মাহমুদ দারভীশের একগুচ্ছ কবিতা
ফিলিস্তিনের আলবিরওয়ায় ১৯৪১ সালের ১৩ মার্চ মাহমুদ দারউইশের জন্ম এবং ২০০৮ সালের ১০ আগস্ট তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
দারউইশের কাব্যানুভূতির উন্মেষ ঘটে ছবি অঙ্কনের বিকল্প হিশাবে। পিতার আর্থিক অসঙ্গতিতে ছবি অঙ্কনের উপকরণাদি সংগ্রহে অক্ষম হওয়ায় কবিতা রচনাকে বেছে নেন তিনি। কারণ কবিতা লিখতে সেরকম পয়সাপাতি খরচ হয় না। কাব্যিক প্রয়াসই ছিলো তার শৈশবের মূল অনুভূতি। তবু প্রায়ই তার এই অনুভূতি শ্লথ হয়ে পড়তো। তখন কবিতা লেখার একমাত্র প্রেরণা হয়ে ওঠে তার শিক্ষকগণ। তাদের মধ্যে তার অন্যতম উৎসাহদাতা ছিলেন কমিউনিস্ট আদর্শবাদী এক শিক্ষক নামির মারকেস। জীবনের প্রথম কবিতা পাঠ করেন তিনি নতুন ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম উদযাপন অনুষ্ঠানে। দারউইশ যেমন বলেন:
“যখন তারা ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে অনুষ্ঠান উদযাপন করে আমি তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। এ উপলক্ষে তারা বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে আরব অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাকে তলব করেন। আমি যেনো দাইরুল আসাদ ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। আমার জীবনে প্রথমবারের মতো হাফপ্যান্ট পরা অবস্থায় আমি মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে কবিতা পাঠ করি। কবিতাটি ছিলো এক ইহুদী শিশুর প্রতি এক ফিলিস্তিনী আরব শিশুর আর্তনাদপূর্ণ চিৎকার। কবিতাটি এখন আর হুবহু মনে পড়ে না। তবে তার মূলভাবটি বলতে পারি: বন্ধু! ইচ্ছে করলেই তুমি খেলা করতে পারো সূর্যের মুক্ত আলোয়। চাইলেই তুমি যতো সব পুতুল বানিয়ে খেলতে পারো। কিন্তু আমি তা পারি না। তোমার যা কিছু আছে আমার তা নেই। তোমার আছে ঘর। আমার কোনো বাড়িঘর নাই। আমি তো এক শরণার্থী। তোমার আছে উৎসব, আনন্দ। অথচ আমার কোনো উৎসব নেই, আনন্দ নেই...আমরা কেনো একসঙ্গে খেলতে পারি না? পরদিন মাজদ আল কারুম গ্রামের সামরিক অফিসারের কার্যালয়ে আমাকে ডেকে এনে সেই সেনা কর্মকর্তা আমাকে শাসায়, হুমকি দেয়, গালি গালাজ করে। আমি বুঝতে পারি নি কী করে তার জবাব দেবো। তার অফিস থেকে বেরিয়ে আসার সময় রাগে-ক্ষোভে আমি কেঁদে ফেললাম। কারণ সে আমাকে চূড়ান্ত হুমকি দিলো-- যদি তুমি এরকম কবিতা লিখে যাও তবে আমরা তোমার বাবাকে আর কখনো পাথর খোলায় কাজ করার অনুমতি দেবো না। আমি বুঝতে পারি নি কেনো এমন একটি কবিতা একজন সামরিক কর্মকর্তাকে উস্কিয়ে দিলো। আমি এখন লিখে রাখলাম, সেই সামরিক কর্মকর্তা ছিলো প্রথম ইহুদী সন্তান আমি যার মুখোমুখী হই। কথা বলি। তার নীতি আমাকে খুব কষ্ট দেয়, হতাশ করে! বিষয়টি যদি এমনই হয় তাহলে কেনো আমি ইহুদী বালকের সাথে কথা বলছি। সামরিক অফিসারটি অনিষ্টতার পথে ধাবিত হলেন যা দুটি জাতির মধ্যকার সকল সম্পর্কে আঘাত হানে। একথা স্পষ্ট যে, যেসব প্রশ্ন তখন আমাকে হতাশ করেছিলো- কষ্ট দিয়েছিলো- আমি এখন তার জবাব দিতে সক্ষম।”
এরপর থেকে কবিতার যে তৎপরতা শুরু হয়েছিলো তা আর থেমে যায় নি। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে তার প্রতিরোধমুখর উচ্চারণ। এখনো আন্দোলিত করছে ফিলিস্তিনী জাতিকে- বিশ্বের সমগ্র মুক্তিকামী মানুষকে। কারণ তিনি যে ভাষায় কথা বলেন, যে কণ্ঠকে উচ্চকিত করেন তা তো তার নিজের নয় বরং সমগ্র মানব সত্তারই। কবি বলেন, “আমি কবিতা লিখছি অর্থাৎ আমি এখন মরছি আর যেনো কবিতার প্রথাবদ্ধ তত্ত্ব ও নীতি নিয়মসমূহ বিদায় নিচ্ছে। যেনো খঞ্জর স্পষ্ট হয়ে ওঠছে। যেনো উন্মোচিত হচ্ছে প্রতীক: গণমানুষই সেই পাখি ও সুসংবদ্ধ নীতি ও ছন্দের নাম যাদের এখন নাম দেয়া হয় ‘হত্যাকারী’।”
ধর্ম, দর্শন, সংস্কৃতি, ক্ষমতা, প্রতিরোধ, জাতীয় মুক্তি ও অধিকারের প্রশ্নে আরব ও ফিলিস্তিনের সংকট মোকাবেলায় বিশ্বদৃষ্টি পরিবর্তনে আমৃত্যু সক্রিয় ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর, জাতীয় কবি, অবিসংবাদিত নেতা, রাজনীতিবিদ ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের লেখক এই কবি আজকের সাম্রাজ্যবাদের যুগে প্রতিটি প্রতিরোধ লড়াইয়ের জন্য এক অপরিহার্য অনুপ্রেরণা। তদুপরি কেবল একটি জনগোষ্ঠীকে কবিতায় রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য নয় চিন্তাকে কবিতার গূঢ় ও গভীরতম অর্থময় ভাষায় দার্শনিক ও আদর্শিক বয়ানে হাজির করার ফলেও দারউইশকে বুঝবার ও উপলব্ধি করার আরো অনেক দরোজা খুলতে হবে। কারণ এর সাথে তিনি মৌলিকভাবে গেঁথে দিয়েছেন অখণ্ড ভাব ও দর্শনকে।
সম্ভবত রুমীর মসনবীর পর দারউইশই কবিতাকে রাজনীতি, দর্শন, ভাব ও ধ্যানের সামগ্রিকতার মধ্যে গ্রন্থবদ্ধ করেছেন আধুনিক ভাষায়। তবে আমরা শুধু এখানে তার সেসব কবিতাই তুলে ধরেছি যা প্রতিরোধ, শাহাদাৎ, বিশ্বাসঘাতকতা আর কিছুটা তার অখণ্ড চিন্তার ইশারাকারী। মূল আরবী থেকে তরজমা করেছেন শাহাদৎ তৈয়ব।
ধার
শুনে রাখো কবিতা হৃদয়ের রক্ত
রুটির লবণ
চোখের অশ্র“
লেখা হয় নখ দিয়ে
চোখের কোটর দিয়ে
খঞ্জর দিয়ে।
আর আমি তা
অয়েটিং রুমে
বাথরুমে
আস্তাবলে,
চাবুকের নিচে
হাতকড়ার নিচে
শিকলের সহিংসতায়
উচ্চারণ করি:
লক্ষ লক্ষ চড়–ই
আমার হৃদয়ের ডালপালায়
সৃষ্টি করছে যুদ্ধংদেহি সুর।
প্রজাপতির শক্তি ধারণ করো
তুমিই বলবে- না এবং ভেঙ্গে ফেলবে শব্দ। টুকরো টুকরো করে দেবে মন্থর নদী। অভিশপ্ত করবে নোংরা সময়। অথচ তুমি লুকিয়ে থাকো অন্ধকারে।
কথার নাট্যমঞ্চকে না। ধৈর্যের সীমাগুলোকে না। সমস্ত অসম্ভবকে না।
তুমি আসবে তুমি যাবে নগরগুলোর ভেতর। এই অন্ধকারে তুমিই দেবে গ্রামগুলোর নাম। গরিবদের তুমি সাবধান করো ভাষা থেকে, কথা থেকে, সংবাদ ওয়ালাদের থেকে এবং শীঘ্রই তুমি যাবে। নিশ্চয়ই তুমি যাবে। আর কবিতারা এই মহাসমুদ্রের পিছে পিছে, অতীতের পিছে পিছে খুলে দেবে কুয়াশার ভেদ এবং দেখবে যারা অলংকার থেকে, তবলা থেকে ঝরে পড়েছে সেই মুক্ত স্বাধীন প্রহরীরা আসবে। অচিরেই তারা আসবে।
তোমার সংগীতের জন্য ভেঙ্গে পড়ে কাঠুরিয়া, প্রেমিকা, পানির আকাশ।
ভূপৃষ্ঠজুড়ে ভোরের উদ্বোধন ঘটে আর শব্দরা ক্রমাগত বিস্মৃত হয়ে চলতে চলতে
যুথবদ্ধ হয় সহস্র হত্যাকাণ্ডে। মৃত্যু আসে উজ্জ্বল হয়ে
বৃষ্টি নামে প্রবল বর্ষণে। পরিস্কার হয়ে ওঠে রিভলবার এবং নিহতজন।
এবং শহীদেরা আসবে সেইসব প্রাচীর ভেদ করে যা তোমাকে নিক্ষেপ করেছিলো শেষবিন্দুতে। তারা অধিষ্ঠিত হবে তোমার মাথায় রক্তের মুকুট হয়ে এবং তোমার স্মৃতির বাহিরে আপেলের চাষাবাদ হয়ে বারবার তারা আসবে পিছু পিছু।
এবং তোমার কাছে আসে দরিদ্র মানুষেরা। অথচ তোমার কাছে রুটি নেই। নেই কোনো দুআ যা গমগুলোকে শুষ্কতার হুমকি থেকে রক্ষা করে। তুমি তাদেরকে শুনিয়ে দেবে সেই দ্রোহের কথা, যা গমশীষের তরবারীগুলোর উপর ছড়িয়ে পড়বে। তুমি তাদেরকে শুনিয়ে দেবে সেই নদীর কথা যা লুকিয়ে আছে শরতের দেশ থেকে আসা নারীদের পোষাকের ভেতর। এরপর দেখবে তারা কেবলি হাসতে হাসতে চলে যাবে আর মুক্ত রেখে যাবে শস্যজমিগুলোর যাবতীয় প্রার্থনার দরোজা।
তোমার সংগীতের জন্য প্রেমিকাদের চোখ খুলে গেছে। হ্যাঁ তুমি অবশ্যই গমের থোকার নাম দেবে মাতৃভূমি। হ্যাঁ তুমি এই ভূমির নাম দেবে মহা বিস্মৃতি। এরপর তুমি ঘুমিয়ে যাবে একাকী বিপুল বিশ্রামের ঘ্রাণে ঘ্রাণে আর তোমার হৃদয় হারিয়ে যাবে দীর্ঘ পথের কোলে।
শীঘ্রই এক ছাত্রী বলবে: কবিতায় লাভ কী? কবি তো এমন যিনি কেবল অক্ষরের ভেতর থেকে ফুল আর বারুদ বের করে আনেন। অথচ দেখুন শ্রমিকেরা দুটি যুদ্ধে ফুল আর বারুদের নিচে চুর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। বলুন, দিন দুপুরে, অন্ধকারে লাভ কী কবিতায়? তুমি বলবে, তুমি তো ভুল করছো, অচিরেই দেখবে খেজুর বৃক্ষ আমার ইজতেহাদের অপেক্ষা করছে। অতঃপর খেজুর বৃক্ষই তোমার প্রশ্ন ভেঙ্গে দেবে।
তোমার সংগীতের জন্য শুভ্রতার পথগুলো আর ঘাতকের তীক্ষ্ম দক্ষতা আরো বেড়ে গেছে।
তুমি আসো সারাক্ষণ আত্মত্যাগের মতো অতঃপর তারা শোককে দেখে পোষাকের মতো
তুমি আসো সারাক্ষণ বিস্ফোরণের মতো অতঃপর তারা গোলাপকে দেখে মানচিত্রের মতো
নিশ্চয়ই তুমি আসবে যখন চলে যাবে অতঃপর তুমি আসবে যখন তুমি চলে যাবে। অতঃপর মিলনের ব্যবধান হবে অনেক দূর।
তুমি হবে আগুনের ঈগল। আর স্বদেশ হবে তোমার সুরমা রাঙা আকাশ।
প্রশ্ন করো: হে আমার জাতি আমি কি তোমাদের সাথে কোনো ভুল করেছি?
