হাইকোর্টে বিচারক নিয়োগ বিতর্ক
না সরকার না উচ্চ আদালত: ন্যায়বিচারে কেউ রাজি নয়
হাইকোর্ট বিভাগে নবনিযুক্ত সতেরো বিচারকের মধ্যে দুজনকে শপথ দেন নাই প্রধান বিচারপতি । ফলে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও ওই দুইজনের এখনো বেঞ্চে বসার অনুমোদন নাই। সর্বোচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে নির্বাহী ও বিচার বিভাগের এমনতরো টানাপোড়েন বাংলাদেশে এর আগে কখনো ঘটে নি। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত ওই দুইজনকে বিচারক হিশাবে অনুমোদনের অযোগ্য বলে স্থির করেছেন প্রধান বিচারপতি, কিন্তু এর পেছনে আদালত কোনো কারণ দেখান নাই। সেই ব্যাখ্যা, বরাবরের মতই সংবাদমাধ্যমের কাছে আদালত হাজির করে নাই। কিন্ত সংবাদমাধ্যম সূত্রেই জানা গেছে ওই দুইজন যথাক্রমে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ও খোদ সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গনে অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত – যা আইন ও নৈতিকতা অনুযায়ী তাদের বিচারকের দায়িত্ব গ্রহণে অযোগ্য করে। এটা শপথ না দেয়ার কারণ হতে পারে। কিন্তু বাদবাকী যে পনেরজনকে প্রধান বিচারপতি শপথ দিয়েছেন- সংবিধান ও আদালতের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী তাদের প্রায় কারোরই হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা নাই। লিখেছেন, মোহাম্মদ আরজু ও জহিরুল ইসলাম মুসা
পাশ কাটিয়ে যাওয়া নয়, সংবিধান এবার পাশে ঠেলে দিলো সরকার
বাংলাদেশে এযাবত হাইকোর্ট বিভাগে সরাসরি স্থায়ী বিচারক নিয়োগ দেয়া হয় নাই। স্থায়ী বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত সংবিধানের সুস্পষ্ট মানদণ্ড কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাশ কাটানোর জন্য এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ওই বিচারক নির্বাহী বিভাগকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সুবিধা দেন কি না- সেটা যাচাই করার জন্যই সম্ভবত সরকারগুলো অতিরিক্ত বিচারক হিশাবে অস্থায়ী নিয়োগ দেয়া পছন্দ করেছে সবসময়। সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে ‘অতিরিক্ত বিচারক’ নিয়োগ দেয়া হয়। অনুচ্ছেদটি এরকম: ‘ . . . রাষ্ট্রপতির নিকট সুপ্রীম কোর্টের কোনো বিভাগের বিচারক-সংখ্যা সাময়িকভাবে বৃদ্ধি করা উচিত বলিয়া সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি যথাযথ যোগ্যতা সম্পন্ন এক বা একাধিক ব্যক্তিকে অনধিক দুই বৎসরের জন্য অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত করিতে পারিবেন …’, দেখা যাচ্ছে এই অনুচ্ছেদে ‘যথাযথ যোগ্যতা’র কোনো বিবরণ বা ব্যাখ্যা দেয়া হয় নাই।
তবে পঞ্চম সংশোধনীর পরে অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের পচানব্বইতম অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘স্থায়ী বিচারক’ নিয়োগ সংক্রান্ত যোগ্যতাকে মানদণ্ড হিশাবে মেনে এসেছে বিগত সরকারগুলো। ফলে এটা এখন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রেওয়াজে হিশাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পচানব্বই অনুচ্ছেদের কথা হচ্ছে- হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারক হিশাবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা হলো; সুপ্রীম কোর্টে কমপক্ষে দশ বছর অ্যাডভোকেট হিশাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা অথবা রাষ্ট্রের যে কোনো বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে দশ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাছাড়া বিচারক হিশাবে নিয়োগের শর্ত হিশাবে সংসদের অন্যান্য আইনে যেসব যোগ্যতা নির্ধারণ করা হবে সেসব যোগ্যতা থাকতে হবে। অথচ এবার নিয়োগ দেয়া এই সতের জনের মধ্যে চৌদ্দ জনেরই এই সাংবিধানিক যোগ্যতা নাই। নিম্ন আদালত থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত তিন জন বিচারক-ই কেবল ন্যূনতম সাংবিধানিক যোগ্যতা পূরণ করে নিয়োগ পেয়েছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাদের চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য প্রায় দুইশত বিচারক এখন নিম্ন আদালতে কর্মরত।
সুপ্রীম কোর্টের নীতিমালাও অগ্রাহ্য করেছেন প্রধান বিচারপতি
সংবিধানের পচানব্বই অনুচ্ছেদ অবলম্বনে সুপ্রীম কোর্টের দুইবিভাগে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা গতবছরই স্থির করে আপীল বিভাগ। এর আগে বিগত জোট সরকার কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত দশজন বিচারককে নির্ধারিত দুইবছর মেয়াদ শেষে স্থায়ী না করে কিম্বা নিয়োগ নবায়ন না করে বাদ দিলে তারা মামলা করেন। ওই মামলার রায়ের অংশ হিশাবে ২০০৮ সালে পচানব্বই অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা সহ সুপ্রীম কোর্ট বিষয়ে সংবিধানের সব বিধানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নীতিমালাটি ঘোষণা করে হাইকোর্ট বিভাগ। গতবছর হাইকোর্ট বিভাগের ওই রায়টি এবং রায়ের অংশ হিশাবে বারো দফাওয়ালা ওই নীতিমালাটি সামান্য সংশোধনীসহ বহাল রাখে আপীল বিভাগ। উল্লেখ্য, বর্তমান প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম তখন আপীল বিভাগের সেই বেঞ্চের একজন বিচারক ছিলেন। পচানব্বই অনুচ্ছেদ প্রসঙ্গে বিস্তারিত বিধিবদ্ধ আইনের অনুপস্থিতিতে আপীল বিভাগের বিচারিক নজির হিশাবে ওই রায় ও নীতিমালা প্রয়োগ করা আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক। অথচ প্রধান বিচারপতি সেটি অগ্রাহ্য করেছেন।
নীতিমালায় সুপ্রীম কোর্টে অ্যাডভোকেট হিশাবে অথবা বিচারিক পদে কর্মরত হিশাবে দশবছরের অভিজ্ঞতা কেমন হবে সেই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘কাগজে-কলমে আইনজীবী হিসেবে ১০ বছর নাম লিখিয়ে রাখলেই ‘সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট’ হওয়া যাবে না। তিনি দশবছর কী করেছেন তা দেখতে হবে।’ অর্থাৎ কমপক্ষে টানা দশবছর নিয়মিতভাবে আইন পেশায় নিয়োজিত থাকলেই শুধু তা ‘দশবছরের অভিজ্ঞতা’ বলে গণ্য হবে। তাছাড়া প্রার্থীর অবশ্যই চমৎকার শিক্ষাগত যোগ্যতা, সুপ্রীম কোর্টে অব্যাহতভাবে মামলা পরিচালনার রেকর্ড থাকতে হবে। এমনকি আপিল বিভাগেরও আইনজীবী হতে হবে। এই মানদণ্ডে মাপলে পরে বলতে হয় যেসব আইনজীবী এবার বিচারক হিশাবে নিয়োগ পেলেন তাদের কারোরই সুপ্রীম কোর্টে দশবছর আইন পেশায় নিয়োজিত থাকার অভিজ্ঞতা নাই। নিম্ন আদালত থেকে নিয়োগের বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে; ‘জেলা জজের ক্ষেত্রে দেখতে হবে তিনি কোন নির্বাহী পদে সময় কাটিয়েছেন কিনা।’ সেক্ষেত্রে এবার জেলা জজ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত তিন বিচারকের নিয়োগও নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক। জেলা জজদের নির্বাহী বিভাগে প্রেষণে থাকা কিম্বা না থাকার কোনো তথ্য ছাড়াই আদালত তাদের নিয়োগ অনুমোদন করেছেন।
