চরিত্রকে যেমন খোলাসা করে দিয়েছেন, ঠিক একই সঙ্গে বিপ্লবী রাজনীতির দিব্য স্বভাব বা তার পেছনে জীবন্ত মানুষের শিরা-উপশিরার মতো লুকিয়ে থাকা রবুবিয়াতের স্পন্দনকেই শনাক্ত করে দিয়ে গেছেন। এখানে তিনি নতুন জিনিস দিয়ে গেছেন আগামী দিনের বিপ্লবী রাজনীতির পুনর্গঠনের জন্য। যে ধর্ম কমিউনিজম বা প্রাণ ও পরিবেশ রক্ষার প্রাথমিক কর্তব্যকে এক নম্বর নীতি হিশাবে গ্রহণ করে না, তাকে যেমন কমিউনিজম বলা ভুল, ঠিক তেমনি যে ইসলাম কমিউনিজমকে শত্রুজ্ঞান করে--এবং ইহলৌকিক জীবনে মানুষের জীবন, জীবিকা, প্রাণ ও পরিবেশের শর্ত রক্ষাকে তার ফরজ কাজ গণ্য করে না, তাকে আর যা-ই হোক ‘ইসলাম’ বলা যায় না।

ফারাক্কা ব্যারাজ ভেঙে উড়িয়ে দিয়ে পানির ওপর সীমান্তের দুই পাশের সকল মানুষ, পশুপাখি, জীব-অণুজীবের ‘হক’ প্রতিষ্ঠার যে ডাক মওলানা ভাসানী দিয়েছিলেন সেই ডাক এখনো আমাদের কানে এসে পৌঁছায়নি। যদি আমরা খেয়াল করি তো বুঝব যে ‘হক’ ও ‘অধিকার’ ধারণাগত দিক থেকেও সমার্থক নয়। ‘অধিকার’ আইনী শব্দ। আইন ও চুক্তি করে কে কী পরিমাণ পানি ব্যবহার করতে পারবে সেটা মানুষের মামলা হতে পারে। কিন্তু অন্যান্য জীব বা অন্যান্য প্রাণের ক্ষেত্রে কী হবে? ভারত অবশ্য বাংলাদেশেরই ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দিতে পারেনি। জীব-অণুজীবের প্রশ্ন তো দূরের কথা। পানির ব্যবহার এখন পুঁজিতান্ত্রিক সমাজের প্রবৃদ্ধির প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত, অতএব পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে দুর্বল দেশ হিশাবে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে কিভাবে পানির হিস্যা আদায় করবে? ভাসানী ঠিকই ধরেছেন--ভারতের শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে উপমহাদেশের জনগণের লড়াইয়ের প্রশ্ন বাদ দিয়ে পানির হিস্যা আদায়ের জন্য চুক্তি করবার আশা দূরাশা ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু পানির ওপর ‘হক’ তো শুধু মানুষের নাই। গাছপালা, পশুপাখি, জীব-অণুজীব কার কী পরিমাণ পানি দরকার তার হিসাব নির্ধারণ করবে কে? পানির পরিমাণ শুধু নয়, পানির প্রবাহ নিশ্চিত করবার সঙ্গে বহু প্রাণ বা প্রাণীর জীবন নির্ভর করে। আর ঠিক এখানেই--এই ফাঁকটিতেই--এই জায়গাতেই আমি দেখি এক দিব্য পুরুষকে, যিনি আমাদের নতুন যুগে নতুন রাজনীতির দিশা দিতে অসুস্থ শরীরে ফারাক্কার বিরুদ্ধে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। একই ভাবে আমার বন্ধু আহমদ ছফা ‘জলদেবতা’ বলে অভিষেক ঘটিয়েছিলেন। যাচ্ছেন দলদেবতা মওলানা আবদুল খান ভাসানী ফারাক্কাসহ দুনিয়ার তাবৎ বৃহৎ ড্যাম ও নদীপ্রবাহ রুদ্ধ করে প্রাণ ও পরিবেশ ধ্বংসকারী করপোরেশান, রাষ্ট্র ও পানি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। জলদেবতা যাচ্ছেন জলের জল্লাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। তারাই এই যুদ্ধে শামিল হবে যারা মোমিন। তারাই এই যুদ্ধে জয়ী হবেন যারা কমিউনিজম কায়েম করা বা পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে বিশ্বমানুষের একটি মাত্র সমাজ গঠন আর ধর্ম কায়েম করবার মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের পরে আর কোন পার্থক্য আছে বলে মনে করেন না।