রক্তাক্ত পাহাড় ভেঙ্গে পড়বে ঈগলের ডানায়। ডানা পুড়ে যাবে পৃথিবীর উত্তাপে।
তুমি উঠে যাবে ঊর্ধ্বে। অতঃপর নামবে। অতঃপর উঠে যাবে ঊর্ধ্বে। অতঃপর প্রবেশ করবে বিপুল গতির ভেতর।
শুরুতেই তুমি “আমি কি তোমার সাথে কোনো ভুল করেছি হে সময়?”র স্বীকারকে অতিক্রম করে যাবে। তুমি গান করো শুকনো দুটি হাতের মাঝে বিস্তৃত সবুজের: প্রবেশ করবে আর চিৎকার করবে: এটা কীসের স্তুপ? দেখবে রক্ত, হত্যা আর চিৎকার করে উঠবে: কারা হত্যা করেছে কালের দলীল?
তুমি একা একা মরছো। দেখবে নিশ্চয়ই সাগররা তোমাকে নূড়ির মতো একা রেখে যাবে তাদের উপকূলে। অচিরেই তোমার কাছ থেকে পালিয়ে যাবে অফিস, কর্তৃপক্ষ, নেতৃবৃন্দ, নারী, সংগীত, নগরের সড়ক, ট্রেন, বিমানবন্দর। অচিরেই এই দেশ পালিয়ে যাবে তোমার সেই হাত থেকে যা সৃষ্টি করেছিল পাপিয়ার গানের জন্য একটি দেশ।
তুমি একা একা মরছো। নিশ্চয়ই তোমাকে ত্যাগ করে চলে যাবে সেই সব আগ্নেয়গিরি যারা তোমার রক্তময় গর্জন অনুকরণ করতো। তোমাকে ত্যাগ করে চলে যাবে গণরক্তের ধাবমান উত্তেজনাগুলো। তোমাকে ছেড়ে যাবে সেই আনন্দ যা তোমাকে নিক্ষেপ করতো মাছেদের সামনে। তোমাকে বর্জন করবে সংগীত আর কারাবন্দীদের মাঝে পরষ্পরের বিনিময় ও জিজ্ঞাসারা এবং তোমাকে বর্জন করবে অশ্বের ডাক।
তোমার পরে শীঘ্রই তারা কবর দেবে সুগন্ধী। তারা গোলাপকে পরাবে তোমার হাতকড়া।
তোমাকে শেষ করার পর তারা নিয়ন্ত্রণ করবে পরিত্যক্ত শিশির।
তোমাকে শেষ করার পর তারা আগুন জ্বালাবে যাবতীয় শব্দের ভেতর।
তারা তোমার ত্বকের তৃণগুল্ম থেকে পানি লুণ্ঠন করবে।
তারা তোমাকে গ্যালীলির রুমালগুলো থেকে তাড়িয়ে দেবে।
তুমি বলে দাও: ভাষার নাট্য মঞ্চকে- না।
এই ধৈর্য্যরে সীমাগুলোকে- না।
অসম্ভবকে- না।
অসম্ভব
স্বেচ্ছায় প্রবল উত্তেজনা হয়ে আমি মরবো
আমি মরবো আগুন হয়ে জ্বলে পুড়ে
আমি মরবো ফাঁশির মঞ্চ হয়ে
আমি মরবো জবাই হয়ে
তবু কক্ষনো আমি বলবো না-
আমাদের প্রেম অতীত হয়ে গেছে,
নিঃশেষ হয়ে গেছে
আমাদের প্রেমের কোনো মৃত্যু নাই।
পাসপোর্ট
*
তারা আমাকে চেনে না ছায়ার ভেতর
যে ছায়ারা পাসপোর্টের ভেতর আমার রঙ রূপ শোষণ করে নেয়।
তাদের কাছে আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেবল
ছবি সংগ্রহপ্রেমিক পর্যটকদের জন্য দেহ প্রদর্শনী।
হায়..... তারা আমাকে চেনে না।
সূর্যবিহীন আমার হাত ছেড়ো না
কারণ বৃক্ষ
আমাকে চেনে...
বৃষ্টির প্রতিটি গান, সুরমালা আমাকে চেনে
ছেড়ে যেও না আমাকে চাঁদের মতো এমন মলিন করে
*
সমস্ত চড়–ই, যারা মিলিয়েছে আমার হাত
দূর বন্দরের দরোজায়।
প্রতিটি কারাগার
প্রতিটি শাদা কবর
প্রতিটি সীমান্ত
প্রতিটি রূমাল যা মুছে দেয়
প্রতিটি চক্ষু
তারা সব আমার সঙ্গে মিশে আছে। কিন্তু
তাদেরকে তারা তাড়িয়ে দিলো পাসপোর্ট থেকে।
*
আমি নাম থেকে পরিচয়সূত্র থেকে মুক্ত?
আমি তা মাটিতে লালন করেছি দুহাত দিয়ে?
আজ আকাশ জুড়ে আইয়্যুব চিৎকার করেছে!
দ্বিতীয়বার আর আমায় অশ্র“ করো না!
হায় জনাব! হায় নবীদের সরদার!
তোমরা বৃক্ষকে প্রশ্ন করো না তার নাম নিয়ে
তোমরা উপত্যকাদেরকে প্রশ্ন করো না তাদের মাতৃত্বের পরিচয় নিয়ে
দেখো আমার ললাট থেকে শ্বাস নিচ্ছে
আলোর তরবারী।
আমার হাত থেকে প্রবাহিত হয় নদীর পানি।
মানুষের প্রতিটি হৃদয়ই আমার জাতসত্ত্বা।
সুতরাং তোমাদের উচিত আমার কাছে থেকে
পাসপোর্ট তুলে নেয়া।
আমি আসছি তোমার চোখের ছায়ায়
আমি আসছি তোমার চোখের ছায়ায়...আমি আসছি
দূর সময়ের শিবির থেকে, শিকলকড়ার ঝলক থেকে
তুমি সেই সব নারীদের একজন
যাদের সহধর্মীরা মরে গেছে এবং সন্তানহারা নারীদের
তুমি একজন,
তুমি সেই সব চোখের, যাদের দৃষ্টি থেকে ভোর পালিয়ে গেছে।
যখন বাতাসদের তীব্র প্রবাহে
বুলবুলিদের গান হয়ে যাবে শুকনো পাতা-
আমি আসছি চোখের আয়নায়... আমি আসছি সেই
চামড়াগুলোর ভেতর থেকে যা দিয়ে জায়নামায বুনন করা হয়
আমি আসছি চোখের মণি থেকে যা সম্রাজ্ঞীর গলায় ঝুলে আছে হার হয়ে।
তুমি আমার ঘর, তুমি আমার নির্বাসনের শিবির...
তুমি আমার ভূমি যা আমাকে ধ্বংস করেছে
তুমি আমার ভূমি যা আমাকে শূন্য আকাশে নিয়ে গেছে...
এবং তুমি...
তোমাকে নিয়ে যা বলা হয় সবই আকস্মিকতা, সবই মিথ্যা!
তুমি কোনো তামাটে বর্ণের নারী নও
তুমি কোনো হরিণ নও
তুমি শিশির নও, সুরা নও
যখন গায়েনের সুর কেঁপে ওঠে.....