|
সংখ্যাতথ্য |
|
১৭ জন অতিরিক্ত বিচারপতির এই অস্থায়ী নিয়োগ হাইকোর্ট বিভাগে একসাথে সর্বোচ্চ সংখ্যক অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার নজির তৈরি করেছে। এর আগে সর্বোচ্চ ১০ জনকে একসাথে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। |
|
১৪ জন নিয়োগ পেয়েছেন আইনজীবীদের মধ্য থেকে, একজনও নারী আইনজীবী নাই। ১ জন সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার ছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি নজিরবিহীনভাবে সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার হিশাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। |
|
৩ জন নিয়োগ পেয়েছেন জেলা জজদের মধ্য থেকে। এর আগে প্রতি ১০ অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগে ৩ জন নিয়োগ দেয়া হতো নিম্ন আদালত থেকে। এবার সেই প্রাতিষ্ঠানিক রেওয়াজ-এ ছেদ পড়লো। ১৭ জন এ ১ জন। তিনজনের মধ্যে একজন নারী। যাকে দিয়ে আবার নারী কোটা পূরণ করা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। মানে চুড়ান্ত বিচারে ১৭ জনের মধ্যে নিম্ন আদালত থেকে নেয়া হয়েছে ২ জন। |
|
৩২ জন বিচারক এখন হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিশাবে নিযুক্ত। প্রধান বিচারপতি যেহেতু সর্বশেষ নিযুক্তদের মধ্যে দুজনকে শপথ দেন নি, কাজেই এখন কর্মরত অতিরিক্ত বিচারকের সংখ্যা ৩০ জন। |
|
৯৩ হচ্ছে বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগে নিযুক্ত বিচারকের সর্বমোট সংখ্যা। |
সর্বনিম্ন আদালতের বিচারকের চেয়ে যারপরনাই কম যোগ্যতা নিয়ে উচ্চ আদালতে
সতেরো জনের পনেরো জনই তাদের জীবন বৃত্তান্তে শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গতথ্য দেন নাই। সুপ্রীম কোর্ট বার কাউন্সিল তাদের অনুসন্ধানে দেখিয়েছে যে, হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা যারপরনাই ধরনের দুর্বল। তাদের নয়জন এলএলবিতে তৃতীয় শ্রেণী পেয়েছেন। বাকীরাও শিক্ষাজীবনে এক বা একাধিক পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণী পেয়েছেন। অনেকেরই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পার হতে হয়েছে কয়েকবার চেষ্টা করে। তাদের অনেকেই আইনে স্নাতক করেছেন দুই বছরের কোর্সে, চার বছরের সম্মান কোর্স না। কেউই এলএলবি বা এলএলএম-এ প্রথম শ্রেণী পান নাই। সুপ্রীম কোর্টের বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালায় শিক্ষাগত যোগ্যতা বিষয়ে বলা হয়েছে ‘চমৎকার’ শিক্ষাগত যোগ্যতা আবশ্যক । নিয়োগকর্তা সরকার এবং শপথদাতা প্রধান বিচারপতি তাহলে এমনতরো শিক্ষাগত যোগত্যা কে ‘চমৎকার’ বিবেচনা করেন । এবার তো ‘চমৎকার’ শব্দের ব্যকরণ নিয়ে বাংলা একাডেমী বিপদে পড়ে যাবে!