আগামী দিনে বিপ্লবী রাজনীতি পরিগঠনের ক্ষেত্রে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং তাঁর ফারাক্কা-বিরোধী মিছিল বারবার অনুপ্রেরণা হয়ে ফিরে আসবে। এই বিষয়ে কোনই সন্দেহ নাই।

১ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৭। ১৫ মে ২০১০। শ্যামলী।

View: 16407 Posts: 12 Post comments

Movement

আমি ফারাক্কা নিয়ে যে সমাধান চিন্তা করেছি ভাসানি সহ অনেকেই আগেই ভেবেছেন জেনে খুশি হলাম। আমি পশ্চিম বংগ ত্রিপুরা আসাম মেঘালয় ঘুরেছি, আমার এর পর থেকে সবসময়ই মনে হয়েছে আমাদের মাথায় যেভাবে ডুকিয়ে দেয়া হয় চারদিক থেকে ভারত দিয়ে ঘেরা এর অন্যথা সম্ভব, যেটি আপনার লেখায় স্পষ্ট। আপনার লেখা ভাল লাগে।

পত্রিকায় এ নিয়ে লেখা পড়েছি। দুটো জিনিস add করতে চাইঃ ১. লং মার্চের সময় ৯৬ বছরের ভাসানী যখন অদম্য উৎসাহে এগিয়ে চলছিলেন, তখন সরকারি ব্যক্তি যারা ছিলেন যেমনঃ রংপুরের তৎকালীন এস.ডি.ও এবং আরো অনেকে ক্লান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন, কিন্তু অসুস্থ ভাসানী কখনও থামেননি। ২. সেসময়ের বাংলাদেশের একমাত্র যে দলটি ক্ষমতার আশেপাশে ছিল, তারা ভাসানীকে প্রয়োজন শেষে দূরে ঠেলে দিতে উদ্যোগী হয়। ভাসানীর কাল্পনিক অথর্বতাকে নিয়ে ছড়া বানানো হয়ঃ হাঁচি, কাশি, হাঁপানী, মাওলানা ভাসানী কিন্তু তাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীরাই কম্পজ্বরে ভুগছিল

ফারাক্কা দিবস:লংমার্চ ও মওলনা ভাসানীর দর্শন

Ami Mazhar Bhai er Lekhar bhokto bole bolsi na, tar ei lekhati Farakka Badh ar emon aro shoto Pranghati shob Nipiron er biruddhe amader Jatiyo Oikkyo kon bindute ekibhuto haoa uchit tar pathonirdeshona diyeche Opurbo Drishtikon theke. Gano-Protirokkhya ar jatiyo Oikkyo Chara amra Dhongsho hoye jabo.

মলানা ভাসানি

ভাই মোমেন, আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা চিন্তার পাঠকদের জন্য লিখলে খুশি হব। ভাসানি শুধু কাজে নয়, চিন্তার দিক থেকেও অসাধারন মানুষ। আমাদের কাজ তাঁর বিপ্লবী ও অগ্রসর চিন্তার সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। ভাই মুহাম্মদ, তথ্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাই আসিফ, অনেক ধন্যবাদ।

চাকমাদের বাপদাদার ভিটে, ৫৪০০০ একর জমিকে যখন ভুতুড়ে লেকে পরিণত করা হয়েছিল তখন এইসব জলদেবতারা চুপচাপ থেকে জলদাসের ভূমিকা পালন করেছে। উপগোত্রীয় স্বার্থের সাথে সংঘাত হলেও শুধু এসব জলদাসরা জলদেবতার রূপধারণ করে। ফারাক্কার মার্চ তেমনি একটি উপজাতীয় ও গোত্রবাদী প্রেমের বহিঃ প্রকাশ। যদিও তার বাহ্যিক প্রকাশকে আমি সমর্থন করি।