তুমি তখন নও প্রাচীন গীতি বইয়ের কোনো উদীয়মান তারকা
তুমি হয়ে ওঠো রক্তের ভাষা...
যখন রাজপথগুলো হয়ে যেতো অন্ধকার জঙ্গল
যখন চোখেরা হয়ে যেতো কাঁচ
যখন স্বপ্ন দেখাই অপরাধ হয়ে যেতো
হতাশার বেলকনিতে তুমি মৃত্যু বরণ করো না
তোমার ঠোঁটের ওপর লেগে থাকা প্রতিটি রঙই সেই সব রাত্রির উদযাপন
যা অতিক্রম হয়ে গেছে নিশ্চিত আসন্ন দিনের আলোয়...
আমার ঘাড়কে তুমি পরিবর্তনের সরদল চৌকাঠে পরিণত করো
করো পাহাড় পুস্তকের শীর্ষ লাইন
পাহাড়, যা আমার মৃত্যুর পথে অনবরত সিঁড়ি হয়ে উঠেছে।
চাবুক, যা আমার আর তোমার পিঠের ওপর দগ্ধ হয়ে গেছে
শুধু অবশিষ্ট থাকবে একটি প্রশ্ন: প্রতিটি মঞ্চের দালালরা কোথায়?
কোথায়- যারা ছিলো......যারা আমার আর তোমার কবরের পাথরগুলোও চিবিয়ে খেতো?
তারা কী যারা যাবতীয় শব্দ-বাক্যকে বিবস্ত্র করতো?
তারা কী যারা বাতাসকে কাঁটা বানিয়ে ফেলতো আর রাতের অন্ধকারকে বানাতো আয়না?
তারা কী যারা আমার দেহ থেকে চামড়া টেনে টেনে খুলে নিতো আর হাড়গুলো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ছিদ্র করতো?
আর তারা কী যারা হৃদয়কে দগ্ধ বোমার মতো করে ফেলতো?
তারা কী যারা গায়কের বাহুকে পতাকার খুঁটি বানাতো?
তারা কী যারা খলীফার খাটের নীচে আগুন বিছিয়ে দিতো?
তারা কী যারা দুঠোঁটকে বজ্রধ্বনিতে রূপ দিতো?
তারা হাতকড়ার শোক বদলে ফেলতো যখন নিজের বোন.. মা.. প্রেমকে
সৈনিক এবং উত্তপ্ত কথাবলার এ্যাজেন্টদের হাতের মাঝে পুতুল হিসেবে দেখতো
অতঃপর কামড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলতো হাতকড়া...তারা আসছে
মৃত্যুর কাছে...তারা আসছে
তোমার চোখের ছায়ায়...তারা আসছে!
আমি আসছি তোমার চোখের ছায়ায়...আমি আসছি
বহুল প্রচারক মুখগুলোর ওপর মমিকৃত বাক্যগ্রন্থ থেকে।
সেই মুখগুলো রাস্তায় গিলে ফেলেছে আমার ঘোড়া
সেই পঙ্গপাল রাস্তায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে আমার কপাল
সেই মেঘ, মক্ষি! রাস্তার উপর আমাকে ক্রুশবিদ্ধ করেছে
আমার জন্য তুমি ক্ষমা করো...
এইসব লাঞ্ছনা, ক্ষমা করো আমার জন্য
আমার এই জ্বলন্ত প্রান্তিক নির্ভরতা
ক্ষমা করো আমার জন্য এই নৈকট্য, মিলন
যা আমাকে ফেলে দিয়েছে পাতাবনের এই ঘূর্ণিঝড়ে
আমাকে শহীদের প্রতিরক্ষাকারী করো
ঘাস-তৃণ থেকে
প্রেম থেকে
উপহাস থেকে
পথের ধুলো থেকে কিংবা বৃক্ষের ধুলো থেকে
নারীদের চক্ষু থেকে, সমস্ত নারীদের কবল থেকে
পাথরের সমূহ অপতৎপরতা থেকে
আমাকে এমন করে দাও যেনো আমি ভালোবাসি সেই ক্রুশ যাকে আর কেউ ভালোবাসেনি
এবং আমাকে করে দাও তোমার চোখের সূক্ষ্ম দীপ্তি
যখন আগুনের লেলিহান নিস্তেজ পড়ে!
আমি আসছি তোমার চোখের ছায়ায়... আমি আসছি
সেই ঈগল, যার পালক তারা বিক্রি করে বেড়ায়
তারা মুখোশ পরে বিক্রি করে আহতদের আগুন। তারা ইতোমধ্যে বিক্রি করে দিয়েছে মাতৃভূমি লাঠি দিয়ে যা দিয়ে তারা ভাঙে গায়েনের কথামালা।
তারা বলেছে: হত্যা করো এবং শুধু হত্যা করো...
অতঃপর তারা বলেছে: এই যুদ্ধ আক্রমণ আর পলায়নের...
সুতরাং পালাও...
এবং পালাও...
এবং পালাও...
এবং মেতে ওঠো গর্বে.. মেতে ওঠো গর্বে..
তারা তাদেরকে অসংখ্য গালি দিলো, তারা সমস্ত দেশ ধবংস করল
যখন আমার হাতে ছিলো প্রাচীর আর তুমি ছিলে উদ্যান
তারা তখন তন্দ্রা আঁধারে পাশা খেলতো
যখন জাহান্নামের চাবুুকগুলো আমার চামড়া চুষে খেত
তখন তারা সিংহাসন জয়ের নেশায় মত্ত হয়ে শরাব পান করতো
যখন তাদের অশ্বারোহী রেজিমেন্টগুলো আয়নার ভেতর অতিক্রম করতো
তখন তারা আমাদের সাথে কবিতার পঙক্তি নিয়ে বাহাস করতো এবং বলতো:
তারাই ঘোড়া পুড়িয়ে হত্যা করেছে। বন্দীরা একে একে সকলে উদ্বাস্তু শিবির থেকে বেরিয়ে এসে বলল:
তারা মিথ্যা বলেছে! আমাদের জখমগুলো তাদের শ্রদ্ধার জন্য কোনো বেদি মঞ্চ নয়
তারা তা নিয়ে ব্যবসা করে বিক্রি করে...বিক্রি করে হিত্তীন , বিক্রি করে তলোয়ার
যেনো সিংহাসনের মর্যাদার অভিষেকে তার বেদি নির্মাণ করে
আমি আসছি তোমার চোখের ছায়ায়...আমি আসছি
সমূহ মিথ্যার ধুলো ভেদ করে...আমি আসি
পৌরাণিক কাহিনীর সমস্ত পর্দা ছেদ করে...আমি আসি
তুমি কেবল আমার জন্য...তুমি আমার দুঃখ, তুমিই আনন্দ
তুমিই আমার ক্ষত-রঙধনু
তুমিই আমার হাতকড়া, তুমিই আমার স্বাধীনতা
তুমিই আমার কাদামাটি, আমার উপাখ্যান
তুমি শুধু আমার...তুমি শুধু আমার...তোমার অস্ত্রপাচারে
সমস্ত জখমই এখন উদ্যান
তুমি শুধু আমার...তুমি শুধু আমার...তোমার সমস্ত প্রান্তের স্পর্শে
প্রতিটি উচ্চারণই এক সত্য
তুমি আমার সুশীতল সূর্য
তুমি আমার প্রদীপ্ত রজনী
তুমি আমার মৃত্যু, তুমিই আমার জীবন
আমি নিশ্চয়ই আসবো তোমার চোখের ছায়ায়.. আমি আসছি
বজ্রমুখর ঠোঁটের উদ্যানে ফুটন্ত গোলাপ হয়ে
আমি আসছি আগুনের ধোঁয়ার ভেতর স্পষ্ট হয়ে ওঠা পূর্ণ কিবলা হয়ে
সুতরাং আমাকে স্মরণ করো...যখন আমার চেহারা আর বৃক্ষের ডালপালার উপর জেগে ওঠা চাঁদে এঁটে দিয়েছো কলঙ্ক।
যেমন তুমি স্মরণ করো বৃষ্টি
যেমন তুমি স্মরণ করো নূড়ি পাথর, বাগান
আমাকে স্মরণ করো,
যেমন তুমি স্মরণ করো শহীদের তালিকায় থাকা নানান ঠিকানা
দুর্বল বালকসুলভ দিকগুলোর সাথে আমি বন্ধুত্ব করেছি
তবু আমি মোকাবিলা করেছি শক্তিশালী কায়সারের প্রতিটি সিংহাসন
আপোষ করা সংস্কৃতির সয়লাবে আমি বিক্রি করিনি আমার চিহ্ন, আমার ঐতিহ্য
আমি আস্বাদন করিনি ঘুমেবিভোর দুর্বলের রুটি
আমি কোনো দরকষাকষিতে যাইনি
আমি কোনো মগজ বিক্রির উৎসবে তবলার স্বাদ উপভোগ করিনি
আমি তো শুধু তোমাকে হারিয়ে এক হাতড়ে বেড়ানো শোকগাথার ভেতর, কসাইখানার ভেতর, মহাকাব্যের ভেতর
আমার সূর্যের ভেতর, বিনষ্ট-বিধ্বংস রক্তের ভেতর
আমি আসবো তোমার চোখে যখন আমার ছায়া নিশ্চল জমাট বেঁধে যাবে
আমি আসবো যখন সংগীতেরা তাদের গায়েনদের বিমোহিত করবে!