অথচ শিক্ষা জীবনে যে কোনো একটি স্তরে তৃতীয় শ্রেনী পেলে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন আদালতের সর্বনিম্ন বিচারকের পদে- জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কিম্বা সহকারি জজ হিশাবে নিয়োগের ক্ষেত্রে তা অযোগ্যতা হিশাবে বিবেচিত। অর্থাত সর্বনিম্ম আদালতের দক্ষতা নিশ্চিত করতে এতো গুরুত্ব দেয়াকে বিচার বিভাগ দরকার মনে করে। উল্টোদিকে, এমন দুর্বল শিক্ষাগত যোগ্যতার বিচারক নিয়ে উচ্চ আদালত চালাতে উদ্যোগী হয় সরকার। সুপ্রীম কোর্ট থেকে ন্যায়বিচার দিতে এবং নিম্ন আদালতের সাথে উচ্চ আদালতের সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে এমন নিয়োগ বাতিল করা ছাড়া আর কি উপায় থাকতে পারে?
সুশীল সমাজ ও বিরোধীরা বিচার বিভাগের ক্ষেত্রেও সরকারকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে ব্যর্থ
অন্যান্য সব জাতীয় ইস্যুর মতো বিচার বিভাগের ইস্যুতেও সরকার-বিরোধীদের রাজনৈতিক অবস্থা খুব সুবিধার না। আর ‘সুশীল সমাজ’ এখনো এই নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় নাই। নিয়োগের পরপরই দৈনিক আমার দেশ দুইজন বিচারক- রুহুল কুদ্দুস বাবু এবং খসরুজ্জামানের বিচারক হিশাবে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিস্তর অযোগ্যতার বিষয় তুলে আনে সংবাদে। তারপর পত্রিকাটি এ বিষয়ে লাগাতার সংবাদ প্রকাশ করতে শুরু করে। সংবাদ একসময় প্রচারণার আকারে আসতে শুরু করে। সুপ্রীম কোর্ট বার কাউন্সিলও ওই দুইজন বিচারককে শপথ না দেয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির ওপর চাপ দিতে থাকে। ওই দুইজনের একজন খসরুজ্জামান এর আগেও একবার অতিরিক্ত বিচারক হিশাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন, পরে জোট সরকারের আমলে তার নিয়োগ স্থায়ী করা হয় নাই। খসরুজ্জামান সুপ্রীম কোর্টে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত- এমন একটি ছবি, আর দ্বিতীয়জন- রুহুল কুদ্দুস বাবু খুনের মামলা, ফৌজদারী মামলার আসামী- এই দুইয়ে ভর করে প্রধানত আমার দেশ সহ বার কাউন্সিলে সরকার-বিরোধী পক্ষ জোরালো অবস্থান নেয়।
আদালত ও রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রেক্ষিত থেকে আলোচনায় প্রায়শ গরহাজির থাকে। অন্য আরেকটি দিক থেকে মিজানুর রহমান খান, এপ্রিলের সতেরো তারিখে প্রথম আলো’তে তার অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন যে, শুধু ওই দুইজনই না, বাদবাকী সবার নিয়োগেই সংবিধান ও নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে সরকার। প্রতিবেদনে তিনি বিস্তারিত তথ্য উপস্থান করেছেন। কিন্তু অবশেষে আঠারো তারিখে প্রধান বিচারপতি ওই দুজনকে বাদ দিয়ে বাকীদের ঠিকই শপথ দিলেন।
সংবিধান, ন্যূনতম প্রাতিষ্ঠানিক রেওয়াজ ও আদালতের রায় উপেক্ষা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলো যেই সরকার; সেই সরকারের আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ দুই বিচারপতিকে শপথ না দেওয়াটা অন্যায় বলে মন্তব্য করেন। আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দুই বিচারপতিকে শপথ না পড়িয়ে প্রধান বিচারপতি তার সাংবিধানিক শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে দাবি করেন। উল্টোদিকে, সরকার বিরোধী আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সুপ্রীম কোর্ট বার কাউন্সিল বিচার বিভাগের প্রতি সরকারের এমন নেতিবাচক ভূমিকার পরেও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে পারে নাই।