বাগদাদ স্নাইপারের লেখা প্রসংঙ্গে

চাকমাদের নিয়ে বাগদাদ স্নাইপারের মন্তব্য পড়লাম। তিনি বেশ কিছু অভিযোগ তুলেছেন। তা হল, যখন চাকমাদের বাপদাদার ভিটেমাটি ভূতুরে লেকে পরিণত করেছে পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী, তখন জলদেবতারা নিরব ছিলেন। চুপচাপ ছিলেন। তিনি আরও বলেছেন, উপগোত্রীয় স্বার্থের সাথে সংঘাত হলে শুধু এসব জলদাসরা জলদেবতার রূপধারণ করেন। ফারাক্কার লংমার্চ একটি উপজাতীয় ও গোত্রবাদী প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। আমরা আসলে ‘জলদেবতা’ বলে একজনকে জানি, যিনি এদেশের মজলুম গণমানুষের নেতা মাওলানা ভাসানী। কিন্তু জলদেবতারা বলতে অনেকে ছিল এমন আমাদের জানা নেই। তিনি বলেছেন, কাপ্তাইবাধ নির্মাণের সময় এসব জলদেবতারা চুপচাপ ছিলেন। আমরা তো জানি তখন এ দেশের অনেকেই প্রতিবাদ করেছিল। অনেকের নাম আমরা বলতে পারবো। বরং কোন প্রতিবাদ হয় নাই, এমন তিনি প্রমাণ করতে পারবেন কী? চাকমাদের প্রসঙ্গে বাগদাদ স্লাইপারের ক্ষোভ সংগত, কিন্তু যখন কাপ্তাই বাধ নির্মিত হচ্ছিল, সে সময়ে একই শাসক গোষ্ঠী বাংলাদেশের অপরাপর জনগণকে অর্থনৈতিক ভাবে শোষণ করছিল। ভাষা ও সাংস্কৃতিক নিপীড়ন তো ছিলই। এ দেশের গণমানুষ যখন পাকিস্তানী শাসক-শোষকদের দ্বারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সকল ক্ষেত্রে বঞ্চিত, নিপীড়িত, শোষিত হচ্ছিল, তখন চাকমারা কী ভূমিকা রেখেছিল? বাগদাদ স্নাইপার সে প্রসঙ্গে আশ্চর্যজনক ভাবে নিরব। রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানীদের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন বলে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক জনগণ চাকমা জনগোষ্ঠীর ওপর সেই দায় চাপিয়ে দেয় নাই। কিন্তু বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে শ্রমিক,কৃষক, গরিব মানুষদের পক্ষে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করা এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের অধীনে পাহাড় ও সমতলের সকল জাতী-গোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার লড়াইয়ে শামিল না হয়ে, চাকমারা বাঙালীদের মতই জাতীয়তাবাদী সম্প্রদায়িকতায় আক্রান্ত হয়েছে। এখন আমরা বাংলাদেশে জাতীগত সাম্প্রদায়িকতার যে সহিংস রূপ দেখছি তার দায় চাকমাদেরকেও নিতে হবে। উপরের কথার পরে ফারাক্কার মার্চ উপজাতীয় ‘ফারাক্কার র্মাচ... একটি উপজাতীয় ও গোত্রবাদী প্রেমের বহি: প্রকাশ কথাটি বাগদাদ স্নাইপরের নিজের গোত্রবাদী চিন্তার উদগীরণ নয় কী?

রাজনৈতিক ব্যর্থতার দায় স্বীকার করি।

রবুবিয়াতের রাজনীতি সত্যিই অসম্পূর্ন থেকে যায় যদি না আমরা যারা সমতলে বাস করি তারা কাপ্তাই বাঁধ নিয়ে প্রতিবাদ না করি। এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। জাতীয় ইস্যু আকারে আমরা যেমন ফারাক্কা সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি তেমনিভাবে পাকিস্তানী শাসকদের রেখে যাওয়া মরন ফাঁদকে জিইয়ে রেখে বাংলাদেশের অখন্ডতাকে প্রশ্নের সম্মুখিন করেছি। মজহার ভাই একবার চিন্তার এক পাঠশালায় আমাদের টিপাইমুখ ইস্যুতে বলেছিলেন এই লড়াইটা আসলে বিগ ড্যাম ভারসাস হিউম্যান। পক্ষান্তরে, পুঁজির সাথে মানুষের লড়াই। ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য লক্ষাধিক মানুষকে পাহাড়ে জঙ্গলে যেমন উদ্বাস্তু হতে হয়েছিল তেমনি আগামী দিনে সমতলেও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে লক্ষ-কোটি মানুষের উদ্বাস্তু হতে হবে। একে অপরকে গালি দিয়ে কোন সমাধান আসবে না বলে আমি মনে করি।