বাঁশি
১
তোমাকে আমি ভালোবাসি বা নাই বাসি
আমি চলে যাবো, রেখে যাবো, আমার পেছনে হারানো গ্রামগুলোর আসন্ন ঠিকানা।
আর আমি অপেক্ষা করছি প্রত্যাবর্তনকারীদের। তারা মৃতদের মুহূর্তগুলো চেনে এবং তারা আসছে।
যখন আমি তোমাকে ভালোবাসি তখনই তোমাকে ভালোবাসি না। বেবিলনের দেয়ালগুলো দিনের ভেতর সংকীর্ণ হয়ে গেছে। অথচ তোমার দুচোখ তার আলোর ভেতর বিস্তৃতভাবে খুলে যায়। প্রসারিত হয় তোমার মুখ।
যেনো এরপর কখনো তোমার জন্ম হয়নি। কখনো আমরা আলাদা হইনি। কখনো তুমি আমাকে মাটিতে ফেলে যাওনি। বস্তুত ঘূর্ণিঝড়ের মাথার উপর থাকে প্রতিটি সুন্দর বাক্য, প্রতিটি বিচ্ছেদের মিলন।
এবং আমাদের মাঝে এই মিলন ছাড়া আর কিছুই নেই। আমাদের মাঝে এই বিচ্ছেদ ছাড়া কিছুই নেই। আমি তোমাকে ভালোবাসি বা নাই বাসি আমার থেকে পালিয়ে যায় আমার ললাট। আমি অনুভব করি তুমি কিছুই না অথবা অনেক কিছু
এবং তুমিই হারানো গ্রামগুলোর পরবর্তী সূচনা।
আমি তোমাকে চাই বা না চাই
নদীদের কুলুকুলু শব্দ পুড়ে যাচ্ছে আমার রক্তের ভেতর
একদা তোমাকে দেখি যখন আমি চলে যাচ্ছি
আমি অদৃশ্য বিষয়গুলোর বন্ধুত্ব ফিরিয়ে আনার জিহাদ করেছি।
আমি বিজয়ী।
প্রতিটি শরতের কাছে বিস্তীর্ণ দুটি চোখের গর্বের জন্য আমি জিহাদ করেছি
আমি বিজয়ী
আমি বিজয়ী
আমি জিহাদ করেছি তার কোমরের পাশে জলপাইয়ের মতো মোলায়েম একটি নাম এঁকে দেয়ার জন্য।
অতঃপর সে নক্ষত্রের জন্ম দিলো।
তোমাকে চাই যখন বলবো তোমাকে চাই না ............
আমার চেহারা ঢলে পড়েছে। দূরের নদী গলে যায় আমার দেহের ভেতর। আর কৌটাবদ্ধ স্যুপের মতো তারা আমার রক্ত বিক্রি করছে বাজারে বাজারে। তোমাকে চাই যখন বলবো তোমাকে চাই .....
হে নারী!!
যে নারী স্থাপন করেছে তার কোলের ভেতর ভূমধ্যসাগরের তীর। কাঁধের ওপর তার বেঁধেছে সমস্ত শিকল।
তোমাকে চাই বা না চাই........................
নদীদের কুলুকুলু ডাক, পাইন গাছের মর্মর শব্দ, সমুদ্রের গর্জন, আর বুলবুলিদের পালক পুড়ে যাচ্ছে আমার রক্তের ভেতর। একদিন তোমাকে দেখবো যখন আমি চলে যাবো।
তোমার গান গাই বা না গাই
আমি গভীর স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছি। আমি তীব্র চিৎকার করছি।
গর্জনের কোনো মুহূর্ত নেই। স্তব্ধতার কোনো মুহূর্ত নেই।
তুমিই একমাত্র গর্জন।
তুমিই একমাত্র নিস্তব্ধতা।
আমার চামড়া জড়িয়ে আছে আমার কণ্ঠযন্ত্রের সাথে
আমার জানালার নিচ দিয়ে বাতাস পার হয়ে যাচ্ছে প্রহরীর পোষাকে
মূলত অন্ধকারের কোনো মুহূর্ত নেই। যখন
আমার হাতের তালু বেয়ে নেমে আসছে আর্মি
আমি তখনো কিছু না কিছু লিখেই যাচ্ছি
যখন আমার পা বেয়ে নেমে আসছে আর্মি
আমি তখনো হাঁটছি......
যখন আমার দৃষ্টি বেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর্মি
আমি তখনো তোমাকে দেখতে থাকি... দেখি নতুন করে আমার আকার
তোমার গান গাই বা না গাই
তুমিই একমাত্র গান। একমাত্র সুর।
আমি নিরব হয়ে গেলে তুমিই গাইবে আমাকে
এবং তুমিই একমাত্র নিরবতা।
এখন সময় কবির আত্মহত্যা করার
এখন সময় হয়েছে কবির আত্মহত্যা করার
আর কোনো কিছুর জন্য নয় বরং কেবলমাত্র সময় এখন তার নিজেকে হত্যা করার
কবি বললেন: আমি কক্ষনো একটি মধুমক্ষিকেও মেনে নেবো না যে, সে আমাকে শোষণ করে খাবে
কবি বললেন: আমি কক্ষনো কোনো চিন্তাকে মেনে নেবো না যে, সে আমাকে হত্যার কথা বলবে
কবি বললেন: আমি কক্ষনো কোনো নারীকে মেনে নেবো না যে, সে আমাকে তার হাঁটুর ওপর জ্যান্ত ছেড়ে চলে যাবে।
ত্রিশ বছর ধরে
কবি লিখছে কবিতা; অথচ কবিতা আমাকে ভুলে যায়। আমরা সমস্ত দূর্গ থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছি
আমরা যবের স্বাদ পেয়েছি যবের দানায়। আর সেই যব আমাকে ভুলে যায়। আমরা হারিয়েছি সমস্ত ভূমি। তাই যব-কবিতা আমাকে ভুলে যায়। এই ভূমিতে এই কবিতায় আমিই সর্বশেষ।
প্রতিটি বস্তুরই একটি আকার আছে আর আমি সেই বস্তুর আয়না।
প্রতিটি মৃত্যুই একটি আকার। প্রতিটি দেহই একটি আকার।
প্রতিটি অন্তিম যাত্রাই একটি আকার। প্রতিটি দেশই একটি
আকার। আমি বললাম: আমরা পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছি। কোথায় আমার মনুষ্যত্ব? কোথায় আমি?
কবি বললেন: রূপেরই কেবল রূপ থাকে।
ত্রিশটি শিত
কবি লিখছে কবিতা। নির্মাণ করছে একটি জগত যা তারই চারই পাশে ভেঙ্গে ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে।
পঙ্গু-বিকলাঙ্গরা জড়ো হলো যেনো আঁকতে পারে আকাশের একটি দরোজা, একটি চড়–ই।
যখনই আমাদের পাশে দেয়াল ভেঙ্গে পড়লো
সে ভাষার ভেতর মজবুত করলো ঘর।
যখনই এই ভূমি আমাদের কাছে সংকীর্ণ হয়ে গেলো
সে তৈরী করলো একটি বাগান। তার সবটা জুড়েই বিস্তৃত হলো ত্রিশটি শীত। আর সে-ই থাকে এখন আমার বাইরে।
কবি বললেন: যখন আমরা আসবো প্রাচীন নগরীর কাছে
যখন তাকে দেখতে পাবো অদৃশ্য।
বিরান।
তুমি তা বিশ্বাস করো না
তুমি ছেড়ে যেও না
সে-ই রাজপথ যার কোলে আমরা বিচরণ করি, ফিরে আসি।
পৃথিবী মিথ্যা বলছে। অথচ কবির হাতে ঝুলন্ত স্বপ্নরা মিথ্যা বলে না।
ত্রিশটি শরৎ
কবি লিখছে কবিতা। কবি বেঁচে থাকে, ভালোবাসে তার সমস্ত আকারের জন্য।
কবি প্রবেশ করেন কারাগারে। অতঃপর চাঁদ ছাড়া তিনি কিছুই দেখেন না।
কবি প্রবেশ করেন বীজদানায়। অতঃপর ফল ছাড়া তিনি কিছুই গ্রহণ করেন না।
আমি বললাম: আমাদের ভেতরের নারীগণ কী? কবি আমাকে বললেন: নারী এক মার্জনার আপেল।
আমি চিৎকার করে উঠলাম কোথায় আমার মনুষ্যত্ব?