রাজনৈতিক দল হিশাবে আওয়ামী লীগের দুরবস্থা চরমে পৌছেছে
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কোনো কাজই রাজনীতির বাইরে না। দুনিয়াজুড়ে সব দেশেই নির্বাহী ক্ষমতায় থাকা দলটি নিজেদের রাজনৈতিক বিবেচনা থেকেই রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভাগের সাথে কাজ করে, বিচার বিভাগও এর বাইরে না। যেমন বেশিরভাগ দেশেই নির্বাহী বিভাগ সরাসরি বিচারকদের নিয়োগ দেয়, তবে অবশ্যই বিচারবিভাগের সাথে পরামর্শ করে তারা কাজ করে। কোনো কোনো দেশে সংসদ কর্তৃক নিয়োগ দেওয়ারও বিধান আছে। যার মানে হলো রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই বিচারক নিয়োগ দেন। অনেক দেশে সরাসরি নাগরকিদের ভোটে বিচারকদের নির্বাচিত করা হয়, যেমন জাপানে। মানে দুনিয়ার সব দেশেই নাগরিকদের সমর্থন নিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী দলগুলো নির্বাহী বিভাগ আকারে বিচার বিভাগের সাথে কাজ করে। তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের এই অংশগ্রহণ হয় অবশ্যই রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত একটি মানদণ্ডের মধ্যে।
বাংলাদেশে নিয়োগের পদ্ধতি হচ্ছে বিচার বিভাগের সাথে পরামর্শ করে নিয়োগ। সরকার তার পক্ষ থেকে মনোনীতদের তালিকা তৈরি করে তারপর প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ করবেন যে তালিকাভূক্তদের নিয়োগ দেয়া যায় কি না। কিন্তু এই মনোনয়ন দেয়ার যোগ্যতা তো সংবিধান ও আদালতের নীতিমালায় স্থির করা আছে। দুনিয়ার আরসব রাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলও নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী মনোনায়ন দিতে পারে, তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সমস্যা হয় তখন-ই যখন মনোনীতদের সবাই-ই রাষ্ট্র নির্ধারিত যোগ্যতার ন্যূনতম মানদণ্ডে অযোগ্য বিবেচিত হন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ হিশাবে বাংলাদেশের একটি ক্ষমতাসীন দল এখনো এতটুকু সামর্থ্য অর্জন করতে পারে নাই; যাতে করে ন্যূনতম যোগ্যতা সম্পন্ন একজনমাত্র প্রার্থীও বাছাই করা যায়। নিজেদের এই রাজনৈতিক দুরবস্থা কি আওয়ামী লীগ এবং বাকীরা টের পাচ্ছেন এখনো? গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের বিকাশে এটা শুধু বাধা নয় বরং এখন সেটা ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে যাবার স্পষ্ট আলামত। রাজনৈতিক দলগুলো নাগরিকদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির প্রাথমিক সম্ভাবনাটুকু তৈরি করার সক্ষমতা দেখাতে পারছে না।
Available tags : কলকাতা ব্যাশিং, হীনমন্যতা,ইতিহাস, মানসিক, বুর্জোয়া, জমি, জমিদারতন্ত্র, ভাষা, প্রজ্ঞা, হিন্দুত্ববাদ, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, মনীষা,
আদালত আইন
খুব ভালো লিখা।এই সমস্যা মিটানোর জন্য এখন সবকিছুকে শুধু আওয়ামী লিগের দায় হিসেবে দেখলে হবে না।মনে রাখতে হবে বিএনপিও এর বাইরে কিছু না।কিন্ত্তু এই শাষক শ্রেনীকে রাজনৈতিক চাপে রেখে আদালতকে আরো কা্রযকরী করার কৌশল নিয়ে আরো আলোচনা দরকার।