রাইহানের মন্তব্য প্রসঙ্গে

এ দেশের গণমানুষ যখন পাকিস্তানী শাসক-শোষকদের দ্বারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সকল ক্ষেত্রে বঞ্চিত, নিপীড়িত, শোষিত হচ্ছিল, তখন চাকমারা কী ভূমিকা রেখেছিল? দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের তুলনায় মুষ্টিমেয় কয়েকজন পাহাড়িদের নিয়ে গঠিত ব্রিটিশ কর্তৃক ইতিমধ্যে বলাৎকারকৃত একটি উপজাতি, তৎকালীন পাকিস্তান শাসক কর্তৃক বলাৎকার হওয়ার আশঙ্কায় যখন দ্বিধাগ্রস্ত ও দোদুল্যমান তখন তারা নিজেদের ক্ষুদ্র অস্তিত্বকে না টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে, স্বগোত্রীয় পাহাড়িদের হুমকির মুখে ফেলে অন্যদের জন্য ঝাপ দিয়ে বিরাট ভূমিকা রাখবে সেই আশা করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। যদি চাকমা উপজাতিদের লোকবল সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছাকাছি হতো তাহলে সেই আশা অবশ্যই করা যেতো। তবে নি:সন্দেহে ফারাক্কা আমাদের জীবনে একটি বড় ইস্যু। তবে তা জাতীয় ইস্যু। আন্তর্জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ইস্যু নয়। এ কারণেই শ্রদ্ধেয় মৌলানা সাহেবের মৃত্যুর কিছু কালের মধ্যেই ফারাক্কা ইস্যুর মৃত্যু ঘটে। যে রাজনৈতিক ও মানবিক আন্দোলন, জাতীয় স্বার্থকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে তার অনিবার্য মৃত্যু এভাবেই হয়। আমাদের থেকে কয়েক সমুদ্র দূরে কার্ল মার্ক্স যে ড্রেকোনিয়ান আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তা আজও আমাদের প্রভাবিত করে কারণ তাঁর চিন্তা জাতীয়তার স্বার্থকে পেরিয়ে মানবতার কাছে আবেদন রাখতে সক্ষম হয়েছিল। ফারাক্কার ইস্যু আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজও যারা ফারাক্কার ইস্যু নিয়ে কথা বলছেন তাঁরা সবার কাছেই শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র। জলখোক্কশদের কৃত্রিম এই বাধকে অবশ্যই গুঁড়িয়ে দেয়া উচিৎ। তবে এ কথা না বলে উপায় নেই, এই আন্দোলনের যে কেন্দ্র তার সিংহভাগ অংশই বাঙালী সাম্প্রদায়িকতার গোত্রীয় আবেগ-উচ্ছ্বাস দখল করে রেখেছিল। চাকমারা জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িকতার দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়নি তা আমি অস্বীকার করি না। সেকারণে হয়তো ফারাক্কার মত কাপ্তাই ইস্যুরও মৃত্যু হয়। কাপ্তাই বাধ নির্মাণের সুবাদে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানীদের অধীনস্থ অনেক হবু-বাঙালীর ঘরে যখন বিদ্যুতের আলো পৌছে তখন তা নিয়ে কেউ (হাতের পাঁচ আঙুল দিয়ে গোনা যায় এমন কয়েকজন ছাড়া) তেমন একটি উচ্চবাচ্য করেনি, কারও মধ্যে জলদেবতা হওয়ার প্রবণতাও দেখা দেয়নি। অথচ পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য ভাষা ইস্যুর পাশাপাশি কাপ্তাই বাধও একটি বড় ধরণের ইস্যু হতে পারতো। কিন্তু পাকিস্তানী হটাও আন্দোলনের কোথাও তা ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়নি। এই ব্যাপারটি কি আমাদের নিষ্ক্রিয়তার প্রমাণ দেয় না? আমরা ফারাক্কা, টিপাই ইত্যাদি বাধের ব্যাপারে যেমন সক্রিয়, কাপ্তাই নিয়ে তেমন সক্রিয়তা কি সেসময়কার হবু-বাঙালিদের মধ্যে কারও ছিল? না থেকে থাকলে তা উপগোত্রীয় স্বার্থপ্রিয়তার-ই বহি:প্রকাশ মাত্র। এতে কোন সন্দেহ নেই।