অতঃপর দরোজা বন্ধ হয়ে গেলো যেনো সে আমাকে তার বাইরে দেখতে পায়। সে আমাকে নিয়ে চিৎকার করলো: রূপের ভাব আর সুরের সিঁড়ি বেয়ে এক অপেক্ষমান নারী আসছে।
এখন সময় হয়েছে কবির আমার ভেতর থেকে চিরদিনের জন্য বেরিয়ে যাওয়ার
আমার হৃদয় কোনো পাতা নয়
সময় হয়েছে আমার বিচ্ছেদ হবার
আয়নার ভেতর থেকে পত্রের শাখা থেকে
সময় হয়েছে এখন ভ্রমরার গোলাপ থেকে সন্ধ্যার লালিমার দিকে বেরিয়ে যাবার
সময় হয়েছে এখন গোলাপের দগ্ধ হবার জন্য কাঁটা থেকে বেরিয়ে যাবার
সময় হয়েছে এখন কাঁটার আমার সমগ্র হৃদয় ভেদ করে প্রবেশ করার
যেনো আমি আমার হৃদয় দেখতে পাই, শুনতে পাই আমার হৃদয়, বুঝতে পারি হৃদয়।
সময় হয়েছে এখন কবির আত্মহত্যা করার
আর কোনো কিছুর জন্য নয়
বরং সময় কেবল এখন কবির নিজেকে হত্যা করার।
আমরা বেরিয়ে যাবো
আমরা বেরিয়ে যাবো খুব শীঘ্রই
আমরা বলেছি, আমরা বেরিয়ে পড়বো অতিসত্ত্বর
আমরা তোমাদেরকে বলেছি, খুব অল্পক্ষণের মধ্যেই আমরা আমাদের থেকে বেরিয়ে পড়বো। নিশ্চয়ই আমরা বেরিয়ে যাবো শুভ্রতার দ্বার প্রান্তে। আমরা মগ্ন হই প্রবেশের নিগূঢ় এবং বের হবার অর্থের ভেতর।
আমরা বেরিয়ে যাবো এক্ষুণি, আমাদের পিতা তাকিয়ে আছেন, তিনি আমাদের ভেতর আছেন তার জননী ভাষা পর্যন্ত।”
আমরা বলেছি,
নিশ্চয়ই আমরা বেরিয়ে যাবো। তোমাদের উচিত, তোমরা শুরু করো রক্তের পদক্ষেপ যে রক্ত আমাদের ভেতর থেকে প্রবাহিত হয়েছে, যে রক্তে তোমাদের তোপ-কামানগুলো ঢেকে গেছে। পাঁচ মিনিটে আটকিয়ে দাও আক্রমণকারী বিমানগুলো, তিন মিনিটে জলে-স্থলে রুদ্ধ করো বোমা, গোলা বর্ষণ। যেনো বহিরাগতরা বেরিয়ে যায়, যেনো ভেতরওয়ালারা প্রবেশ করে ভেতরে।
আমরা অবশ্যই বেরিয়ে যাবো। আমরা বলেছি, নিশ্চয়ই আমরা বেরিয়ে যাবো।
সুতরাং তোমাদের কাজ হলো, শেষ বিদায়ের তরিকা রেখে যাওয়া। আমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
অচিরেই আমরা আমাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো জমা করবো ব্যাগের ভেতর। তোমাদের কাজ হলো পাঁচ মিনিটে গোলা বর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া। যেনো পুরনো চুম্বন থেকে সুন্দরী নারীরা তাদের স্তনগুলো ধুয়ে নেয়।
আমরা অবশ্যই বেরিয়ে যাবো
আমরা বলেছি, অল্পক্ষণের মধ্যেই আমরা বেরিয়ে পড়বো। আমরা নিশ্চয়ই বেরিয়ে যাবো আমাদের ভেতর থেকে। আমরা নিক্ষেপ করেছি সমুদ্র তীরে আমাদের দেহতীর। আমরা ভেঙ্গে পড়ি যখন আমরা বিজয়ী হই তোমাদের উপর। যখন আমরা বিজয়ী হই আমাদের উপর।
আমরা সড়ক বাড়িয়ে দিয়েছি ছায়া হয়ে যাতে নগরের নাম হয় ভাবের আকার।
আমরা যখন চলে যাবো, আমরা যখন দূর হয়ে যাবো সেই ভাবে তখন স্মরণ হবে পিতা, পুত্র, আত্মার।
আমরা নিশ্চয়ই বেরিয়ে যাবো। আমরা বলেছি, অবশ্যই আমরা বেরিয়ে যাবো।
তোমাদের কাজ হলো, কেবল তোমরা প্রবেশ করো ছোট ছোট সাতটি রাতে নতুন বাতাসে।
অতঃপর তোমরা কক্ষনো পাবে না কোনো কন্যা শিশু যার কেশগুচ্ছ চুরি করবে অথবা কোনো তরুণ যার প্রজাপতি চুরি করবে
এবং তোমরা কক্ষনো পাবে না কোনো দেয়াল যার উপর তোমরা স্নবেরী এবং আমার নিষিদ্ধ হবার আদেশ লিখবে।
এবং তোমরা কক্ষনো পাবে না কোনো লাশ যাতে কুসংস্কারের পথের বাঁশি খোদাই করে লিখবে।
এবং তোমরা কক্ষনো পাবে না কোনো বেলকনি যেনো আমাদের ভেতরে উঁকি মেরে দেখবে ভূমধ্য সাগর।
এবং তোমরা কক্ষনো পাবে না প্রহরা দেবার কোনো সড়ক।
এবং তোমরা কক্ষনো পাবে না আমাদের নির্দেশকারী কোনো চিহ্ন
এবং তোমরা কক্ষনো পাবে না আমাদের নির্দেশকারী কোনো বস্তু
আমরা বের হবার আগেই বের হয়ে গেছি, সুতরাং লাশের উপর বিজয়ের নিশান উঁচু করো না।
এখানে আমরা, আমরা এখানেই। আমরা ওখানে নই এবং ওখানে আমরা নই।
এখানেই আমরা সমস্ত উপাদান জুড়ে। আমরা এখানেই বাতাসের ভেতর লুকনো রক্তপিণ্ড যাকে তোমরা হত্যা করছো।
আমরা নিশ্চয়ই বেরিয়ে যাবো!
আমরা বলেছি, আমরা অবশ্যই বেরিয়ে যাবো। সুতরাং তোমাদের কাজ হলো, আমাদের ছায়াগুলো......আমাদের ছায়াগুলো চূর্ণ বিচূর্ণ করে দাও
তোমরা তাকে তার মাতৃভূমির কাছে নিয়ে যাও কিংবা কাসতানা বৃক্ষের উপর ঝুলিয়ে দাও তোমরা এখানে থাকবে কিংবা আমরা থাকবো না! প্রবেশ করো তোমাদের খেয়ালের ভেতর। আর চাষ করে যাও আমাদের সন্দেহগুলো।
আমরা অচিরেই বেরিয়ে যাবো!
আমরা বলেছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই পাঁচটি মুহূর্ত, একজন খুন আর পাঁচজন আহত হওয়ার পর আমরা বেরিয়ে যাবো প্রথম মহাসমুদ্র থেকে।
আমরা বেরিয়ে যাবো পরিবারের সাথে অস্ত্রের ঘর্ষণের প্রতিধ্বনির চারপাশে শ্র্রেণী পতনের পর।
আমরা অবশ্যই বেরিয়ে যাবো প্রতিটি ঘর থেকে যা আমাদেরকে দেখেছে আমরা ঘর, ঘরের প্রতিবেশি এবং আমাদের উপর আক্রমণকারী ট্যাংকগুলো ধ্বংস করছি।
আমরা নিশ্চয়ই বেরিয়ে যাবো প্রতি মিটার-ইঞ্চি থেকে, প্রতিটি দিন থেকে যেভাবে আমাদের ভেতর থেকে বেরিয়ে যায় মরুভূমি, বেদুঈন।
আমরা অচিরেই বেরিয়ে যাবো!
আমরা বলেছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা আমাদের ভেতর থেকে আমাদের কাছেই বেরিয়ে আসবো: আমরা নিশ্চয়ই বেরিয়ে যাবো সাগরের বুকে- শুভ্র, নীল- ওখানে আমরা ছিলাম এবং এখানেও আমরা ছিলাম।
আমাদের পথ দেখায় লৌহ কঠিন অধরা, অদৃশ্য। ওখানে বায়রূত ছিলো এবং এখানেও ছিলো।
আর ছিলাম আমরা দেয়াল ঘেরা সময়ের এই ভূখণ্ডে
আর ছিলাম আমরা কর্ণফুলের আলোয়।
বিদায় তাদের জন্য, যারা আমাদের সময়ের ভেতর থেকে নিরব নিস্তব্ধ হয়ে অচিরেই আসবে
বিদায় তাদের জন্য, যারা আমাদের রক্তের ভেতর থেকে নিষ্ক্রিয়, স্থির হয়ে শিঘ্রই আসবে। আমরা অবশ্যই গভীরে প্রবেশ করবো।
আমরা নিশ্চয়ই বেরিয়ে যাবো!
আমরা বলেছি, নিশ্চিত আমরা বেরিয়ে যাবো যখন অবশ্যই আমরা প্রবেশ করবো।
সত্যের স্বরূপ
সত্য এক প্রতীকি নারী
যখন তার দেহের ভেতর মিশে যায়
আগুন-পানি।
সত্য এক সম্পর্ক
যখন তার রাত্রির ভেতর মিশে যায়
রক্তের সাথে রক্ত।
সত্য এক প্রদীপ্ত শাদা
যখন আত্মত্যাগ হাঁটে
বিচ্ছিন্ন পায়ে
তার ধীরতার দূরত্বে
সত্য পদ্যের ভেতর
এক স্বকীয়তা
যাহা সত্য তাহা সত্য নয়
কিংবা বিপরীতে সত্য
মূলত সত্য তাই যা তার ছায়া থেকে বিন্দু বিন্দু ঝরে পড়ে।
রূপকের চাতুর্য
আমি এক রূপককে বললাম: আমি বিজয়ী
আমি এক রূপককে বললাম: আমি পরাজয়ী
আর দূরের এক পূরনো উপত্যকা আমার সামনে বিস্তারিত হয়ে গেলো
আর আমি দীর্ঘ হলাম সিনদিয়ান নগরীর অবশিষ্টাংশের ভেতর
যেখানে দুটো জলপাই
আমার তিন দিক থেকে জড়ো হলো
দুটি পাখি আমাকে বহন করে নিয়ে গেলো
আকাশ থেকে পাতাল থেকে
শূন্য দিগন্তে।
যেনো আমি না বলি: আমি বিজয়ী
যেনো আমি না বলি: আমি এখনো পরাজয়ী
যা চাই তাই দেখি
এই রাত্রিতে আমার পেছনে
বৃক্ষের পাতায়, জীবনের পত্রে পত্রে
আমি অনবরত দৃষ্টি খুলে দেখতে থাকি।
আমি পানির স্মরণে, ধুলো মাটির স্মৃতিতে
স্থির তাকিয়ে থাকি
আমি ধ্যানমগ্ন হই-
এই রাত্রির ভেতর এমন রাত ছাড়া আর কিছুই দেখি না।
কয়েকটি মুহূর্ত ঠুকরে ঠুকরে খায় আমার জীবন
কয়েকটি সেকেন্ড আবার ছোট করে যায় রাত্রির দৈর্ঘ্য
রাত আর বাকি থাকে না শুধু বাকি থাকে একটি সময়
যেখানে আমরা লড়াই করি সময়ের প্রতিকূলে
কিন্তু রাত তার অন্ধকারেই ফিরে আসে
আর আমি তার ছায়াময় গহবরে পড়ে থাকি...
তোমার অবশিষ্ট জীবন শকুনের জন্য
তোমার অবশিষ্ট জীবন শকুনের জন্য। তুমি কে, যাতে তুমি একাই পাথর খুঁেড় যাচ্ছ
পার হয়ে যাচ্ছ সর্বশেষ শূন্যতা, সর্বশেষ শুভ্রতা? চমৎকার!
দুজন নি:স্ব, দুজন বিধবা তোমার পাশেই সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে
এবং তোমার পরেরজন কেবল শূন্যপেটের হাহাকার নিস্তব্ধতা
এই হলো মানুষের তামাশার পরিস্কার প্রমাণ। এই হলো মানুষের মুজেযার সাক্ষ্য।
তুমি কি এখন এই কালে নিজের ছায়াকে বিশ্বাস করবে? তুমি কি এমন সময়ে
বিশ্বাস করবে গোলাপ?
অথচ তুমি কি নির্ভুলে উচচারণ করে ফেলো তোমার নাম, দেশের নাম, এমনকি আমার নাম। বন্ধু! যেনো তুমি অর্জন করে ফেলেছো তোমার প্রতিশ্রুতি!
আমরা অতিশয় খুলে দিচ্ছি তোমার জন্য গোলাকার মঞ্চ
তুমি একাই এগিয়ে যাও শকুনের কাছে
তোমার আর কোনো পৃথিবী নাই কারণ তুমি ধবংস হয়ে যাবে
শকুনের কাজ এখন তোমার থেকে মুক্ত হওয়া
শকুনের কাজ এখন তোমার চামড়া ছিঁড়ে ফেলা।
যেনো আমি ঘুমাতে পারি তুমি কি পার না একটি চাঁদকে নিভিয়ে দিতে?
একটু ঘুমাবো এইতো তোমার জানুর ওপর। অতপর যবের ঢেউয়ের স্তুতিতে
বাক্যরা জেগে উঠবে। যা মর্মর পাথরের ভেতর থেকে ভেদ করে ওঠে
আমি দেখেছি আমার ছায়া
দূর থেকে এগিয়ে আসছে
বেলকনির মতো আমি উঁকি মেরে দেখি আমার ইচ্ছার বিষয়
আমি উঁকি মেরে দেখি আমার বন্ধুরা বয়ে যাচ্ছে
সন্ধ্যার ডাক: পানীয়, রুটি
আমি উঁকি মেরে দেখি গাঙচিল, সিপাহীদের লরী
এই ভূমির অসংখ্য বৃক্ষ ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আমি উঁকি মেরে দেখি কানাডা থেকে হিজরতকারীর কুকুর দেড় বছর ধরে ধাবমান.....
আমি উঁকি মেরে দেখি “আবু তাইয়্যেব মুতানাব্বী’র নাম
তাবরিয়া থেকে সংগীতের দূর্গের উপর দিয়ে মিশরের দিকে ছুটে যাচ্ছে
আমি উঁকি মেরে দেখি পারস্যের গোলাপ
লোহার বেড়ির উপর দিয়ে ঊর্ধ্বে উঠে যাচ্ছে
বেলকনির মতো আমি উঁকি মেরে দেখি আমার ইচ্ছার বিষয়
আমি উঁকি মেরে দেখি বৃক্ষ রাতকে পাহারা দিচ্ছে
পাহারা দিচ্ছে ঐসব মানুষের ঘুম যারা আমাকে দেখতে চায় মৃত.....
আমি উঁকি মেরে দেখি বাতাস খুঁজে বেড়ায় নিজের ভেতর
বাতাসের দেশ...
আমি উঁকি মেরে দেখি পারস্য, রোমীয়, সুমেরিয় আর
নতুন নতুন শরণার্থী...
আমি উঁকি মেরে দেখি তাগরার এক দরিদ্র নারীর হার
পিষে যাচ্ছে সুদর্শন সম্রাটের গাড়ির বহর...
আমি উঁকি মেরে দেখি বাদশার নিন্দায় পিষ্ট হুদহুদ পাখি
আমি উঁকি মেরে দেখি প্রকৃতির পেছনেঃ
কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে....ছাইয়ের আড়ালে ঘটতে যাচ্ছে কিছু
আমি উঁকি মেরে দেখি আমার দেহ কোনো এক দূরের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত...
বেলকনির মতো আমি উঁকি মেরে দেখি আমার ইচ্ছার বিষয়
আমি উঁকি মেরে দেখি আমার ভাষা দুদিন পর অধরা হয়ে গেছে...
আমি উঁকি মেরে দেখি এক নারী নিজের ভেতর রোদ পোহাচ্ছে
আমি উঁকি মেরে দেখি নবীদের শোভাযাত্রা
তারা নগ্নপায়ে ঊর্ধ্বে উঠে যাচ্ছে জেরুসালেমে
আমি প্রশ্ন করি: এই আধুনিক যুগের আধুনিক নবী আছে কি?
বেলকনির মতো আমি উঁকি মেরে দেখি আমার ইচ্ছার বিষয়
আমি উঁকি মেরে দেখি আমার কায়া পালিয়ে যাচ্ছে নিজের আত্মা থেকে পাথরের সিঁড়ির দিকে আর বহন করে নিয়ে যাচ্ছে আমার মায়ের রুমাল। আর বাতাসে কম্পন তুলছে: কী হতো যদি আমি শৈশবে ফিরে যেতাম। যদি ফিরে যেতাম হায় মা তোমার কাছে...আর তুমি ফিরে আসতে আমার কাছে
আমি উঁকি মেরে দেখি যায়তুনের দণ্ড নবী যাকারিয়াকে লুকিয়ে ফেলেছে।
আমি উঁকি মেরে দেখি সেই সব শব্দ যারা “লিসানুল আরব” থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অল্প কয়েকজন আশখিলিউসই শান্তির দরোজা খোলার জন্য যথেষ্ঠ
এ্যান্তনিওর ক্ষুদ্র একটি বার্তাই যথেষ্ঠ যুদ্ধ জ্বলে ওঠার জন্য
আমার হাতের ভেতরে নারীর এক হাতই যথেষ্ঠ
যাতে আমি স্বাধীনতার সাথে গলা মিলাই
আর যাতে আমার দেহে নতুন করে জোয়ার-ভাটা শুরু হয়ে যায়
বেলকনির মতো আমি উঁকি মেরে দেখি আমার ইচ্ছার বিষয়
আমি উঁকি মেরে দেখি আমার ছায়া
ছুটে আসছে
সুদূর থেকে...
অন্য এক মৃত্যু... আমি তোমাকে ভালোবাসি
১
আমি নতুন করে গড়ে তোলি অতীতের দিন- যেনো তোমাকে ভালোবাসি দিন.....আর সেই দিনই আবার আমি অতিক্রম করে যাই
সে তো কোনো প্রেম ছিলো না।
কারণ যে পাহাড় আমি দেখতে পাই না- আমার দুটি হাত তার চেয়ে অধিক ক্ষুদ্র।
আমি পূর্ণ করি এই আদি উচ্চতা, আমি ঊর্ধ্বে উঠে যাই এই অতি ক্ষুদ্র ঈশ্বরের...
সে তো কোনো দিন ছিলো না
কারণ দূর বিস্তৃত শস্যের বিছানা এক প্রাচীরের মুহূর্ত
আমি পূর্ণ করি এই আদি উচ্চতা, আমি ঊর্ধ্বে উঠে যাই এই ক্ষুদ্র ঈশ্বরের...
অথচ তুমি পৃথিবীর নারী ছিলে না দিনের মতো
কারণ যুদ্ধরা তোমার কটি দেশ- কবুতরের ঝাঁক ছুঁয়ে যায়...
অথচ আমাদের মৃত্যুর উপর দিয়ে তুমি বিস্তীর্ণ করো শান্তির দিগন্ত
আমার পথ বেঁধে যায় তোমার দুঠোঁটে। অতঃপর আমি ঊর্ধ্বে উঠে যাই এই ক্ষুদ্র ঈশ্বরের...
এবং আমি কখনো ধুলো-মাটিতে খেলতাম না
কারণ মেশিনগানরা আমাকে চুরমার করে দেয় যখন তোমার দুচোখ ঘোষণা দেয়--
নগরের শহীদদের কাছে যাবার পথগুলো তোমার হাত থেকে শূন্য হয়ে গেছে
তাই আমি উঠে যাই ঊর্ধ্বে এই ক্ষুদ্র ঈশ্বরের...
সে তো কোনো প্রেম ছিলো না
সে তো কোনো দিন ছিলো না
আমি ছিলাম না
তুমি ছিলে না
দ্যাখো আমিই অতীত হয়ে যাওয়া দিনকে নতুন করে গড়ে তোলি
কারণ আমি ভালোবাসি তোমায় দিন হয়ে
আর সেই দিন আবার আমি অতিক্রম করে যাই...
২
আমি তোমার কাছে চেয়েছি যে, তুমি-- আমি এক শরৎ, নদীকে পরিধান করবে
আমি তোমার কাছে চেয়েছি যে, তুমি-- শুধু আমি এই নদীকে অতিক্রম করে যাবে
আর একই সঙ্গে একাকার তুমি বিস্তারিত হবে শস্যে ফসলে
আমি তোমার কাছে চেয়েছি যে, আমি হবো না এবং তুমিও হবে না আমার
আমি তোমার কাছে চেয়েছি যে, তুমি আমাকে পরবে শরৎ হিশেবে
যেন আমি তোমার মধ্যে শুকিয়ে লীন হয়ে যাই
আবার একই সাথে তোমাতেই বেড়ে ওঠি
আমি তোমার কাছে চেয়েছি যে, তুমি আমাকে পরবে নদী হিশেবে
যেন আমি এই শরতে আমার স্মৃতিকে হারিয়ে ফেলি
আবার একই সাথে চলতে থাকি অবিরাম।
প্রতিটি বস্তুতেই আমরা অস্তিত্বমান হই
যা আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে তাই আমাদেরকে একীভূত করে
এ কোনো প্রেম নয়
প্রতিটি বস্তুতেই আমরা হয়ে ওঠি
যা আমাদেরকে চূর্ণবিচূর্ণ করে তাই আমাদেরকে নতুন প্রাণ দেয়
এ কোনো প্রেম নয়
এ তো আমিই......
আমি তোমার কাছে আসি তোমার ভেতর থেকেই, তবে কেমন করে আমি ভালোবাসি তোমায়?