বাগদাদ স্নাইপারের দ্বিতীয় মন্তব্য প্রসঙ্গে

যখন বৃটিশ শাসকশ্রেণীর দ্বারা চাকমারা বলৎকার হচ্ছিল, তখন বাঙালিরাও ছিল ওই একই অবস্থার শিকার। ঠিক পাকিস্তান আমলেও একরকম অবস্থা ছিল। বাঙালিরা শাসক শ্রেণীর অন্যায় শোষণকে মানেন নাই। বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছেন। পাকিস্তান আমলেও শাসকদের বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তাদের অন্যায়কে মেনে না নিয়ে। হক-কথা'র সম্পাদকীয় সেই কথা বলেছে এভাবে, “মওলানা ভাসানী প্রমাণ করছেনে, বাংলাদশেরে মানুষ অজয়ে-অকুতোভয়। তারা ভাঙবে, তবু নুইবে না। আজ তাই সাবধান হবার সময় হয়েছে, এই কথা অনুধাবন করার যে, একটি জাগ্রত জাতীকে দমিয়ে রাখবে এমন শক্তি কারও নাই’। আচ্ছা, তখন চাকমাদের কী করা উচিত ছিল? শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের লড়াইয়ে শামিল হওয়া ঠিক এটাই তো। বাগদাদ স্নাইপার সেই সময় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সেই যুদ্ধে শামিল হওয়াটাকে খুব যুক্তিসঙ্গত মনে করেন নাই। তাই পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুণ্ঠনকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। বাগদাদ স্নাইপার ফারাক্কা সমস্যাকে জাতীয় ইস্যু বানাইছেন। কিন্তু ফারাক্কা কোন প্রকার জাতীয় ইস্যু নয়। এটাকে বলব, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যা। দিনকে দিন এই সমস্যা প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে উঠবে। লেখক ফরহাদ মজহার তার দুটো লেখায় কোনটাতেই ফারাক্কা সমস্যাকে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক এরকম কোনো শিরোনামে আটকে দেন নাই। তার পুরো লেখার এ জায়গাটা ধরতে পারলে আর কোন সমস্যা থাকে না। ফরহাদ বলেছেন ‘রুবুবিয়াতের রাজনীতি’। লেখক ফরহাদ কে বুঝতে হলে আমি মনে করি এ অংশটুকু আত্বস্থ করতে হবে পুরোদমে। ‘রুবুবিয়াত’ শব্দটি আরবী শব্দ। তিনি লিখেছেন, জলের দেবতা মওলানা আবদুল হামদি খান ভাসানী এই উপমহাদশে মানুষসহ সকল পশু-পাখি, কীটপতঙ্গ, জীব-অণুজীব--সকলরে প্রাণ রক্ষার জন্য শেষবার চরম অসুস্থ শরীর নিয়ে আগুনের মতো জ্বলে উঠেছিলেন। রুবুবিয়াত শব্দটির গূঢ় অর্থ এ পুরো লাইনটার ভিতর থেকে পাওয়া যাবে। আরবীতে রুবুবিয়াত শব্দটার যে অর্থ দাড়ায় তার সারমর্ম এ অংশটুকু। তাহলে, মাওলানা ভাসানী একটি জাতীয় ইস্যুকে