কেমন করে তুমি হয়ে উঠবে আমার জীবনের বিস্ময়
আমি জানি:
নারীরা স্বপ্ন ছাড়া সমস্ত প্রেমিকের বিশ্বাস ঘাতকতা করে
আমি জানি:
মাটি জীবন ছাড়া সমস্ত প্রেমিমের বিশ্বাসঘাতকতা করে
আমি তোমার ভেতর থেকে আসি তোমার কাছে অপেক্ষা হয়ে
আমি তোমার ভেতর ডুবে যাই আত্মহত্যা হয়ে
আমি তোমার ভেতর থেকে আসি তোমার কাছে বিস্ফোরিত হয়ে
আমি তোমার ভেতর ঝরে পড়ি টুকরো টুকরো হয়ে
কী করে পঞ্চেন্দ্রিয় অলৌকিকতাকে মোকাবিলা করার সাধ করে
অথচ তোমার দুচোখই স্বয়ং দুটি মুজিযা
তুমি ঘুমিয়ে থাকো যখন আমাকে তরঙ্গরা কেড়ে নেয়
তোমার বুকের শেষ প্রান্তেই তো সাগরের শুরু
জগত এই সন্ধাকে দুটি দিকে ভাগ করে রেখেছে:
একদিকে তুমি আরদিকে এই পৃথিবী
কোথা থেকে আমি সমস্ত দিকপ্রান্তের আওয়াজ জমা করবো যাতে আমি চিৎকার করি: আমি তোমাকে ভালোবাসি
৩
এক নতুন মৃত্যুর পর তুমি আমার স্বাধীনতা হয়ে যাও
আমি ভালোবাসি
আমি আমার মৃত্যুকে নতুন করে নির্মাণ করি
আমি কালকে সংরক্ষণ করি, আমি উঠে যাই উর্ধ্বে
তোমার দুচোখ আমার স্বপ্নের জানালা আসে না
প্রতিটি স্বপ্নে আমি গড়ে তুলি স্বপ্ন, আমি স্বপ্ন দেখি
মারিয়া বললো: আমি তোমাকে আমার ঘুমের কামরা দেখাবো
আমি বললামঃ আমি তোমাকে দেখাবো আমার প্রিজনসেল
আমি কেনো তোমাকে ভালোবাসবো?
কারণ একটি শিশু, যে কিনা আমার হিজরতকে বিলম্বিত করেছে, মারিয়া!
আমি তোমাকে আমার বাসরের আংটি দেখাবো
আমি তোমাকে আমার হাতকড়া দেখাবো, দেখাবো আমার অতীত
-তুমি কেনো যুদ্ধ করবে?
এমন একটি সময়ের কারণে যেখানে এখন আর কোনো নবী নেই।
মারিয়া, তুমিও একজন সৈনিক হয়ে যাও, আমার পথ রুদ্ধ করছো বলো: তোমার নাম কী?
আমি তীব্রভাবে বললাম, আমিই সাগর তরঙ্গে চিরুনি করি আমার সংগীতে, সুরে, রক্তে
যেনো তুমি হয়ে ওঠো একজন মারিয়া।
-কোথায় যাচ্ছো?
*আমি যাচ্ছি প্রথম সারিতে যেখানে আর পূর্ণ করার কিছুই নেই
-মারিয়ারা ফিরে আসবে বলে শহীদেরা কি তাদের পাঁজর নিয়ে খেলা করে?
*তুমি ফিরে আসো, অথচ তারা আর ফিরে না।
-তুমি কি তাদের একজন ছিলে?
* আমি ফিরে এসেছি কারণ আমি অর্ধ শহীদ
কারণ আমি মারিয়াকে দেখেছি
-আমি অবশ্যই তোমাকে দেখাবো আমার ঘুমের কামরা
* আমি অবশ্যই তোমাকে দেখাবো মারিয়া, আমার বন্দীসেল
৪
দুজন আগুন্তুক
গোত্রগুলো আমার কাপড়ের নিচ দিয়ে হিজরত করছে
আর লুকাতে গিয়ে শিশুটি তোমার হাঁটুর ফাঁক ভরে ফেলছে।
আর আমি বলি যে, এ তোমার কাপড় কোনো কাফন নয়।
দুজন আগন্তুক
সাবধান, পাহাড়, পাহাড়, পাহাড়.......
দুজন আগন্তুক
দুটি দিনের মধ্যে জন্ম হয় আমাদের জন্য এক নতুন দিন
আমরা তার কী নাম দিই
আমি বললাম: দেশ
আগন্তুক
সাবধান, বালু বালু বালু.......
আগন্তুক
এবং পৃথিবী তার সৌন্দর্য প্রকাশ করলো
-তুমিই তার সৌন্দর্য-
এবং আকাশ বয়ে চলে তোমার হাতের তলদেশ দিয়ে
আগন্তুক
সাবধান, উত্তর উত্তর উত্তর......
আগন্তুক
তোমার চুলই আমার ছাদ আর তোমার দুহাতের তালু দুটি কণ্ঠ।
একটি শব্দ স্পর্শ করি
আরেকটি শব্দ শুনে মগ্ন হই।
তোমার প্রেমই আমার তরবারী
তোমার দুচোখ দুটি নদী
আর এখন আমি সাক্ষ্য দিই, তোমার উপস্থিতিই একটি মৃত্যু
এবং তোমার অনুপস্থিতি দুটি মৃত্যু
কারণ আমি চলি খঞ্জরের উপর দিয়ে আর সুর তুলি
মৃত্যু জানে, আমি
তোমাকে ভালোবাসি, কারণ আমিই
অতীতের দিন নতুন করে নির্মাণ করি
যেনো আমি দিন হয়ে তোমাকে ভালোবাসি
আর সেদিন আবার অতিক্রম করে যাই......
৫
আমি শুনেছি আমার হত্যার কথা, অতঃপর আমি তোমাতে মগ্ন হই
অথচ তুমি কখনো মিলিত হওনি
অন্তিম যাত্রার রঙ ছিলো বেগুনি
আর আমি ছিলাম ক্রমাগত সূর্যের সাথে ধাবমান--
হে অসম্ভব সম্ভবকারী।
খেজুরের ছায়ারা আমাদের সেসব পদক্ষেপ ঢেকে দিয়েছিলো
যার গতি ছিলো সকাল থেকে সন্ধ্যা
আমি সূর্যের সাথে এগিয়ে যাচ্ছিলাম
আমি ছিলাম নিহত যে আর ফিরে আসবে না।
তোমার দুহাতের সীমানাগুলোর পেছনেই যে জানাযা আমি ভুলে গেছি
আমি শুনেছি আমার রক্ত, আমার হত্যা। অতঃপর আমি তোমাতে মগ্ন হই....
আমি কোথায় যাই?
আমার সাথে আমার ঘরের চাবিগুলো নেই।
আমার ঘরের সামনে আমার ঘর নেই।
আমার আড়ালে আর কোনো আড়াল নেই
আমার সমুখে আর কোনো সমুখ নেই।
আমি কোথায় যাই?
আমার রক্ত আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, সমস্ত যুদ্ধ আমার সাথেই যুদ্ধ করছে আর যাবতীয় দিকপ্রান্ত গন্তব্য আমাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে আমার দিক থেকে, আমার গন্তব্য থেকে
আমি যাচ্ছি এমন একদিকে যার কোনো অস্তিত্ত্ব নেই।
যেনো আমার কপালের ওপর তোমার দুটি হাত দুটি মুহূর্ত
আমি ঘুরছি ঘুরছি
অথচ সেগুলো আর যাচ্ছে না
আমি দৌড়াচ্ছি দৌড়াচ্ছি
অথচ সেগুলো আর আসছে না।
যেনো তোমার দুটি হাত চিরন্তন
হায়! দেহের ভেতর এমন যে সময়
মৃত্যু জানে, আমি তোমাকে ভালোবাসি
সে আমার সময়কে চেনে
চেনে বলেই সে আমার কণ্ঠ বহন করে
তোমার কাছে সে আসবে ডাক হরকরাদের মতো
কর সংগ্রহকারীদের মতো
সে জানালা খুলবে অথচ সে জানালা কোনো বৃক্ষই দেখবে না
(আমি চলে গিয়েছি অথচ আমি স্বীকার করিনি)
মৃত্যু জানে, আমি তোমাকে ভালোবাসি....
মৃত্যু অতিক্রম করে সমুখের অর্ধগতি....
তুমি অভিবাদন করো আমার স্বীকার....
আর চিঠির ভেতর শুকিয়ে যাওয়া পদ্ম হয়ে কাঁদো
অতঃপর ঘুমিয়ে যাও শুধু তুমি শুধু তুমি শুধু তুমি
সুদূরের মৃত্যু শ্বাস টানে
অথচ সুদূরই টিকে থাকে
আমি কোথায় যাই?
অথচ আমার শিরায় শিরায় নদীনালা জীবন্ত
অথচ আমার কাপড়ের ভেতর দিয়ে পেকে উঠছে গমের শীষ
অথচ আমার হাতের কুঞ্চিত রেখাগুলোতে ভেসে উঠছে ঘরবাড়ি
অথচ আমার পাশেই শিকলকড়াগুলো জড়ো হয়ে আছে
অথচ আমার সমুখে আর কোনো সমুখ নেই
অথচ আমার আড়ালে আর কোনো আড়াল নেই
যেনো তোমার দুটি হাত এক অদ্বিতীয় ভূমি
যেনো তোমার দুটি হাত চিরন্তন
হায়! দেহের ভেতর যে এমন দেশ
৬
দূরবর্তী সময়ের কাছে পৌঁছলাম
যেখানে গিয়েছি বলবো, এমন কোনো দেশ নেই
যখন সেখানে গিয়েছি নিরর্থক- কোনো দেশই ছিলো না যে, বলবো- আমি এতদূর এসে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি
তাতে কোনো সময়ই নাই যে, অতিক্রম করবো...
বহুদূর সময়ের কাছে পৌঁছলাম
যেখানে পানির সীমানার ভেতরের রূপ ছাড়া
আর কাউকে পাইনি
সে আমার কপালের মতো যা আমার আর আমার ব্যার্থ স্বপ্নের মধ্যেই হারিয়ে গেছে!