নিয়ে মার্চ করেন নাই। বরং ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন প্রকৃতির সম্পদ আটকে রেখে সকল প্রাণীর মৃত্যু ডেকে এনেছে। তাই আমরা বলতে পারি না, মাওলানা ভাসানী একটা জাতীয় ইস্যুতে মার্চ করেছেন। বাগদাদ স্নাইপার তার মন্তব্যে লিখেছেন, মাওলানা ভাসানীর লংমার্চ বাঙালী সাম্প্রদায়কিতার গোত্রীয় আবগে-উচ্ছ্বাস দখল করে রেখেছিল। তিনি ‘বাঙালি সাম্প্রদায়িকতার গোত্রীয়’ কথাটা বলে, তার পরের শব্দে ‘আবেগ-উচ্ছাস’ কথাটা বলেছেন। কিন্তু এটাতো কোন আবেগ-উচ্ছাসের মত কিছু ছিল না। এটা ছিল একটা জনগোষ্ঠীর বাচাঁ-মরার লড়াই। এবং যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মন্তব্যদাতা একটা বাচাঁ-মরার লড়াইকে আবেগ-উচ্ছাস বলেছেন, সেখান থেকে বললে তিনি নিজেও একটা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি নিয়ে এ তর্কে আসছেন। কিন্তু আমাদেরকে তর্ক শেষে একটা সমাধানে আসতে হলে ‘সাম্প্রদায়িকতা’র উদ্ধে উঠে তর্কটা করতে হবে। তা হলে এসব তর্ক বিফলে যাবে বৈ কি। আমি অন্তত সেটা চাই না। বাগদাদ স্নাইপারের উদ্দেশ্য আমার জানা নাই। এখন আবার মাওলানার কথায় আসি, লংমার্চে শীর্ষে থাকা মাওলানা তখন অসুস্থ ছিলেন। দাঁড়িয়ে কথা পর্যন্ত বলতে পারতেন না। যা আমরা প্রবন্ধকারের লেখা থেকে পাই। তবে ‘বাঙালী সাম্প্রদায়িকতার গোত্রীয়’ শব্দটা যখন প্রয়োগ করা হয়, তখন আমাকে আরও কিছু বলতে হয়। যেহেতু মাওলানা কোন জাতীয়তার ধার না ধইরা প্রকৃতির সম্পদ লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, তখন তাকে আমরা কোন ‘আখ্যা’ দিতে পারি না। অন্তত এমন আখ্যা যা মাওলানার কাজের সঙ্গে কোন প্রকারেই মেলে না। মাওলানার দর্শন ছিল, ‘পানসিম্পদরে ওপর সকল প্রাণরে ‘হক’ প্রতিষ্ঠা হোক’। তবে হ্যা, মাওলানাকে ব্যবহার করে অনেকে ইন্ডিয়া বিরোধী রাজনীতি করেছেন। ফরহাদ মজহার কিন্তু আক্ষেপ করেই লিখেছেন, ‘রবুবিয়াত’-এর এই রাজনীতি চাপা পড়ে গেলো জাতীয়তাবাদী-বিরোধিতায়’। তাহলে, বাগদাদ স্নাইপার যদি কোন সম্প্রদায়িক বিবেচনায় না এনে ‘পানিসম্পদের ওপর সকল প্রাণের হক প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের কথা বলেন তাহলে আমি মনে করি, সেখান থেকে আমরা সবাই মিলে আগামী দিনে একটা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে পারি। সকল প্রকার সাম্প্রদায়িক বা গোত্রবাদী চিন্তার উদ্ধে উঠেই।

রাইহানের দ্বিতীয় মন্তব্য প্রসঙ্গে

ফারাক্কার বাধটি অবশ্যই একটি জনগোষ্ঠীর বাঁচা মরার লড়াই। এতে করে দৃশ্য-অদৃশ্যমান জীবজগৎ বিপর্যস্ত হয়েছে। এবং ইটপাথরের এই জলদস্যুকে যতদিন পর্যন্ত গুঁড়িয়ে না দেয়া হবে ততদিন পর্যন্ত পরিবেশগত বিপর্যয় মহামারির মত অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়বে তা নিশ্চিত। ক্রম বিলুপ্তির শিকার হবে দৃশ্য-অদৃশ্য জীব-অণুজীব। ঠিক এক-ই কথা প্রযোজ্য কাপ্তাই বাধের ক্ষেত্রে। কাপ্তাই বাধ প্রতিষ্ঠার পর তাৎক্ষণিকভাবে যে নজিরবিহীন পরিবেশগত সর্বনাশের সৃষ্টি হয়েছে তা রুবুবিয়াতের বিবেককে ভয়ংকরভাবে নাড়া দেয়। এই বিপর্যয় কোনভাবেই ফারাক্কার চেয়ে কম নয়। কাপ্তাই বাধ পরিবেশগত বিশাক্ততা ছড়িয়ে দেয়ার যে ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করেছে তা এখনো চলছে। এখনো সেই ক্রমবর্ধমান বিপর্যয়ের শিকার হয়ে চলেছে অগণিত মানুষ ও দৃশ্য-অদৃশ্যমান জীবেরা। একটি কর্মতৎপর ও প্রাণবন্ত জাতিগোষ্ঠীকে পরিণত করা হয়েছে বিষণ্ন, বিষাদময়, অসহায় ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া হতাশাগ্রস্ত এক উপজাতিতে। আজো চাকমাদের চোখের দিকে তাকালে কাপ্তাইয়ের পানি ছলছল করে ওঠে। পানিসম্পদের ওপর সকল প্রাণের হক প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের কথা যারা বলেন তারা কাপ্তাই বাধের প্রতিবাদ না করে রুবুবিয়াতের রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। চাকমারা সংখ্যাগরিষ্ঠের লড়াইয়ে শামিল হয় নি বলেই কি তাদের ব্যাপারে আমরা চুপ থাকবো? ৭১ এর পর যেসব চাকমারা জন্মেছে তাদের কী দোষ? এই বাধের পরিবেশগত প্রভাব কী ফারাক্কার মত উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে প্রভাব ফেলছে না? দেশের সীমানার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা ইট পাথরের আরেক মরণ ফাঁদের ব্যাপারে কেন আমরা মুখে স্কচটেপ এটে রাখবো? আমাদের ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌছে দিয়েছে বলে? যে রুবুবিয়াতের রাজনীতি ২৩০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ দিয়ে কেনা যায় তা কতদূর সফল হয়েছে বা হবে তা নিয়ে সন্দেহ থাকবেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চাকমাদের হৃদপিণ্ডের উপর বসিয়ে রাখা কাপ্তাই বাধের ব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করে সত্যি আমরা আমাদের বিবেকের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছি। যারা ফারাক্কার কথা বলছি তাদের অবশ্যই কাপ্তাই বাধের ব্যাপারেও মুখ খুলতে হবে। নয়তো রুবুবিয়াতের রাজনীতিকে কলুষযুক্ত করার দ্বিতীয়মাত্রিক অপরাধের দায়ভার আমাদের কাঁধে উঠে আসতে পারে। এ প্রসঙ্গে ৭ নম্বর মন্তব্যে মেহেদী হাসানের অভিমত উল্লেখ করার মত। তাঁর কথায় " রবুবিয়াতের রাজনীতি সত্যিই অসম্পূর্ণ থেকে যায় যদি না আমরা যারা সমতলে বাস করি তারা কাপ্তাই বাঁধ নিয়ে প্রতিবাদ না করি। এটা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত মতামত। জাতীয় ইস্যু আকারে আমরা যেমন ফারাক্কা সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি তেমনিভাবে পাকিস্তানী শাসকদের রেখে যাওয়া মরন ফাঁদকে জিইয়ে রেখে বাংলাদেশের অখন্ডতাকে প্রশ্নের সম্মুখিন করেছি। মজহার ভাই একবার চিন্তার এক পাঠশালায় আমাদের টিপাইমুখ ইস্যুতে বলেছিলেন এই লড়াইটা আসলে বিগ ড্যাম ভারসাস হিউম্যান। পক্ষান্তরে, পুঁজির সাথে মানুষের লড়াই। ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য লক্ষাধিক মানুষকে পাহাড়ে জঙ্গলে যেমন উদ্বাস্তু হতে হয়েছিল তেমনি আগামী দিনে সমতলেও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে লক্ষ-কোটি মানুষের উদ্বাস্তু হতে হবে। একে অপরকে গালি দিয়ে কোন সমাধান আসবে না বলে আমি মনে করি।" জাতিবাদী চেতনার ঊর্ধে ওঠে, ফারাক্কার সর্বনাশা বাধের বিরুদ্ধে রুবুবিয়াতের পদযাত্রায় কাপ্তাই ইস্যুকে অন্তর্ভূক্ত করে অগণিত মানুষ, দৃশ্য-অদৃশ্যমান অণুজীবদের মুক্ত করার আন্দোলন আরো তীব্রতর হোক সেই কামনা রইলো।