আমি শুনেছি আমার রক্ত, আমার খুন হওয়া
আমি শুনে শুনে মগ্ন হয়েছি তোমার ভেতর
আমি ক্রমাগত হেঁটেছি
তোমার সান্নিধ্যে আসার জন্য ক্রমাগত হাঁটছি আমি
আর বাতাস ভারি করে চড়–ইরা
আমার পিছু পিছু ছুটছিলো
আমাকে খেয়ে ক্ষুধা মিটাবে-- কারণ আমিই তো গমের শীষ
আমি বহন করেছি অর্ধ বাহু, প্রশ্ন করি, তাহলে বাকিটুকু কোথায়
সর্বশেষ শহীদ
বারবার চেষ্টা করছে
কেমন করে আমি বয়ে যাবো নদী আমার হাতের মুঠোয়
অথচ আমি বহন করি তরবারী
আমি দুটোই বহন করি
অথচ কোনোটাই ছুটে পড়ে না
আমিই সর্বশেষ শহীদ
আমি লিখে দিচ্ছি তুমিই সময়ের পবিত্রতম সত্তা আর দেশে দেশে হারানো সম্পদ।
আমি চাই আমার অবশিষ্ট পাঁজর
আমি চাই আমার অবশিষ্ট পাঁজর
আমি চাই আমার অবশিষ্ট পাঁজর
দেয়ালের কাছাকাছি
দেয়ালগুলোর কাছে, নগরীর দেয়ালগুলোর খুব কাছে
আমি নিজেকে বিরত রেখেছি স্বীকার করতে
কারণ আমি ওদেরকে দেখেছি ওরা আসবে। কিছুক্ষণ পরই ওরা আসবে
আদিম দেয়াল বেষ্টিত পুরনো দেয়ালগুলোর চারপাশে
ওরা ওদের দেয়াল নির্মাণ করবে
যারা ওখান থেকে চলে গেছে আমি তাদের দেখেছি। এরপর
এরপর ওরা নির্মাণ করেছে প্রাচীন দেয়ালঘেরা ওদের দেয়াল
দেয়ালগুলোর খুব কাছে আমি এঁটে দিয়েছি
নক্ষত্রের মালা তারকার সিঁড়ি
আর আমি তাদের খুঁজে বেড়াই যারা ছিলো
অথবা যারা থাকবে:
আমাদের কি শক্তি আছে এখানে থাকার ............এই সময়?
আমরা কি এখানে নির্মাণ করি আমাদের দেয়াল
ওখানে, প্রাচীন দেয়ালের পাশে
প্রশ্ন করি কবিতাকে, অতঃপর কবিতা ঢুবে যায় মেঘের ভেতর।
আকাশের পর আকাশ
আমার ফিরে আসার জন্য
আকাশের পর আছে আরেক আকাশ। কিন্তু
আমি এই মাটির ভূভাণ্ডার জ্বালিয়ে রেখেছি।
যে মাটি অদৃশ্য দেখার এক সময়কে জীবন্ত করেছে। আমি জানি
সময় বারবার আমার সাথে যুক্ত হবে না। আমি জানি আমি বেরিয়ে পড়বো আমার পতাকা থেকে পাখি হয়ে
যে আর বাগানের বৃক্ষের উপর নেমে আসবে না।
আমি দ্রুত বের হয়ে যাবো আমার সমস্ত চামড়ার আকার থেকে
আমি বের হয়ে যাবো আমার সমস্ত ভাষা থেকে
কিছু বাক্য শুধু প্রেম থেকে নেমে আসবে কবিতায়।
লরকার কবিতায়। যে অচিরেই আমার ঘুমঘরে বাস করবে।
এবং আমি যে মরুর চাঁদ দেখেছি সে দেখবে আমি অতিশয়
বাদাম বৃক্ষ থেকে সমুদ্রের ফেনার উপর সুতো হয়ে বেরিয়ে পড়ছি।
সে এক আগন্তুক ঘোড়ায় বহন করে সাতশ বছর অতিক্রম করে আসছে
এখানে, যেন সে পার হয়ে যায় ওখানে ।
আমি কিছুক্ষণ পরই সময়ের কুণ্ডলী থেকে সিরিয়া এবং স্পেন হতে নির্বাসিত হয়ে বের হয়ে যাবো।
এই পৃথিবী এই মাটি আমার সন্ধ্যা নয়। অথচ এই সন্ধ্যাই আমার সন্ধ্যা।
এই সন্ধ্যাই আমার যাবতীয় চাবিকাঠি। আমার সমূহ মিনার।
এই সাঁজই আমার পূর্ণ প্রদীপ। আর আমি শুধু আমার জন্য।
আমি দুই জান্নাতের মানুষ, আদম
দুইবার তাদের হারিয়েছি।
সুুতরাং আমাকে বিতাড়িত করো ধীরে ধীরে।
আমাকে হত্যা করো দ্রুত অতিদ্রুত
আমার জলপাইয়ের নিচে
লরকার সাথে।
এই মহান যাত্রায় আমি তোমাকে অনেক অনেক চাই
এই মহান যাত্রায় আমি তোমাকে অনেক অনেক চাই
অন্তত এই নগরটির তালা বন্ধ করে রাখবে
আমার জন্য তোমার দুহাতে এছাড়া আর কোনো হৃদয় নেই।
আমাকে বহনকারি কোনো পথ নেই।
এই পথে, এই বৃহৎ যাত্রায় আমি তোমাকে অনেক বেশি চাই।
তোমার বুকের প্রান্তে আমাদের দহলিজের ডালিম গাছটির জন্য আর কোনো দুধ নেই
দ্যাখো, খেজুর বৃক্ষ জীর্ণ হয়ে গেছে।
পাহাড়ের ওজন কমে গেছে
গোড়া থেকেই আমাদের সমস্ত পথ শুকিয়ে গেছে
মাটি শুকিয়ে গেছে
পৃথিবী তার পৃথিবীকে বিচ্ছেদ করেছে বলে পৃথিবী শীর্ণ হয়ে পড়েছে
শব্দরা দুর্বল হয়ে গেছে
রাতের সিঁড়িতে উত্তপ্ত গল্পরা নিশ্চুপ হয়ে গেছে
কেবল হৃদয় আমার বড় ভারাক্রান্ত
সুতরাং এইখানে আমার হৃদয়ে তাকে রেখে দাও।
সে বিলাপ করছে তোমার ঘরের চারপাশে।
সে কাঁদছে নান্দনিক সময়ের ভেতর।
এই পথ ছাড়া আমার আর কোনো দেশ নেই।
সুতরাং এই মহান যাত্রায় তোমাকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি
আমি সমস্ত শব্দের শেষ বিন্দু থেকে আত্মাকে বের করে আনবো,
আমি তোমাকে অনেক অনেক চাই। প্রজাপতিরা এই যাত্রায়
আমাদের আত্মাকে নিয়ে যাবে। এই পথে, এই যাত্রায় আমাদের মনে পড়ে হারিয়ে যাওয়া জামার বোতামটির কথা।
অথচ আমাদের সময়ের মুকুটকে আমরা ভুলে যাই।
আমরা স্মরণ করি মিশমিশ রসের ঘ্রাণের কথা। অথচ
আমরা বিয়ে রাতের নৃত্য ভুলে যাই।
সময়ের জন্য আমরা অনেক করুণা করি। আমরা তো এই পথেই
পাখিদের সাথে এক হয়েছিলাম। একটু করেই আমরা শেষ করে ফেলি
আর আমার পূর্ণতা হয় তোমার কাছে এই সোনার খঞ্জরে।
যা আমার খুন করা হৃদয়কে নাচিয়ে তোলে।
অতএব হে, তুমি আমাকে হত্যা করো ধীরে, ধীরে অনেক ধীরে।
যেনো আমি বলে ফেলতে পারি:
এই মহান যাত্রার আগে যেমন বলেছি তার চেয়েও আমি তোমাকে অনেক অনেক চাই।
কোনো কিছুই আর আমাকে ব্যথিত করবে না।
না বাতাস, না পানি.........না তোমার প্রভাতের সুগন্ধি, উদ্ভিদ।
তোমার সন্ধ্যায় আর কোনো পদ্ম নেই
এই যাত্রার পর যা আমাকে যন্ত্রণা দেবে........
আরেকবার
আরেকবার হত্যাকারীরা ঘুমাবে
আমার চামড়ার নিচে
আরেকবার
ফাঁসির মঞ্চ হবে
পতাকা।
অথবা পুড়ে যাওয়া বনানীর আকাশের
গমের শীষ।
আমার ললাট থেকে
বনের ছায়ারা তাদের দুহাতকে দূর করে দেয়
অতঃপর আমি ঢেকে যাই
দুপুরের ভেতর।
আরেকবার
সেনারা আসবে
আমার চামড়ার নিচে।
আরেকবার
দেশাত্মবোধক সংগীতের মূর্ছনায়
আমার দুঠোঁট ভরে যাবে।
আমার ললাট থেকে
বনের ছায়ারা দূর করে দেয় তাদের দুহাত
অতঃপর আমি ঢেকে যাই দুপুরের রোদের ভেতর।
আরেকবার
শহীদেরা পালিয়ে যাবে
কবিদের গান থেকে
আরেকবার
নেমে আসবো আমি ক্রুশ থেকে
আমরা পৃথিবী জানি না
আমরা আকাশ দেখিনি।
আমার ললাট থেকে
বনের ছায়ারা দূর করে দেয় তাদের দুহাত।
অতঃপর আমি ঢেকে পড়ি দুপুরের রোদের ভেতর।
আরেকবার
আমরা এক হয়েছি
আমি, হত্যাকারী এবং অনিবার্য মৃত্যু
আমার স্বাধীনতা বোঝা হয়ে ওঠে
আমার হৃদয়ের পর
তাদের নিষিদ্ধ হওয়ার পর
দেশের পর
মেঘের মধ্যে পানিরা নষ্ট হয়ে যায়
আর আমাদের ডাকা হয় জিহাদের জন্য
আমার ললাট থেকে
বনের ছায়ারা দূর করে দেয় তাদের দুহাত।
অতঃপর আমরা ঢেকে পড়ি দুপুরের ভেতর।
তারা দিনদুপুরে তাকে হত্যা করে
আমাকে ছেড়ে
এবং আরেকবার
তারা আমাকে গ্রেফতার করে
কারণ খুনীরা
লুকিয়ে থাকে
আমার চামড়ার নিচে।
Available tags : হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র, ভারত, ভাষা, সংস্কৃতি, মারাঠি, গুজরাটি, মালয়ালি, অসমীয়া, বিহারী, সিকিমি, কাশ্মীরি