about baghad sniper

apnar coments pore mone holo banglar sadhinotake ekhono mene nite paren ni! or ekhono bangladeshi hote paren ni!! farakk r kaptai er somossa ek noi. kaptai badhe khoti hoiese 1 lakh manush, eta dukhojonk but tara punorbasito hoise by govornment. r ei plant kora hoiese desher sarthe, r desher developmenter sarthe emon khoti sobaike mene nite hoi, amar barir samne jokhon rastha somprosaron kora hoi tokhon amakeo barir ongsho sere dite hoi. r farakkar somossa 16 koti manusher somossa, sara bangladesher somossa, e oncholer poribesher somossa, bisho poribesher ouporeo er provab porse, ETA KONO ANCHOLIK OR GOSHTI GOTO SOMOSSA NOI, apnake poribesh somporke ro ektu bujhe likhte hobe, r farakka issur mrithu ghote nai tader kase jara bangladesh ke valo base, desh and prithibir poribesh niea chinta kor. r apnar konthe farakka somossa ke oupojatio somossa sune varotio dalal der konthoi mone korie dilo.

রুবুবিয়াতের রাজনীতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন

ফরহাদ ভাই’র এই লেখাটার পর অনেকগুলো তর্ক বিতর্ক হল। রাইহান, বাগদাদ স্নাইপার, মাহদী হাসানরা একটা তর্কে জড়িয়ে গেছেন। এখন আমার প্রশ্ন হল, মাওলানা ভাসানীর রুবুবিয়াতের রাজনীতি নিয়ে আপনি আলোচনা করেছেন। যেহেতু মাওলানা একটা রাজনৈতিক মেনিফেস্টোর ভিতর দিয়ে রাজনীতি করেছেন, সে ত্রিশের দশক থেকে। সেহেতু, তার রাজনৈতিক মেনিফেস্টোতে কোন রুবুবিয়াত বা এই জাতীয় অন্য কিছু ছিল না। শেষ জীবনে এসে মৃত্যুর বছরখানেক আগে তিনি তার এক বক্তৃতায় রুবুবিয়াতের কথা বলেছেন। তা দিয়ে আপনি তার গোটাজীবনটাকে বিচার করতে পারেন না। যেহেতু তিনি শুধু ফারাক্কা নিয়ে কথা বলেছেন। কাপ্তাই বাধ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করেন নাই। তাই জলদেবতা-টেবতা বলে তাকে বড় করে তোলার চেষ্টাটা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছি। শুধু তাই নয়, তিনি যে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় মার্চ করেছেন, সে রাজনৈতিক দলের মেনিফেস্টোতে রুবুবিয়াতের রাজনীতি আসার কথা না। মার্চের সময় যে বক্তৃতা দিয়েছেন, তাতেও এই জাতীয় কিছু ছিল না। তবে আমরা তার রাজনৈতিক জীবনের বড় অংশটা বাদ দিয়ে শুধু একটা বক্তৃতার ওপর ভরসা করে আজকের দিনে তার মূল্যায়ন খাড়া করবো? মাওলানা ভাসানি তার মার্চের সময় যেমন করে কাপ্তাই বাধকে এড়িয়ে গিয়েছেন, কোন প্রতিবাদ না করে। আপনিও সেটা এড়িয়ে গেছেন। ফারাক্কার সঙ্গে কাপ্তাই প্রসঙ্গ আসা উচিত। এবং খুব বড় আকারে আসা উচিত বলে মনে করছি। মাওলানা ভাসানি অবশ্যই ভারত বিরোধী ছিলেন। কিন্তু কোন দৃষ্টিকোন থেকে তার এ ভারত বিরোধীটা করেছেন, সেটা একটু স্পষ্ট করা দরকার। রুবুবিয়াতের রাজনীতি পড়ে গেল জাতীয়তাবাদী বিরোধীতায়। কেন এটা হলো? মাওলানা ভাসানি কি গোত্রবাদী চেতনার উর্দ্ধে উঠতে পেরেছিলেন, অবশ্যই না। তা হলে, তার ফারাক্কা আন্দোলন এতটা মিইয়ে যেত না। বাংলাদেশ যতটা শুকিয়ে যাচ্ছে, তার সে আন্দোলনও এদেশের মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে।
Home
EMAIL
PASSWORD